প্রতিরোধ ফ্রন্ট নিশ্চিতভাবে বিজয়ী হবে: আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী
পোস্ট হয়েছে: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী তার দেশের বিরুদ্ধে ইরাকের সাবেক সাদ্দাম সরকারের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ শুরুর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি সম্প্রতি ওই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী যোদ্ধাদের এক সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন।
১৯৮০ সালে শুরু হওয়া ওই যুদ্ধ সম্পর্কে ইসলামি বিপ্লবের নেতা বলেন: সেদিন ইরান সীমান্তে যে হামলা হয়েছিল তা নিছক ইরাকের তৎকালীন শাসক সাদ্দাম ও তার নেতৃত্বাধীন বাথ পার্টির পরিকল্পনায় চালানো হয়নি। তৎকালীন আধিপত্যকামী শক্তিগুলো অর্থাৎ আমেরিকা, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তাদের দোসররা ওই হামলায় জড়িত ছিল। এসব শক্তির প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্বার্থে সাদ্দামকে সহযোগিতা দিয়েছিল। পার্সটুডের এই নিবন্ধে আমরা সর্বোচ্চ নেতার ভাষণের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরব।
ইসলামি বিপ্লব; বিশ্বের ওপর চেপে বসা বাতিল ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রতিবাদ
তিনি ইরানের ইসলামি বিপ্লবের সঙ্গে বৃহৎ শক্তিগুলোর শত্রুতার কারণ হিসেবে তাদের পক্ষে এই বিপ্লবের বার্তা ও অভিনব চিন্তাধারা মেনে নিতে না পারার কথা উল্লেখ করেন। সর্বোচ্চ নেতা বলেন:
তাদের শত্রুতা এই কারণে ছিল যে, ইসলামি বিপ্লব বিশ্বের ওপর চাপিয়ে দেয়া বাতিল ব্যবস্থা অর্থাৎ বিশ্বকে আধিপত্যকামী ও আধিপত্য মেনে নেয়া এই দুই ভাগে বিভক্ত করার ব্যবস্থা মেনে নিতে চায়নি। মুষ্টিমেয় কিছু দাম্ভিক শক্তি গোটা বিশ্বের ওপর তাদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেবে- এটা ইসলামি বিপ্লব মেনে নেয়নি বলেই এই বিদ্বেষ।
বিশ্ববাসীর জন্য ইসলামি বিপ্লবের অভিনব বার্তা
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, ইরানের ইসলামি বিপ্লবের চিন্তাধারার প্রতি বিশ্বের দেশে দেশে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি এবং বিশ্বব্যাপী এই বিপ্লব ছড়িয়ে পড়ার যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় তা মেনে নেয়া আধিপত্যবাদী শক্তিগুলোর পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব ছিল না। তিনি আরো বলেন, তারা ইরানে হামলা চালানোর সুযোগ খুঁজছিল। এমন সময় লোভী, কুচক্রী, জালিম ও অবিবেচক সাদ্দাম তাদের জন্য সেই কাঙ্ক্ষিত সুযোগ এনে দেয় এবং তাদের উস্কানিতে ইরানে হামলা চালায়।
আধিপত্যবাদী ব্যবস্থা মেনে নেয়নি ইসলামি বিপ্লব
সারা বিশ্বের সঙ্গেই তেহরান শত্রুতা পোষণ করে বলে ইরানের অভ্যন্তরে কিছু মানুষ যেকথা বলার চেষ্টা করে তার জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন: তারা যদি বিশ্বের সঙ্গে ইরানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি করে থাকে তাহলে তা অবাস্তব। কারণ, ইরান এ ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করেনি বরং যেসব দেশের সঙ্গে ইরানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে সেসব দেশে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা বসবাস করে। তবে তারা যদি আধিপত্যবাদী শক্তিগুলোর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরোধিতার কথা বলে থাকে তাহলে তার সত্যতা রয়েছে। আমরা বিপ্লবের প্রথম দিন যেমন আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা আধিপত্যবাদী শক্তির ঘোর বিরোধী ছিলাম এখনও তেমনই আছি এবং একথা বুক ফুলিয়ে বলতে আমাদের কোনা বাধা নেই।
ইসলামি বিপ্লবের আধ্যাত্মিক আকর্ষণ
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ইসলামি বিপ্লবের রাজনৈতিক আকর্ষণ অর্থাৎ আধিপত্যকামী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে এই বিপ্লবের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি এই বিপ্লবের আধ্যাত্মিক আকর্ষণের কথাও তুলে ধরেন।
তিনি ফিলিস্তিন ও লেবাননের সর্বসাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরে চলমান যুদ্ধকে ইরানের পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেন এবং এ যুদ্ধকে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের উৎকৃষ্ট উদাহরণ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন:
ফিলিস্তিন নামক একটি মুসলিম দেশ নিকৃষ্টতম কাফিরদের হাতে দখল হয়ে আছে। এ অবস্থায় শরিয়তের বিধান হচ্ছে, মুসলমানরা ফিলিস্তিন ও আল-আকসা মসজিদ মুক্ত করে এগুলোর প্রকৃত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা বলেন: লেবাননের হিজবুল্লাহ শুধুমাত্র গাজাবাসীকে সমর্থন করতে গিয়ে নিজের ওপর বিপদ ডেকে এনেছে। কাজেই হিজবুল্লাহ যে পথ বেছে নিয়েছে সেটি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের পথ।
তিনি ফিলিস্তিন ও লেবাননের চলমান যুদ্ধকে আরো একটি দিক দিয়ে পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন: চলমান যুদ্ধেও কাফির ও নাপাক শক্তির কাছে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে আর ইহুদিবাদী শত্রুকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার জন্য আমেরিকা এক পায়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কাজেই আমেরিকা এখন যে দাবি করছে যে, ইহুদিবাদীদের গণহত্যা ও বর্বরতা সম্পর্কে কোনো তথ্য তার জানা নেই এবং সে গাজা যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করছে না, সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যাচার।
ইহুদিবাদী শত্রু র হাতে অর্থ, অস্ত্র ও প্রচারযন্ত্র রয়েছে বলে উল্লেখ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন:
মুমিন ও মুজাহিদদের কাছে যে অস্ত্র ও গোলাবারুদ রয়েছে তা প্রতিপক্ষের তুলনায় অতি সামান্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ যুদ্ধে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী অর্থাৎ ফিলস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠনগুলো ও লেবাননের হিজবুল্লাহ বিজয়ী হবে।
অপরাধী ইহুদিবাদী ইসরাইলের সম্ভাব্য পরাজয়ের কারণও ব্যাখ্যা করেন ইমাম খামেনেয়ী। তিনি বলেন, আবাসিক বাড়ি, স্কুল ও কলেজে হামলা চালিয়ে নারী ও শিশুসহ বেসামরিক নাগরিকদের গণহারে হত্যা করার কারণেই তাদের পরাজয় হবে।তিনি বলেন, ইহুদিবাদী ইসরাইল যদি গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর ও লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের পরাজিত করতে পারত তাহলে তাদেরকে এরকম জঘন্য যুদ্ধাপরাধ করতে হতো না।#
পার্সটুডে/