ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় পহেলা বৈশাখ উদযাপন
পোস্ট হয়েছে: এপ্রিল ১৬, ২০১৮
ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে ১৪২৫ বঙ্গাব্দকে স্বাগত জানিয়েছে কোটি মানুষ। বর্ষ বরণের এ উৎসবে যোগ দিতে নগরীতে নেমে ছিল মানুষের ঢল। বাঙালির এ উৎসব বর্ণিল হয়ে ওঠে শিশু, যুবাসহ সব শ্রেণীর মানুষের অংশ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে। অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান ছিল এবারের বর্ষ বরণে। পয়লা বৈশাখের আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রমনার বটমূল এলাকা। অনুষ্ঠানে যোগ দেন বাংলাদেশে চাকরির সূত্রে অবস্থান করা বিদেশী নাগরিকেরাও। বিশেষ করে বিদেশী মিশন ও দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ছুটে আসেন রমনা পার্ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। পরনে ছিল লুঙ্গি, ধুতি, পাঞ্জাবি ও ফতুয়া। অনেকে মাথায় বেঁধেছেন গামছা।
ছায়ানটের বর্ষবরণ উপলক্ষে রমনাকে চার দিক থেকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এবার বেশিসংখ্যক নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়ে পার্কে ঢুকতে হয়েছে সবাইকে। তবে এই কড়া নিরাপত্তা উৎসব ও উচ্ছ্বাসে কোনো প্রকার ব্যত্যয় ঘটাতে পারেনি। বর্ষবরণের এ উৎসবে লাল পাড়ের সাদা শাড়িতে নারী এবং বেশির ভাগ পুরুষকে দেখা যায় পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত। উৎসবে যোগ দিতে বাবা-মায়ের হাত ধরে রমনামুখী হয়েছে শিশুরাও। সকাল ৭টার আগেই রমনায় প্রবেশ পথে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয় সর্বস্তরের মানুষকে।
নববর্ষের বার্তা নিয়ে সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। চারুকলা অনুষদের এ বর্ণিল আয়োজনটি রঙে-ঢঙে পায় ভিন্ন এক মাত্রা। তরুণ শিল্পীদের রাত-দিন মননশীল শ্রমে গড়ে ওঠে শোভাযাত্রার নানা অনুষঙ্গ। এবারের শোভাযাত্রার স্লোগান ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’।
বাঙালির এই উৎসবে আনন্দ আর উল্লাসে মেতে ওঠে বাঙালি। রমনা পার্ক থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বাংলা একাডেমি থেকে টিএসসি, প্রেস ক্লাব থেকে শিশু একাডেমি, চারুকলা থেকে শাহবাগ, শিশু পার্ক হয়ে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ছিল বৈশাখপ্রেমী সব ধর্মের, সব বর্ণের, সব মতের মানুষের উপচে পড়া ভিড়। বর্ণিল সব রঙেই সেজেছিল আবালবৃদ্ধবনিতা। গোটা রাজধানী ছিল উৎসবমুখর। মঙ্গল শোভাযাত্রা, নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটক, লাঠিখেলা, পুতুল নাচ, বারোয়ারি মেলাসহ নানা আয়োজন।
আবহমান কাল ধরেই চলছে বৈশাখ বরণের আনুষ্ঠানিকতা। প্রকৃত রূপটি দৃশ্যমান হয় গ্রামে। একসময় গ্রামবাংলায় চৈত্রসংক্রান্তি ছিল প্রধান উৎসব। বছরের শেষ দিনে তেতো খাবার খেয়ে শরীর শুদ্ধ করতেন কিষান-কিষানিরা। নির্মল চিত্তে প্রস্তুত হতেন নতুন বছরে প্রবেশ করার জন্য। এখনো বৈশাখ বরণের অংশ হিসেবে বাড়িঘর ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করেন গৃহিণীরা। দোকানিরাও সে পরিচ্ছন্নতা মেনে চলেন।
কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোগল সম্রাট আকবরের সময়ে। হিজরি চান্দ্রাসন ও বাংলা সৌরসনকে ভিত্তি করে প্রবর্তন হয় নতুন এই বাংলা সন।
১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।
১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথম দিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলা বর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে।
নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে বাণী দিয়েছেন। বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী ও প্রবাসী বাঙালিসহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
জাতীয় প্রেস ক্লাব ও ডিআরইউর বর্ণাঢ্য বর্ষবরণ : জমজমাট অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব বাংলা নববর্ষকে বরণ করেছে। বর্ষবরণে তাদের সদস্য ও পরিবারের জন্য সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বাঙালি খাবার পরিবেশনসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে। সকালের নাশতায় খই, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা, লুচি, সবজি ও পায়েশ এবং দুপুরে মাছ, ভাত, ভর্তাসহ নানা আয়োজন ছিল। সাংস্কৃতিক পর্বে পুতুল নাচ, লাঠি খেলাসহ প্রেস ক্লাব সদস্য ও তাদের ছেলেমেয়েদের পরিবেশিত গান বর্ষবরণ উৎসবকে করেছে প্রাণবন্ত।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির বর্ষবরণ আয়োজনে সদস্য ও পরিবারবর্গের জন্য সকালে লুচি, সবজি, মুড়ি, জিলাপি, কদমা, বাতাসার আয়োজন করা হয়। দুপুরের খাবারে সাদা ভাত, রুই মাছ, শুঁটকি ভর্তা, সবজি, আমডাল, বেগুনভাজি রাখা হয়।