কারবালার শাশ্বত বিপ্লব (পর্ব-৯)
পোস্ট হয়েছে: আগস্ট ১৯, ২০২১
শোকাবহ মহররম উপলক্ষে কারবালার শাশ্বত বিপ্লব শীর্ষক ধারাবাহিক আলোচনার নবম পর্ব থেকে সবাইকে জানাচ্ছি সংগ্রামী সালাম ও গভীর শোক আর সমবেদনা।
আজ নয়ই মহররমের দিবাগত রাত তথা মহান আশুরার ১৩৮২ তম বার্ষিকী। ইমাম হুসাইনের নেতৃত্বে আশুরার মহাবিপ্লব হচ্ছে তরবারির ওপর রক্তের বিজয়ের আদর্শকে চিরন্তন মহিমা দেয়ার বিপ্লব। আসলে ইমাম হুসাইনের নেতৃত্বে সংঘটিত এ মহাবিপ্লব ইসলামেরই পরিপূর্ণ চিত্রের প্রতিচ্ছবি। তাই এ মহাবিপ্লব ইসলামেরই সব দিককে জানার এবং সবগুলো মহৎ গুণ চর্চার কেন্দ্র-বিন্দু।
কারবালা ও আশুরা একত্ববাদ বা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা, ইসলামী নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য,সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ, খোদাপ্রেম ও ইসলামী আদর্শের জন্য চরম ত্যাগ-তিতিক্ষা, মানবতা, মহত্ত্ব, বীরত্ব, বিশ্বস্ততা, মহানুভবতা, মুক্তিকামিতা, সততা, আধ্যাত্মিকতা ও আত্মসংশোধনের নানা দিক শেখার এক মহান বিশ্ববিদ্যালয়। কারবালা এটা প্রমাণ করে যে রক্ত তরবারির ওপর বিজয়ী হতে পারে। সত্যের পক্ষে মুষ্টিমেয় সেনানীও ভেঙ্গে দিতে পারে প্রবল পরাক্রান্ত তাগুতি শক্তির সিংহাসন। কারবালার ঘটনা ত্যাগ ও তিতিক্ষার বহু অনন্য দৃষ্টান্তের সাক্ষ্য। ইমাম হুসাইনের (আ.) ভাই বীরশ্রেষ্ঠ হযরত আব্বাস ত্যাগ ও তিতিক্ষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
হযরত আব্বাস ইমাম পরিবারের তৃষ্ণার্ত শিশুদের জন্যে পানি আনার দৃঢ়সংকল্প নিয়ে চার হাজার শত্রু-সেনার ব্যূহ প্রাচীর ভেদ করে ফোরাতের পানিতে এসে পড়লেন। প্রথমে তিনি মশক ভরে পানি নিলেন। এবার তিনি হাত ভরে পানি তুলে মুখের কাছে আনলেন। হঠাৎ করে তিনি পানি ফেলে দিলেন এবং একফোঁটা পানিও পান করলেন না। হযরত আব্বাসের তৃষ্ণার্ত ভাইয়ের কথা মনে পড়লো। তিনি ভাবলেন, ইমাম (আ.) তাঁবুতে তৃষ্ণার্ত থাকবেন আর আমি পানি খাব এটা কিভাবে সম্ভব? ‘হযরত আব্বাস নিজের নফসকে বলেছিলেন: হে আব্বাস! তোমার ভাই তৃষ্ণার্ত আর তুমি স্বচ্ছ পানি পান করে বেঁচে থাকতে চাও? আল্লাহর শপথ করে বলছি-ভাইয়ের খেদমত,ইমাম হুসাইনের (আ.) খেদমত,সত্যের খেদমত, সেনাপতির বিশ্বস্ততা এভাবে সম্ভব নয়।’’ কারবালা ছিল সত্যের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার বাস্তব পরীক্ষা কেন্দ্র । এর প্রথম থেকে শেষ সীমা পর্যন্ত সব পর্যায়ই ছিল সত্যের সেনাদের বিশ্বস্ততায় ভরপুর।
আশুরার দিনে কারা আগে জিহাদের ময়দানে যাবে তা নিয়ে ছিল নবী-পরিবার ও নবী-পরিবারের সদস্যদের বাইরের মধুর প্রতিযোগিতা। আশুরার দিবস শুরুর আগের রাতে নবী-পরিবারের সদস্যরা এ পরিবারের বাইরের সদস্যদের বাদ দিয়ে গোপন বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেন যে প্রথমে তারাই যুদ্ধে যাবেন এবং প্রথমেই নবীর উম্মতের কাউকে শহীদ হতে দিবেন না! কারণ রাসূল যদি পরকালে তাদের বলেন, তোমরা আমার পরিবারের সদস্য হয়ে আমার উম্মতকে আগে মৃত্যুর দিকে পাঠালে!- তখন আমরা কি জবাব দেব!? তাই আগে আমরাই জিহাদে গিয়ে শহীদ হব। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবে শুনে ফেলার পর মহানবীর ৭৫ বয়স্ক সাহাবি হাবিব ইবনে মাজাহের নবী-পরিবারের বাইরের সদস্যদের নিয়ে পাল্টা বৈঠক বসিয়ে বললেন: কাল যদি নবী-পরিবারের সদস্যরা আগে শহীদ হন তাহলে আমরা রাসূলের কাছে কিভাবে মুখ দেখাব!? তিনি যদি বলেন তোমরা থাকতে আগে আমার পরিবারের সদস্যরা আগে শহীদ হল! তাই আগামীকাল আমরাই আগে যুদ্ধে গিয়ে শহীদ হব। নবী-পরিবার বা হাশিমি বংশের বাইরের সবাই এতে রাজী হলেন সানন্দে।
পরদিন ইমাম হুসাইনকে তারা এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন যে, আমরা কেউ বেঁচে থাকতে নবী-পরিবারের একজনকেও হতাহত হতে দিব না। আমাদের শাহাদাতের পর যা হবার তা হবে কিন্তু আমরা বেঁচে থাকতে নবী-পরিবারের কোনো ক্ষতি হতে দিব না। হযরত যায়নাব এই ঘোষণা শুনে খুশি হয়েছিলেন এবং সেই কঠিন দিনগুলোতে কেবল এ সময় তাঁর মুখে সামান্য সময়ের জন্য হাসি ফুটে উঠেছিল।
আশুরার দিন নবী-পরিবারের বাইরের সবাই বীরের মত লড়াই করে শহীদ হওয়ার পর একে একে নবী-পরিবারের সদস্যরাও বীর বিক্রমে লড়াই করে শহীদ হচ্ছিলেন। কেবল বেঁচে ছিলেন স্বয়ং ইমাম হুসাইন ও তার ভাই আবুল ফজল আব্বাস। আর অসুস্থতার কারণে লড়াই করতে পারেননি ইমামের পুত্র হযরত যায়নুল আবেদিন।
বলা হয় তাঁরা শত্রু অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছিলেন কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে। শত্রুরা পানি অবরোধ আরোপ করায় ইমাম শিবিরের সবাই কয়েক দিন ধরে তৃষ্ণার্ত। তাই শিশু ও নারীদের জন্য পানি আনার দায়িত্ব নিয়ে ফোরাত নদীর আলগ্বামে নামের একটি শাখা যা কারবালার কাছাকাছি বয়ে যাচ্ছিল সেদিকে অগ্রসর হন আবুল ফজল আব্বাস।
দুই ভাই ইমাম হুসাইন (আ) ও হযরত আব্বাস পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে উচ্চৈঃস্বরে কয়েকটি বাক্য উচ্চারণ করছিলেন যাতে তাদের যোগাযোগ ও সমন্বয় অব্যাহত থাকে। এরই ভিত্তিতে শত্রুদের জানান দিয়ে ইমাম হুসাইন উচ্চৈঃস্বরে বলছিলেন: আমি আলীর পুত্র হুসাইন! ওদিকে আব্বাসও উচ্চৈঃস্বরে জবাব দিলেন: আমি আলীর পুত্র আব্বাস! এরপর ইমাম হুসাইন এক পর্যায়ে বললেন: আমি ফাতিমার পুত্র হুসাইন। তখন কিন্তু আব্বাস আর জবাব দিলেন না! কারণ তাঁর মা হচ্ছেন ভিন্ন কেউ!
ইমাম হুসাইন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আগের কথাটাই বললেন যাতে আব্বাস আবারও জবাব দিতে পারে। ওদিকে শত্রুসেনাদের বাধা কাটিয়ে তাদের পরাস্ত করে পানির মশকে পানি আনার প্রচেষ্টায় এক পর্যায়ে শত্রুরা পর পর দুই ভিন্ন হামলায় আব্বাসের দুই হাত কেটে ফেলে এবং তাঁকে আঘাতে আঘাতে মৃতপ্রায় করে ফেলে। এ অবস্থায় আব্বাস এই প্রথমবার তাকে ভাই বলে সম্বোধন করেন। ইমাম হুসাইনও সাহায্যের জন্য ছুটে যান।! আব্বাস ইমাম হুসাইনকে আমার নেতা বা আমার সর্দার বলে উল্লেখ করতেন! শ্রদ্ধার কারণে ভাই বলে ডাকতেন না! তাই বিস্মিত ও শোকার্ত ইমামকে ব্যাখ্যা দিয়ে মৃতপ্রায় আব্বাস বললেন: হযরত ফাতিমাকেই কিছুক্ষণ আগে দেখেছি! তিনি স্নেহভরে আমাকে বললেন: হুসাইন যখন ডাক দিল আমি ফাতিমার ছেলে- তখন তুমিও কেন একই কথা বললে না! কারণ তুমিও তো আমারই ছেলে!-
শহীদ সম্রাট ইমাম হুসাইন (আ)’র মত এক অত্যুজ্জ্বল নক্ষত্রের অনুগত ও ন্যায়নিষ্ঠ সঙ্গী হওয়ার মত গৌরবময় আলোক-স্পর্শ যারা পেয়েছিলেন তারাও ইসলাম এবং মানবতার ইতিহাসে উজ্জ্বল হীরক-খণ্ডের মতই অমর হয়ে আছেন। মুষ্টিমেয় সেইসব সঙ্গীদের মর্যাদা তুলে ধরতে গিয়ে স্বয়ং ইমাম বলেছিলেন সেই ঐতিহাসিক উক্তি:
‘‘আমি পৃথিবীতে তোমাদের চেয়ে বিশ্বস্ত ও উত্তম কোনো সহযোগীর সন্ধান পাইনি।’’ পবিত্র কুরআনে বলা হচ্ছে: ‘‘কত নবী যুদ্ধ করেছেন,তাদের সাথে বহু আল্লাহওয়ালা ছিল। আল্লাহর পথে তাদের যে বিপর্যয় ঘটেছিল তাতে তারা হীনবল হয়নি ও নতি স্বীকার করেনি। আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে পছন্দ করেন।’’ (আল ইমরান: ১৪৬)
অথচ ইমাম হোসাইন (আ.) প্রকারান্তরে তার সহযোগীদেরকে আম্বিয়াকেরামের এ সকল সহযোগীদের চেয়েও মর্যাদাসম্পন্ন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।ইমামের সঙ্গে কয়েক মাস পর্যন্ত ছিল কয়েক হাজার সঙ্গী। তাদের অনেকেই খুব ভাল প্রকৃতির মানুষও ছিলেন। তবে এদের বেশিরভাগই শেষ মুহূর্তে তাদের ইমাম তথা নেতাকে পরিত্যাগ করেন যদিও এ সময় ইমামের প্রতি তাদের সাহায্য ছিল জরুরি। যারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ইমামের পাশে থেকেছেন তারা কেন সুযোগ পেয়েও ইমামকে ত্যাগ করেননি? আসলে এরা ছিলেন ঈমানের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার যোগ্য ব্যক্তিত্ব। ইমামের প্রতি তাদের মধ্যে গভীর ভালবাসা ছিল কিংবদন্তীতুল্য কিংবা গভীর ইমাম-প্রেমের একটা পটভূমি তাদের হৃদয়ে আগেই তৈরি হয়েই ছিল। তাই মহান আল্লাহর পরিচালিত আত্মত্যাগের নানা কঠিন পরীক্ষায় তারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অবিচল থাকেন একনিষ্ঠ খোদাপ্রেমিক হিসেবে। তাই তারা দুর্বল ঈমানদারদের চিন্তার বিপরীতে বিপদের কঠিন পাহাড় ও অনিবার্য মৃত্যু দেখেও একজন শ্রেষ্ঠ ও পরিপূর্ণ মানুষের পৌরুষোচিত সংগ্রামের শরিক হওয়ার গৌরব হাতছাড়া করতে চাননি।
আরব খ্রিস্টান পণ্ডিত ও সাহিত্যিক জর্জ জুরদাক ইমাম হুসাইন (আ)-এর আদর্শিক আকর্ষণ প্রসঙ্গে লিখেছেন:‘ইয়াজিদ যখন ইমাম হুসাইন (আ.)-কে হত্যার জন্য জনগণকে উৎসাহ দিত এবং রক্তপাত ঘটানোর নির্দেশ দিত তখন তারা বলত, কতো টাকা দেবেন? কিন্তু ইমাম হুসাইন (আ.)-এর সঙ্গীরা তাকে বলতেন, আমরা আপনার সঙ্গে রয়েছি। আমাদেরকে যদি সত্তর বারও হত্যা করা হয় তবুও পুনরায় আপনার পক্ষে যুদ্ধ করতে ও নিহত হতে চাইব।’
আমর ইবনে জুনাদ নামের এক ইমাম প্রেমিক অনুমতি চান যুদ্ধের জন্য। ইমাম হুসাইন (আ) বললেন, তোমার বাবা কিছুক্ষণ আগে শহীদ হয়েছেন। তাই তুমি যুদ্ধে যেও না, তোমার মায়ের সেবার জন্য বেঁচে থাক। অনুমতি পাওয়ার জন্য ব্যাকুল জুনাদ কেঁদে কেঁদে বললেন, আমার মা-ই আমাকে পাঠিয়েছেন এবং তিনি চান যে আমি আপনার জন্য এখানেই শহীদ হই,তিনি কিছুতেই আমাকে ফিরতে দেবেন না। কেমন ইমাম-প্রেমিক ছিলেন এই মা?
মল্ল যুদ্ধের সময় জুনাদ আবৃত্তি করছিলেন স্বরচিত সেই বিখ্যাত কবিতা: ‘আমার নেতা হুসাইন (আ), কতো উত্তম নেতা! হৃদয়ে আনন্দের মাধ্যম। তিনি পুরস্কারের সুসংবাদদাতা ও খোদায়ী শাস্তির ভীতি প্রদর্শনকারী। হযরত আলী (আ) ও ফাতিমা সালামুল্লাহি আলাইহা তার বাবা ও মা। হুসাইনের সঙ্গে তুলনা করার মতো কেউ কি আছে? যেন মধ্যাহ্নের উজ্জ্বল সূর্যের মত তার চেহারা ….’
সাইদ নামের আরেক ইমাম প্রেমিক ১৩ টি তীরের আঘাত সহ্য করেন ইমামের জন্য। ইমাম যাতে নির্বিঘ্নে আশুরার দিনে যুদ্ধক্ষেত্রেই জোহরের নামাজ আদায় করতে পারেন সে জন্য সাইদ এতগুলো তীর বুকে পেতে নেন। ১৩তম তীরের আঘাতে যখন লুটিয়ে পড়েন সাইদ ততক্ষণে ইমামের নামাজ শেষ হয়েছে। এ সময়ও সাইদ হাসিমুখে বলছিলেন,ইমাম আপনি কী আমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন?
আশুরার দিন নবী পরিবারের নুরানি সদস্যদের একে একে শাহাদাত বরণও ছিল ইতিহাসের অনন্য দৃশ্য। ইমামের ৬ মাসের শিশুও রেহাই পায়নি ইয়াজিদ বাহিনীর বর্বরতা থেকে। হযরত আলী আকবর (আ) ছিলেন ইমামের বড় ছেলে। ১৯ বা ২১ বছর বয়সের এই তরুণ জোহরের নামাজের সময় কারবালায় আজান দিয়েছিলেন। তার আযানের কণ্ঠ শুনে চমকে যায় শত্রু শিবিরের অনেকে। ঠিক যেন মহানবী (সা)-এর কণ্ঠস্বর! চেহারাও ছিল অবিকল মহানবীর যুব-বয়সের সেই চেহারা। চাল-চলনও ছিল অবিকল মহানবীর মত! তাকে যুদ্ধে পাঠাতে ইমামের কতই না কষ্ট হচ্ছিল। নবী-পরিবারের সদস্যরা বলতেন, মহানবীর জন্য যখন প্রাণ কাঁদতো তখন মাঝে মধ্যে তাকে স্মরণ করে আমরা আলী আকবরের দিকে তাকাতাম!
১৩ বছরের তরুণ হযরত কাসেম ইবনে হাসানের বীরত্বও ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। প্রিয় ভাই ও ভাইয়ের ছেলেদের মৃত্যুতে অশেষ শোকে বেদনার্ত হয়েছিলেন হযরত যায়নাব সালামুল্লাহি আলাইহা। কিন্তু যায়নাবের দুই শিশু পুত্রও যে বীরের মত লড়াই করে শহীদ হয়েছিলেন সেদিকে তার যেন ভ্রুক্ষেপও ছিল না। অশেষ ধৈর্যের প্রতীক হযরত যায়নাব বলেছিলেন, “কারবালায় যা কিছু দেখেছি ইমাম শিবিরের দিক থেকে ও ইয়াজিদ শিবিরের মোকাবেলায় তাতে সৌন্দর্য ছাড়া অন্য কিছু দেখিনি।”
ইমাম হুসাইন (আ) নিজে এবং তার পুত্র আলী আকবর ও ভাই আবুল ফজল আব্বাস শহীদ হওয়ার আগে বহু শত্রু সেনাকে নিধন করেছিলেন। তাঁদের হাতে কয়েক হাজার বা অন্তত এক হাজারেরও বেশি ইয়াজিদি সেনা নিহত হয়েছিলেন বলে বর্ণনা রয়েছে।
ইমাম হোসাইন (আ.)-এর ব্যক্তিত্বের কিছু মহান দিক হল পৌরুষত্ব, বীরত্ব, বিচক্ষণতা, মহত্ত্ব, দৃঢ়তা, অটলতা এবং সত্য-প্রেম। ইমাম হোসাইন (আ.) বলেছেন, আমি নিজ কানে রাসূলুল্লাহর (সা.) মুখ থেকে যা শুনেছি তা হলো : ‘‘আল্লাহ বড় ও মহান কাজকে পছন্দ করেন এবং নীচ কাজকে তিনি ঘৃণা করেন।’’
যারা ঈমান ও ইসলামকে বুঝতে পেরেছিলেন এবং তা শিখতে পেরেছিলেন মহানবী (সা)-এর পবিত্র আহলে বাইত থেকে তাদের কাছে তাগুতি শক্তির সঙ্গে আপোষকামীর জীবন ছিল সবচেয়ে ঘৃণার জীবন। কারবালার সেই আদর্শেরই প্রতিফলন দেখা গেছে ইরানের ইসলামী বিপ্লবে। যারা ইসলামের মহাশত্রু ও যারা মুনাফিক তাদেরকে কখনও কোনো বিপ্লবী মুসলমান কোনো ধরনের সুবিধা দিতে ও এমনকি তাদের প্রতি হাসিমুখে কথা বলতেও প্রস্তুত নয়। পবিত্র কুরআনও এটাই শিক্ষা দেয়। বড় শয়তান মার্কিন সরকার ও ইহুদিবাদী ইসরাইলকে এবং তাদের সহযোগী মুনাফিক চক্রকে এ জন্যই সর্বোচ্চ মাত্রায় ঘৃণা করেন বিশ্বের বিপ্লবী মুসলমানরা। তাই কারবালার শহীদদের জন্য অনুরাগ ও শোক প্রকাশেরই আরেকটি দিক হল তাদের বা তাদের আদর্শের শত্রুদের প্রতিও সর্বোচ্চ ঘৃণা করা এবং তাদেরকে অভিশাপ দেয়া ও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা প্রকাশ্যে সবাইকে জানিয়ে দেয়া যাতে মহান আল্লাহও সন্তুষ্ট হন।পার্সটুডে/