ধূপওয়ালী
পোস্ট হয়েছে: মার্চ ১৭, ২০২০
অনুবাদ : কামাল মাহমুদ
সে অনেক দিন আগের কথা। এক নিঃস্ব বৃদ্ধা ছিলেন, যাঁর সম্পত্তির মধ্যে ছিলো ভাঙ্গাচোরা একখানা ঘর। এ ছাড়া তাঁর আর কিছুই ছিলো না। তিনি কোনো প্রকার কাজ জানতেন না। কাজের মধ্যে তিনি প্রতিদিন তাঁর বাড়ির সামনে বসে একটি চুলার মধ্যে আগুন জ¦ালিয়ে তার মধ্যে এসফান্দ (এক প্রকার ফলের বিচি) যা পোড়ালে অনেকটা ধূপের মতো গন্ধ আসতো তা পুড়িয়ে ধোঁয়া তৈরি করতেন আর বারবার বলতে থাকতেনÑ হিংসুকের চোখ যেন ফেটে যায়। ধোঁয়া যেন শত্রুর চোখে গিয়ে ঢোকে। সেখান দিয়ে যে সকল লোক হেঁটে যেতো তারা এই বৃদ্ধাকে কিছু না কিছু টাকা-পয়সা দিতো। এটা দিয়ে তিনি জীবন যাপন করতেন।
পাড়ার লোকেরা ঐ বৃদ্ধা মহিলাকে সব সময় ঐখানেই দেখতো। যখনই কোনো ঠিকানা বলার প্রয়োজন হতো তখনই তাঁর নাম স্মরণ করতো এবং বলতো : ‘ঐ ধূপওয়ালী মহিলার বাড়ির নিকটেই একশ’ কদম সামনে’, ‘দশ কদম পেছনে’ ইত্যাদি। ঐ নিঃস্ব মহিলার বাড়ির কাছেই একজন ধনী লোক বাস করতেন। তিনি প্রতিদিন ঐ ধূপওয়ালী মহিলাকে দেখতেন এবং কখনো কখনো তাঁর বাড়ির লোকেরা ঐ বৃদ্ধা মহিলাকে বিভিন্ন জিনিসপত্র দিয়ে সাহায্য করতেন। কিন্তু একদিন একটি ঘটনা ঘটলো।
ধনী লোকটি বাজার থেকে এক বস্তা পাকা পেস্তা কিনে বাসায় পাঠাতে চাইলেন এবং বাড়ির ঠিকানা দিয়ে দিলেন। কিন্তু কুলি সে ঠিকানা অনুযায়ী চিনতে পারছিলো না। নানাভাবে তাকে বুঝিয়ে দিলেনÑ ‘গলির মাঝামাঝি বাম পাশে, যার দরজা সবুজ রঙের। বাড়ি নম্বর ১৬, অমুকের বাড়ির সামনে। যার দরজার সামনে ইট সিমেন্ট দিয়ে সবুজ রঙের গালিচা আঁকা রয়েছে।’ শেষ পর্যন্ত কুলি বললো : ‘বুঝতে পারছি, এটা তো ঐ দরিদ্র ধূপের ধোঁয়া বিতরণকারী মহিলার বাড়ির কাছেই।’
ধনী লোকটি বললেন : ‘হ্যাঁ ঠিক বলেছো। ঐ জায়গায়ই।’
অতঃপর কুলি চলে গেল এবং তার বোঝা পৌঁছে দিলো। কিন্তু ধনী লোকটি তার এই কথায় অসন্তুষ্ট হলেন। মনে মনে বললেন : ‘মানুষ ঐ ধূপওয়ালী নিঃস্ব মহিলার বাড়ির কাছে হিসেবে আমার বাড়িকে চেনে, এটা ভালো কথা নয়। আমাদের তো সম্মান আছে। আমাদের বাড়ির ঠিকানা দিতে চাইলে ঐ মহিলার বাড়ির কাছে বলে পরিচয় দিতে হয়। এতগুলো দুর্ভাগা মানুষের মধ্যে একজন ধনী মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারে না। সবাই ভালো না থাকলে (সম্পদশালী না হলে) কেউ একা শান্তিতে থাকতে পারে না। এই প্রতিবেশীর জন্য আমাকে কিছু একটা করতে হবে।’
চিন্তা করে বললেন : ‘ঐ মহিলার বাড়িটা কিনে নেবো। তা হলে এই ধূপওয়ালী মহিলার খপ্পর থেকে গলির লোকদেরকে মুক্ত করতে পারবো।’ রাতে বাড়িতে এক দালালাকে ডেকে এনে তাকে বিষয়টি বললেন। দালাল গিয়ে ঐ বৃদ্ধা মহিলাকে বললো : ‘তোমার বাড়ি কত টাকায় বিক্রি করবে? বিক্রি করলে বলো। আমার হাতে একজন ভালো ক্রেতা আছে।’ বৃদ্ধা বললেন : ‘কখনই বিক্রি করবো না। এই বাড়ি আমার হাসি আনন্দের সাথে জড়িত। এখানে আমার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত থাকবো।’
ধনী লোকটি এ সংবাদ শুনে বুঝতে পারলেন যে, এভাবে হবে না। আবার লোকজন এটাও বলতে পারে যে, অসহায় বৃদ্ধার বাড়ির দিকে এই লোকটির নজর পড়েছে। এটা সম্মানজনক কাজ হবে না। নিজে নিজে বললেন : ‘তাঁকে এ ধোঁয়া তৈরির কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে। যদি তিনি আমার কাছে এসে কিছু বলেন তা হলে তাঁর জন্য কিছু করবো। আর যদি তিনি এটা অভ্যাস করে ফেলেন তা হলে অন্য পন্থা অবলম্বন করবো।’ এরপর বৃদ্ধাকে দাওয়াত করে তাঁর বাড়িতে নিয়ে আসলেন। ধনী লোকটি ঐ বৃদ্ধার কুশলাদি জিজ্ঞেস করলেন। বৃদ্ধা মহিলা বললেন : ‘খোদার শোকর। আপনার বাচ্চাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ যে, তারা মাঝে মধ্যে আমার খোঁজ-খবর নেয়।’ এরপর সেই ধূপের ধোঁয়া বিষয়ে কথাবার্তা শুরু হলো।
ধনী লোকটি জিজ্ঞেস করলেন : ‘আপনি এই যে ধূপের ধোঁয়া দেন, এর উপকারিতা কী?’ বৃদ্ধা বললেন : ‘জনাব! আপনি এমন কথা বলবেন না, এটা অতীত কালের জ্ঞানীরা বলে গেছেন ধূপের ধোঁয়া হলো বদনজরের ঔষধ, আর সকলেই এটা জানে।’
ধনী লোকটি বললেন : ‘বদনজর মানে কী?’ বৃদ্ধা বললেন : ‘বদনজর হলো হিংসুকের দৃষ্টি। কারো কোনো কিছু দেখে হিংসা করে, কারো হাতে ভালো কিছু দেখলে হিংসায় চোখ জ¦লে যায়। ঐ জিনিসের দিকেই তার চোখ গিয়ে পড়ে এবং ঐ জিনিসের ওপর প্রভাব পড়ে, যেটা হিংসুকের চোখে ভালো লাগে, সেটা ধ্বংস হয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়।’
ধনী লোকটি একথা শুনে অট্টহাসি দিয়ে বললেন : ‘আজব কথা শুনছি, একজন হিংসুকের দৃষ্টি পড়লেই কোনো জিনিস কিভাবে ধ্বংস হতে পারে? বিষয়টি মোটেই এরকম নয়। দেখুন ইট, বালু, সিমেন্ট দিয়ে একটি ভবন মজবুত করে বানানো হয়। কোনো হিংসুকের বদনজর সেটাকে ধ্বংস করতে পারে না। সেটাকে ধ্বংস করার জন্য গাইতি বা হাতুরি হাতে নিতে হয় বা কামানের সাহায্য নিতে হয়।’
বৃদ্ধা বললেন : ‘না জনাব! বলার উদ্দেশ্য ছিলো যদি কোনো হিংসুকের বদনজর ভবনের ওপরে পড়ে তা হলে কোনো না কোনো ভাবে ওটা মালিকের হাতছাড়া হয়ে যায়।’
ধনী লোকটি বললেন : ‘এ কথাটিও সঠিক নয়। কোনো ভবন তখনই মালিকের হাতছাড়া হতে পারে যখন সে ওটা বিক্রি করার জন্য মনস্থির করে অথবা ভুলক্রমে চরম ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়লে বাধ্য হয়ে বিক্রি করে। এর সাথে হিংসুকের চোখের বদনজরের কোনো সম্পর্ক নেই। যদি হিংসুকের চোখ সত্যি কোনো জিনিসে বদনজর দিয়ে ধ্বংস করতে পারতো তা হলে জগতে কোনো ধনী মানুষ থাকতো না। কেননা, প্রত্যেকই তার চেয়ে তুলনামূলক ধনী ব্যক্তির সম্পদে ঈর্ষান্বিত হতো। তা হলে কেন অসহায়রা হিংসুকের চোখ আর তার বদনজরের চিন্তায় মশগুল থাকবে? আমরা কেন এমন ভাবনায় ডুবে থাকি না?’
বৃদ্ধা বললেন : ‘এটাও আল্লাহর ইচ্ছা। হয় তো ধনীরা এমন কোনো ভালো কাজ করে যাতে তাদের সম্পদে আর বদনজর কোনো কাজে আসে না।’
ধনী লোকটি বললেন : ‘ভালো কাজের মূল্যই অন্যরকম। যে ব্যক্তি সন্তুষ্ট চিত্তে তার কাজ করে, তার কর্তব্য অনুযায়ী সকল কাজ সম্পন্ন করে, ধূপের ধোঁয়া তার কিছুই করতে পারে না। যদি ধূপের ধোঁয়া সমস্যার সমাধান করতে পারতো তাহলে মানুষ কেন ভালো কাজ করতে যাবে? তারা কয়েকটা এসকান্দ বিচি আগুনে পোড়াবে আর নিশ্চিন্তে নাক ডেকে ঘুমাবে। আসলে ধূপের ধোঁয়া ভালো চোখ বা মন্দ চোখ চেনে না। এই ধোঁয়া আপনার নিজের চোখে গেলেও ব্যথা করবে। এখন আপনার কি মনে হয় ধূপের ধোঁয়ার কোনো আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে?’
বৃদ্ধা মহিলা বললেন : ‘কি জানি, হয়তো এমন হতে পারে যে, এর ঘ্রাণ মনোমুগ্ধকর, এজন্য এতে কাজ হয়।’
লোকটি বললেন : ‘এটাও হতে পারে না, ফুলের ঘ্রাণও তো সুন্দর। গোলাপের ঘ্রাণ, আওদ ও চন্দন কাঠের ঘ্রাণও মনোমুগ্ধকর। আর আওদ ও চন্দন কাঠ পোড়ালে অধিক সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।’
বৃদ্ধা বললেন : ‘আওদ বা চন্দন কাঠ অনেক দামী আর এসকান্দ তুলনামূলক সস্তা।’
লোকটি বললেন : ‘বেশ তো, আনার, কমলালেবুর খোসাতো আরো সস্তা। এগুলোর ঘ্রাণ তো আরো মুগ্ধকর।’
বৃদ্ধা মহিলা বললেন : ‘আর একটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ আর তা হলো এসকান্দ আগুনে শব্দ করে যা হিংসুকের চোখে গিয়ে লাগে।’
লোকটি বললেন : ‘এটাও হতে পারে না। আগুনে লাকড়ি পুড়লে আরো বেশি শব্দ হয়, আগুনে যে কোনো বিচি দিলে এই রকম শব্দ করে। কমলা, বুট, তরমুজ, বাঙ্গি সব বিচিই আগুনে পুড়লে শব্দ হয়। কামান বা বন্দুকের আওয়াজও তো আরো বেশি হয়, এই চড়চড় করার সাথে চোখের কোনো সম্পর্ক নেই, সম্পর্ক কানের সাথে।’
এসব কথা শুনে লোকটির স্ত্রীও বারবার হেসে উঠলো এবং বৃদ্ধা নিজেও হাসলেন।
বৃদ্ধা বললেন : ‘জনাব! আপনার অনেক ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তা অনেক। আমি আসলে জানি না কেন এসকান্দের বিচি (ধূপ জাতীয়) ভালো। অতীতকালের লোকেরা এগুলো এভাবেই জানতো। কিন্তু সবাই এসব বিশ^াস করছে কেন?’
লোকটি বললেন : ‘অতীতকালে লোকেরা অনেক ফালতু কথা বলতো, মানুষ এগুলো বিশ^াস করতো। কারণ, তাদের কাছেও কোনো প্রমাণাদি ছিলো না। অতীতকালের মানুষ রোগ এবং এর নিরাময়ের বিষয়ে নানা ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করতো। এখন সবাই জানে যে, এগুলো ভুল ছিলো। এই এসফান্দ সবই অতীতকাল থেকে এমন প্রসিদ্ধ ছিল যে, এর গন্ধ মশা ও অন্যান্য পোকামাকড় সহ্য করতে পারে না তাই এর ধারে কাছে আসে না। এটি প্রজ¦লন করলে সেখান থেকে পলায়ন করে। আস্তে আস্তে মানুষের মনে এ ধারণা বাড়তে থাকে এবং বদ্ধমূল হয়ে যায়। এরপর এর সাথে আবার নানা বিষয় যুক্ত করে বিশ্বাস করতে শুরু করে।
বৃদ্ধা বললেন : ‘কিন্তু জনাব! যেহেতু আপনি এসব জানেন, আপনাকে আমি একটি কথা বলি, আমি নিজেও এই ধূপের ধোঁয়ায় বিশ^াস করি না। কয়েক বছর আগে আমার স্বামী অসুস্থ হলো, যতই ধূপের ধোঁয়া দিলাম। কোনো কাজে আসলো না। আমি নিজে এই গলিতে ধোঁয়া দিয়ে বেড়াই। অথচ আমিই সবচেয়ে দুর্ভাগা। যদি ধূপের ধোঁয়ায় কাজ হতো তাহলে যারা ধূপের ধোঁয়া দেয় তারা সবার চেয়ে ভালো থাকতো। কিন্তু তা তো নয়। আমি নিজেও জানি এটি এক প্রকার ভিক্ষা করার নামান্তর। কিন্তু কী করবো। মানুষ এটা বিশ^াস করে, যখন বলি ধূপের ধোঁয়া হিংসুকের চোখে জ¦ালা ধরায় আর শত্রুর চোখে গিয়ে লাগে, তখন তারা আমাকে কিছু একটা দেয়। এছাড়া অবশ্য কিছু করারও নেই। আর আমার ছেলেটাও জেলখানায়।’
ধনী লোকটি তাঁর কথায় কিছুটা ব্যথিত হলেন এবং বললেন : ‘আপনি নিজেও জানেন যে, ধূপের ধোঁয়ায় কোনো কাজ হয় না। তা হলে আমি আপনার জন্য কী করতে পারি যাতে আপনি এই ধোঁয়া জ¦ালানো থেকে বিরত থাকবেন? আপনার এই ধোঁয়া আমাদেরকে কষ্ট দেয়। আমি জানি না, আমাদের কোনো প্রতিবেশী আপনার কোনো ক্ষতি করেছে কি না?’
বৃদ্ধা বললেন : ‘না, জনাব! আল্লাহ না করুন আমি আপনার এবং অন্যান্য প্রতিবেশীর সহায়তার জন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ এবং আপনাদের জন্য আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি। যদি আপনি আমার জন্য কোনো কিছু করে দিতে চান তা হলে আমার ছেলেটাকে জেলখানা থেকে বের করার ব্যবস্থা করুন।’
লোকটি বললেন : ‘আপনার ছেলে এমন কি কাজ করেছে যে তাকে জেলে যেতে হলো?’
বৃদ্ধা বললেন : ‘কিছু না জনাব, সে শুধু আমার সাথে এসকান্দের ধোঁয়া দিত। সে আমার কাছ থেকে এ কাজের তালিম নিচ্ছিলো। সে যখন ছোট ছিলো আমি অলিগলিতে ধোঁয়া দিতাম, সেও আমার সাথে সাথে হাঁটতো এবং এ কাজ শিখতো। যখন সে বড় হয়ে একাজ আরো ভালো ভাবে শিখলো, তখন গত বছর এক কসাইয়ের দোকানের সামনে এসফান্দের ধোঁয়া দিয়ে টাকা চাইলো আর ঐ দোকানদার আপনার মতো এসব কাজে বিশ^াসী ছিলো না। সে আমার ছেলেকে খোঁচা মেরে কথা বলেছিলো। আমার ছেলেও বাজে ভাবে এর জবাব দিয়েছে। এ কারণে ঝগড়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তাকে মেরে রক্তাক্ত করেছে, জেলে পুরে দিয়েছে। আর এখনও সে জেলখানায় আছে।’
লোকটি বললেন : ‘বলুন, এটাও কি ঐ এসকান্দের ধোঁয়ার ফলাফল। এখন যদি সে জেলখানা থেকে বের হয়, তাহলে একাজ করা হতে বিরত হবেন?’
বৃদ্ধা বললেন : ‘যদি আমার ছেলে ভালো কোনো কাজ পায়, তাহলে কেন একাজ থেকে বিরত হবো না? কেউ কি চায় এই এসকান্দের বিচি পুড়িয়ে জীবন যাপন করতে। এই কাজ করা আর ভিক্ষা করার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। বরং ভিক্ষার চেয়েও জঘন্য, কেননা, এটা তো একপ্রকার প্রতারণাও বটে।’
লোকটি বললেন : ‘বেশ ভালো কথা, আগামীকাল থেকে আপনারা এই ঘরে বসবাস করবেন, যা লাগবে বলবেন। আপনারা আমার প্রতিবেশী, আপনাদের তো আমাদের ওপর হক আছে, আপনার ছেলেকে জেল থেকে বের করার ব্যবস্থা করব। কিন্তু শর্ত হচ্ছে কারো দরজার সামনে যেন ঘুরে ধোঁয়া দিতে না দেখি।’
পরের দিন বৃদ্ধা তাঁর ঘরের দরজা ঠিকঠাক করে নতুন রঙ করালেন এবং বেশ প্রশান্তি লাভ করলেন। ছেলেও জেলখানা থেকে বেরিয়ে আসলো। তার জন্য কাজের ব্যবস্থা করা হলো এবং সম্মানজনকভাবে জীবন যাপন করতে আরম্ভ করলো। কিছু দিন পরে ঐ বৃদ্ধা ঐ দালালের কাছে গিয়ে তাঁর ঘর বিক্রি করার আগ্রহের কথা জানালেন। দালালও তাঁর ঐ প্রতিবেশীকে এই খবর দিল।
প্রতিবেশী লোকটি বৃদ্ধা মহিলাকে বললেন : ‘এখন তো আমি চাই না যে, এরকম একজন ভালো প্রতিবেশী চলে যাক, আপনি কেন এই বাড়ি থেকে চলে যেতে চান?’
বৃদ্ধা বললেন : ‘আমি সব সময় আপনার জন্য দোয়া করি। কেননা, আপনি আমাদের এই এসকান্দের বিচির ধোঁয়া থেকে বাঁচিয়েছেন। এই গলিতে সকলে আমাকে এসকান্দের ধোঁয়াওয়ালী বলে চেনে। আমরা অন্যত্র গিয়ে জীবনযাপন করতে চাই যাতে সম্মানের সাথে জীবন যাপন করতে পারি।’
লোকটি বললেন : ‘বেশ তো, তাহলে আপনি বুঝতে পেরেছেন। আমিও জানি, যদি কেউ তার প্রতিবেশীর সুখের চিন্তা করে তা হলে সেও সুখে থাকতে পারে। আপনি সুবিধা মতো কোনো ঘর খুঁজে পেলে আমাকে বলবেন, তারপর আমি আপনার ঘর কেনার ব্যাপারে কথাবার্তা বলবো।’