নারী ও বিশ্বায়ন
পোস্ট হয়েছে: মে ২১, ২০১৭
ড. মাহদী গোলজান
বিশ্বায়নের প্রক্রিয়ায় নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী যে প্রচার ও প্রসার চলছে তা নারীকে তার স্বকীয় সত্তা থেকে সামাজিক সত্তায় পরিণত করেছে। তবে এ পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় প্রকৃতপক্ষে একজন নারী বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিণত হচ্ছে যৌন-সর্বস্ব সত্তা হিসেবে। নারীর মর্যাদাপূর্ণ মানবীয় সত্তা কি বিশ্বায়নের ফসল? বিশ্বায়নের এই প্রক্রিয়া কি নারীকে এ মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে? বিশ্বায়নের ধারা নারীকে সমাজে মানুষ হিসেবে গণ্য করে নাকি পণ্য হিসেবে? বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় গ্লোবাল সোসাইটিতে নারীর প্রতি মর্যাদাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির উপস্থিতি আমরা কতটুকু দেখি?
বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় নারীকে sex-oriented পণ্য হিসেবে গণ্য করে নারীর সম্মানকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে নারীর সামাজিক অবস্থা প্রতিটি ক্ষেত্রে দিনকে দিন এ অবস্থার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি ঘটছে। আজ আধুনিকতা এবং বিশ্বায়নের স্রোতে ‘ওমেন অফ দি ইয়ার’ জাতীয় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এখানে সেরা প্রতিযোগী বাছাই করা হয় কিভাবে? বিশ্বায়নের এ ধারায় কোন নারীকে বাছাই করার ক্ষেত্রে কোন প্রপঞ্চকে বা কোন মানদ-কে গুরুত্ব দেওয়া হয়? তার পরিবার, তার সম্ভ্রম, তার সত্তা বা পরিচিতি, নাকি তার শারীরিক ইতিবৃত্ত?
‘বছরের শ্রেষ্ঠ নারী’ নির্বাচনের ক্ষেত্রে যতগুলো প্যারামিটার (parameter) ব্যবহার করা হয় সেগুলোতে নারীর ব্যক্তিসত্তার চেয়ে প্রাধান্য পায় তার দৈহিক গঠন। বিশ্বায়নের এই প্রেক্ষিতে এসে নারী পরিণত হয় fluid identity-তে (পরিবর্তনশীল সত্তা- one kind of concept- যেন নারীকে যেভাবে চিহ্নিত করতে চাওয়া হবে সেভাবেই চিহ্নিত হবে)। নারী তার সত্তাকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য বা তার উন্নয়নের ক্ষেত্রে এখান থেকে প্রেরণা নিয়ে চালিত হবে।
সভ্যতার উত্থান-পতন মূলত তিনটি উপাদানের নিরিখে বিবেচনা করা হয়। নিজস্ব সত্তা বা পরিচয় হারিয়ে ফেলা সভ্যতার পতনের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান উপাদান। সভ্যতার পতন ঘটানো যায় কোন সমাজের নিজের শিকড়কে ভুলিয়ে দিয়ে এবং তা থেকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে। বর্তমান প্রজন্ম নিজেদের পরিচয়, ইতিহাস না জেনেই বিশ্বায়নের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে। তারা কখনও নিজেদের মৌল সত্তা এবং ইতিহাসকে জানার জন্য তাদের চিন্তা-ভাবনাকে পুনঃমূল্যায়ন করতে সক্ষম হচ্ছে না।
বিশ্বায়নের প্রভাবে প্রথম যে জনগোষ্ঠী আক্রান্ত হয়েছে তারা হলো নারী সমাজ। নারীরা তাদের নিজস্ব সত্তা ও দায়িত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলশ্রুতিতে নারী তার স্বভাবসুলভ আচরণের বিরুদ্ধে চিন্তা করতে বাধ্য হয়েছে। আর এ কারণে মানবসভ্যতা মোটা দাগে তিনটি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে :
১. নারীর অমর্যাদাপূর্ণ পরিচয়
২. নারীর পরিচয় বিস্মৃতি
৩. নারীর পরিচয় সংকট।
নারীরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছে চলনে, বলনে পুরামাত্রায় পুরুষের মতো হওয়ার। এক্ষেত্রে কিছু প্রশ্নের উদ্ভব হচ্ছে : নারী এবং পুরুষের ফ্লুইড আইডেনটিটি তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে? তাহলে নারী অথবা পুরুষের আসল পরিচয় কিভাবে নির্ধারিত হবে? এই দৃষ্টিভঙ্গির বা ধারণার মূল্যায়ন হবে কিভাবে?
এটা সেই একই ধারা, যা বর্হিবিশ্ব বা পাশ্চাত্য নারীর পরিচয়কে নির্ধারণ করে। Fluid-identity অনুযায়ী নারীকে তার পরিচয় হিসেবে যা দেওয়া হবে তা সে গ্রহণ করতে বাধ্য হবে। অন্যদিকে অহরহ এ পরিচয়ের পরিবর্তনও ঘটতে পারে। যদি আমরা আমাদের আসল পরিচয়ে ফিরে আসি এবং সেই সত্তাকে জিজ্ঞেস করি নারীর বর্তমান সত্তাকে সংজ্ঞায়িত করার ব্যাপারে; তবেই আমরা নিজেদের পরিচয়কে সুরক্ষিত করতে পারব। নিজেদের পরিচয় নিরূপণ করার জন্য অবশ্যই আমাদের নিজেদের ধর্ম, আচার-আচরণ, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের কাছে ফিরে যেতে হবে।
ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের সর্বোত্তম সংজ্ঞা বলে, নারীকে কখনও যৌনসর্বস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করা উচিত নয়। সে একজন নারী এবং তার মনোদৈহিক গঠনের জন্য তাকে বিশেষ দৃষ্টিতে দেখা হয়। কিন্তু এই দৃষ্টিভঙ্গি যথাযথ নয়। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের দৃষ্টিকোণ থেকে (যেহেতু ইসলামে এ ব্যাপারে জোর দেওয়া আছে), কোরআন, ইতিহাস, জাতীয়তা সবদিক থেকে বিবেচনা করলে নারীর যে পরিচয় পাওয়া যায় তা হলো সে একটি মানবসত্তা। জন্ম থেকেই নারী ও পুরুষের মাঝে সত্তাগতভাবে কোন পার্থক্য নেই। আসল কথা হলো, তারা উভয়েই মানুষ। সৃষ্টিকর্তার তৈরি একটি মানবসত্তা হলো নারী। সে তার বিশেষ অধিকারের পাশাপাশি সত্তাগত ও জ্ঞানার্জনের অধিকারও পাবে।
আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের দিক থেকে, ১৪০০ বছর আগে ইসলামের আবির্ভাবের সময় থেকে অথবা ইসলাম-পূর্ব সময় থেকেই প্রাচীন পারস্যে নারী জাতি অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদা পেয়ে এসেছে। ইরানের সমাজ কখনও নারীকে বস্তু হিসেবে ব্যবহার করে নি।
ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যাবে যে, ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি সবখানেই নারীকে সুন্দর, সুষমাম-িত করে উপস্থাপন করা হয়েছে। নারীর পরিচয় বিবেচনা করার জন্য বহির্বিশ্ব থেকে আমদানি করা সংজ্ঞায় নারীকে সংজ্ঞায়িত করার প্রয়োজন নেই। আধুনিক বিশ্বে বিশ্বায়নের কারণে তার নিজস্ব স্বকীয়তার বিলুপ্তি ঘটনো হয়েছে। সে যন্ত্রে রূপান্তরিত হয়েছে এবং যন্ত্রের কোন বিবেক বোধ নেই।
ধরা যাক, আমাদের কাছে একটা রেঞ্জ আছে। তার অর্থ এই নয় যে, তা নিজে নিজেই ক্রিয়াশীল হবে। কারণ, সেটাতো একটা যন্ত্রবিশেষ- সেটাকে চালিত করতে হবে। বর্তমান যুগে নারীর প্রতি যন্ত্রের ন্যায় মনোভাব পোষণ করা হয় এবং তাদেরকে কখনই স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে মূল্যায়ন করা হয় না। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে একজন নারী তার সমাজের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত সম্পর্কিত থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত সে যন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে, ব্যবহারযোগ্য থাকবে। আমাদের সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নারী একজন মূল্যবোধসম্পন্ন মানবসত্তা, কোনক্রমেই যন্ত্র নয়। এমনকি সে যদি এ সমাজ-সংস্কৃতির সংস্পর্শে নাও থাকে তবুও তাকে একইভাবে গণ্য করা হবে। যখন মনোভাবই যান্ত্রিক হয়, তার অস্থিত্বের জন্য ব্যবহৃত না হওয়া পর্যন্ত কোন যন্ত্রকেই পরিচয় দেয়া যাবে না।
নারীর অস্তিত্বের বিষয়ে অর্থহীন দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বায়ন এবং আধুনিকতারই ফসল। ডারউইনের বিবর্তন মতবাদের পরপরই নারী সম্পর্কিত এসব সংজ্ঞা পশ্চিমা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। আর আধুনিক মানুষ তাঁর মতবাদের ওপর ভিত্তি করেই তৈরি।
ডারউইনের তত্ত্ব ঈশ্বর, প্রকৃতি এবং পুরুষের জন্য নতুন ধারণার জন্ম দেয়, যেখানে নারীর কোন অবস্থান ছিল না। নারীর প্রতি এহেন মনোভাবের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনই ‘ফেমিনিজ্ম’। নারীকে উপেক্ষা করার প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা বিশ্বে এ আন্দোলন গড়ে ওঠে। এটাকে ‘স্বতন্ত্র পরিচয়’ হিসেবেও আলোচনা করা হয়।
অপরদিকে মুসলমানদের ইতিহাসে কখনই নারীর পরিচয়কে অস্পষ্ট রাখা হয় নি এবং যার কারণে নারী সংক্রান্ত বিষয়ে পাশ্চাত্যের মতো সমস্যাও তৈরি হয় নি। তথাপি, নারীবাদ (ফেমিনিজ্ম) এমন এক সমাজের প্রতিবাদ যেখানে দীর্ঘদিন ধরে নারীরা উপেক্ষিত ছিল।
বিশ্বায়ন এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় নারীরা তাদের একক ও পৃথক ব্যক্তিত্বের অবস্থান হারাচ্ছে। বিশ্বে নারীবাদ ধারণার প্রারম্ভ থেকে এমনটা দেখা যায় যে, একজন নারী স্ত্রী, বোন, মা কিংবা এমন একজন নাগরিক হতে বাধ্য না- যাকে প্রথাগত সমাজ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এর পরিবর্তে তারা স্বতন্ত্র মানুষ হিসেবে নিজেদের মূল্যায়ন করতে চায় বা মর্যাদা চায়। এই মনোভাবের ফলে কবিতা, সাহিত্য, সিনেমা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীবাদকে আদতে মেয়েলি (womanize) করে তুলেছে। কালের পরিক্রমায় অপমানজনক এই পরিস্থিতি ‘ফেমিনিজ্ম’ এর আখ্যা পায় এবং আধুনিকতার প্রয়াসে নারীরা তাদের হাজার হাজার বছর ধরে অক্ষুণ্ন রাখা স্বতন্ত্র মর্যাদা হারিয়ে ফেলে।
ইরানের মুসলিম নারীদের কখনই এরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় নি। ইতিহাসের পাতা থেকে দেখা যায়, ইরানে মুসলিম নারীদের স্বতন্ত্র পরিচয় পূর্বেও ছিল, এখনও আছে।
নারীদের অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.), হযরত যায়নাব (সা.আ.), রোকাইয়া বা সাবার রাণী কিংবা ইরানের ইতিহাস থেকে তাহমিনা, রৌদাবা ও সৌদাবার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। বর্তমান নারিগণ আদর্শ হিসেবে তাঁদের গ্রহণ করলে স্বতন্ত্র, পারিবারিক ও সামাজিক পরিচয়ে আশাতীত পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবেন।
নারীর ওপর পাশ্চাত্যের চাপিয়ে দেওয়া (fluid) এবং (plural) আইডেনটিটির (identity) কোন সুফলদায়ক প্রভাব তাদের ওপর নেই; বরং আধুনিকতার এ প্রভাব নারীদেরকে ধাঁধার মধ্যে ফেলে এবং এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যেখানে নারী তার নিজ সত্তার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে ‘আমি কে’।
আজকের দিনে নারী চায় সমাজের প্রতিটি অঙ্গনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে। জ্ঞানার্জন করতে। ছেলেদের থেকে পিছিয়ে না থেকে পরিবার এবং সন্তানকে লালন-পালন করতে। নারীসুলভ আচরণ রক্ষা করে সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে চায় সে। নারীকে তার সামাজিক দায়িত্ব পালনের বিষয়টি উপলব্ধি করানোর জন্য Fluid Identity অথবা Plural Identity কখনই উপযুক্ত ভূমিকা পালন করতে পারে না। কারণ, এই দৃষ্টিভঙ্গি তার পরিচয়, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, পরিবার ব্যতীত তাকে বিবেচনা করেছে।
William D. Gairdner কর্তৃক রচিত বই ‘The War against the Family’-তে তিনি পরিবার ব্যবস্থাকে মূল্যায়ন করেছেন। এই গ্রন্থে তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে বিশ্বায়ন এবং আধুনিকতার পশ্চিমা বিশ্ব পরিবার প্রথাকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।
এখন প্রশ্ন দাঁড়ায়, সামাজিক দায়ভার রক্ষার পাশাপাশি পরিবার লালন-পালন করলে শেষমেষ কি তার জন্য কোন পরিবারের অস্তিত্ব থাকবে? অবশ্যই নারীর মাঝে কোন উপকারিতা থাকবে না, যদি তারা তথাকথিত আধুনিকতার -স্রোতে গা ভাসিয়ে Fluid ও Plural Identity গ্রহণ করে নেয়।
সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত Women’s Youth Olympic-এ ইরানি দল হিজাবসহ অংশগ্রহণ করতে চায়। বিশ্বায়ন এই ঐতিহ্যের পুরোপুরি বিরুদ্ধে। আর বিশ্বায়নের প্রক্রিয়ায় এই ঐতিহ্য তার স্বকীয়তাসহ প্রতিষ্ঠা পাওয়ার সুযোগ পায় না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, FIFA ইরানি টীমের জন্য ইসলামিক হিজাবকে নিষিদ্ধ করে। তাদের যুক্তি হলো- ইরানি দলকে হিজাবসহ অংশগ্রহণ করতে দিলে পরবর্তী অলিম্পিকে হিজাবধারী অংশগ্রহণকারীদের আধিক্য ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে এবং হিজাবের ওপর কোন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যাবে না। বিশ্বায়নের ধারণায়, নারীর হিজাব করে চলা তাদের আদর্শের পরিপন্থি। বিশ্বায়ন তাদের অবকাঠামো নির্ধারণ করে বিশ্বায়নের সংজ্ঞা দ্বারা, যেখানে কারো নিজস্ব পরিচয়, ইতিহাস বা জাতীয়তাবোধের জায়গা নেই।
তাই বিশ্বায়ন আমাদের জন্য ঠিক ততক্ষণ পর্যন্তই গ্রহণযোগ্য, যতক্ষণ পর্যন্ত তা অন্যের সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে সম্মান করে এবং তাদেরকে নিজেদের রীতিনীতির সাথে সংযুক্ত থাকতে দেয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, বিশ্বায়ন মানুষকে তার আসল পরিচয় ভুলিয়ে নতুন পরিচয় গ্রহণ করতে শেখায় বা বাধ্য করে। আমাদের নারীদের কোন পরিবার বা কোন দায়িত্ব থাকবে না যদি তারা Fluid কিংবা Plural Identity গ্রহণ করে নেয়।
বিশ্বায়ন ব্যবস্থা কি নারীদের এরকম অবস্থা মেনে নেবে? সিঙ্গাপুর এবং অন্যান্য আয়োজক কর্তৃপক্ষ কি আমাদের প্রতিযোগীদের হিজাবসহ অলিম্পিকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেবে? বিশ্বায়নের এই প্রক্রিয়া কি জনতার মৌলিক সত্তা গ্রহণ করবে?
Fluid Identity এবং Plural Identity সাথে relativism এর নতুন সম্পর্ক দেখা যায়। এই ধরনের পরিচয় সবকিছুকে আপেক্ষিক বিবেচনা করে এবং কোন কিছুকেই পরম মনে করে না। উদাহরণ হিসেবে ইসলামিক হিজাবকে বিবেচনা করা যায়। বর্তমানে পরিবার ও সমাজে আমাদের হিজাব বা ইসলামিক পর্দার সংজ্ঞা ফ্লুইড এবং দ্বৈত সত্তার। আদতে ইসলামিক হিজাব কী, এ প্রশ্নের জবাব একজন পূর্ণ হিজাবধারী এবং একজন আংশিক হিজাবধারী উভয়ই একই রকম দেবেন। তবে পর্দার ব্যাপারে Fluid Identity কিংবা Plural Identity-এর ধারকেরা হিজাব সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিতে সক্ষম নয়।
উপরিউক্ত উদাহরণগুলো থেকে দেখা যায় যে, সবাই নারীকে ইসলামিক হিজাব অনুধাবনের বিষয়ে উল্লেখ করে এবং দাবি করে যে, তারা হিজাবকে প্রতিপালন করে। তবে সত্যটা আদতে কী? Fluid Identity এবং Plural Identity অনুযায়ী সবকিছু আপেক্ষিক এবং যেকোন ধরনের পর্দা বা আবরণকেই হিজাব হিসেবে বিবেচনা করা যাবে। এটাই আধুনিকতা এবং বিশ্বায়ন চর্চার মূল বার্তা, যা পরম সবকিছু দূরে ঠেলে দিয়ে সবকিছুকে আপেক্ষিক বিবেচনা করার জন্য অনুপ্রাণিত করে।
অনুবাদক : সেলিনা পারভীন