বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

বই পরিচিতি – ঐতিহাসিক সোনারগাঁ

পোস্ট হয়েছে: জানুয়ারি ১৫, ২০১৮ 

রচনা : এ কে এম মুজ্জাম্মিল হক
সম্পাদনা : রবীন্দ্র গোপ
প্রকাশক : বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়
সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ
প্রচ্ছদ : রবীন্দ্র গোপ ও এ কে এম আজাদ সরকার
আলোকচিত্র : মোঃ শফিকুর রহমান
প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি ২০১৬
মুদ্রণ : জি জি অফসেট প্রেস, ৩১/এ সৈয়দ আওলাদ হোসেন লেন
নয়াবাজার, ঢাকা-১১০০
মূল্য : ৫০০ টাকা।
স্বাধীন সুলতানী বাংলার রাজধানী ‘সোনারগাঁ’ আজ রূপকথার নগরী হলেও এর ঐতিহাসিক বাস্তবতা চিরন্তন ও অবিস্মরণীয় । এর সাথে জড়িয়ে থাকা প্রতিটি ঘটনা সত্য। কথা-কাহিনী আর কিংবদন্তির ভীর সরিয়ে মৌলিক ইতিহাসের ভেতরে প্রবেশ করলেই চকচকে স্বর্ণালি সত্যের সুবাস পাওয়া যায় যা জাতি হিসেবে আমাদের কাছে অতীব গর্বের। ঐতিহাসিক ভাবে বাংলাদেশী বাঙালি জাতি চিরদিনই স্বাধীনচেতা জাতি হিসেবে স্বগৌরবে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে চেয়েছে এবং যতবার আক্রমণ এসেছে ততবার প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। সেইসব স্বর্ণালি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে প্রত্নতাত্ত্বিক নগরী সোনারগাঁ। বাংলার স্বাধীন সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ কিংবা স্বাধীনচেতা বার ভূঁইয়া নেতা বাঙালি বীর ঈশা খাঁ আমাদের ইতিহাসের অবিস্মরণীয় ও অনুপ্রেরণীয় দুই মহাবীর। সোনারগাঁ আমাদের জাতীয় ঐশ্বর্য ও গৌরবের প্রতীক। জাতি হিসেবে আমরা একদা খুব সমৃদ্ধশালী ছিলাম। ভুবনমোহিনী সুবিখ্যাত মসলিনের স্মৃতিও বহন করছে এই সোনারগাঁ। আর ছিল নৌশিল্প। বিশাল বিশাল কাঠের জাহাজ তৈরি হতো বাংলাদেশে। সোনারগাঁয়ের লোকশিল্প যাদুঘরে রয়েছে মসলিনের নিদর্শন ও নানা প্রকার নৌকা ও জাহাজের মডেল। আর রয়েছে সে আমলের শীতল পাটি, জামদানি সহ নানা দেশজ ও লোকজ নিদর্শন। গর্বের কথা যে সম্প্রতি আমাদের শীতল পাটি ও জামদানি ‘ওয়াল্ড হেরিটেজ’ বা বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
আমাদের ইতিহাসের সোনালি দিবসগুলোতে ইরান, তুরস্ক, মিশর ও চীন দেশের সাথে ছিল প্রাচীন বাংলাদেশের কূটনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক। ইবনে বতুতা, হিউয়েন সাং, বার্নিয়ার প্রমুখ দূত সোনারগাঁয়ে এসেছিলেন। ইরানের কবি হাফিজকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সোনারগাঁয়ে আসার জন্য। আহ্বান জানিয়েছিলেন সুলতান গিয়াসউদ্দীন আযম শাহ। হাফিজ আসতে পারেন নি বটে, কিন্তু সুলতানকে সম্মান জানিয়ে পত্র পাঠিয়েছিলেন দূত মারফত। আর মিলিয়ে দিয়েছিলেন সুলতানের অসমাপ্ত কবিতা। লিখেছিলেন বাংলাদেশ সম্পর্কেও।
এই সোনারগাঁয়ে মুসলিম শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলাম প্রচার করতে আসেন নূর কুতুবুল আলম, শায়খ আনোয়ার, শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা, ইয়াহিয়া মানেরী, ইব্রাহিম দানেশমান্দ, পীর বদরউদ্দিন প্রমুখ পীর আওলিয়া সাধকপুরুষগণ। শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা (র.) এখানে গড়ে তোলেন জামেয়া বা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়। শাসক শের শাহ নির্মাণ করেন এখানে গ্রান্ড ট্রাংক রোড। সোনারগাঁয়ের নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানা কাহিনী। সারি সারি সোনারু গাছে ঘেরা ছিল এই সোনারগাঁ। সেজন্য এর নাম হয়েছে সুবর্ণ গ্রাম বা সোনারগাঁ। কেউ বলেন, ঈশা খাঁর বীর পত্নী সোনামনীর নাম অনুসারে এর নাম হয়েছে সোনারগাঁ। যিনি ঈশা খাঁর মৃত্যুর পরও বার ভূঁইয়াদের প্রধান হিসেবে মোঘল আক্রমণকে প্রতিহত করেছিলেন। নারায়ণগঞ্জের সোনাকু-া দুর্গে যুদ্ধে জীবন দিয়েছেন, কিন্তু বেঁচে থাকতে বাংলার স্বাধীনতা বিলুপ্ত হতে দেন নি।
সোনারগাঁয়ের নানা কাহিনী ও ইতিহাস সহ ১১৯টি ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক. সাংস্কৃতিক ও লোকজ ঐতিহ্যের নানা নিদর্শনের রঙিন ছবি ও বিবরণ যুক্ত ১৫৮ পৃষ্ঠার উক্ত আলোচ্য গ্রন্থটি একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থ। ১২০ গ্রাম গ্লসি আর্র্ট পেপারে মুদ্রিত উক্ত গ্রন্থটি কেবল ওজনেই ভারী নয়, জ্ঞানগর্ভ তথ্যেও বেশ ওজনদার। এ কেবল ইতিহাসের কোন গ্রন্থই নয় পর্যটকদের গাইড বইও বটে। জ্ঞানপিপাসু পুস্তকপ্রেমিক মানুষ উক্ত বইটি সংগ্রহ না করে পারবেন না বলে আমাদের বিশ্বাস।
□ আমিন আল্ আসাদ