ইস্ফাহান বিশ্ববিদ্যালয়: বিশ্বের সাংস্কৃতিক রাজধানীতে ইরানের বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির কেন্দ্র
পোস্ট হয়েছে: অক্টোবর ২৭, ২০২৫
ইরানের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক শহর ইস্ফাহানে অবস্থিত ‘ইস্ফাহান বিশ্ববিদ্যালয়’ এখন দেশের অন্যতম প্রভাবশালী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছে। বিভিন্ন বিষয়ে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনার সুযোগ দিয়ে এটি বিশ্বের নানা প্রান্তের শিক্ষার্থীদের জন্য এক নির্ভরযোগ্য গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।
পার্সটুডে’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে ১৪টি অনুষদ ও কয়েক ডজন বিভাগে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষা প্রদান করছে। ইস্ফাহানকে প্রায়ই “ইরানের সাংস্কৃতিক রাজধানী” বলা হয় এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ই শহরটির শিক্ষাগত প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র
ইরানের ভৌগোলিক কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের শত শত শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। এখানে বিজ্ঞান, প্রকৌশল, সমাজবিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবস্থাপনা শাখায় বিভিন্ন প্রোগ্রাম ইংরেজি ও ফার্সি—দুই ভাষাতেই পরিচালিত হয়।
২০২০ সালের রাউন্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং (আরইউআর) অনুযায়ী ইস্ফাহান বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের সেরা ১,১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৯১তম স্থান দখল করে। অন্যদিকে, টাইমস হায়ার এডুকেশন র্যাঙ্কিং ২০১৯ র্যাংকিংয়ে ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এটি ৫০১–৬০০ অবস্থানে ছিল।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ ও সহায়তা
বিদেশি শিক্ষার্থীরা এখানে পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, কম্পিউটার বিজ্ঞান, ভূগোল, ভাষাতত্ত্ব, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পড়াশোনা করতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আন্তর্জাতিক সহযোগিতা দপ্তর’ শিক্ষার্থীদের ভিসা, আবাসন, ভাষা প্রশিক্ষণ এবং সাংস্কৃতিক সহায়তা প্রদান করে যাতে তারা নির্বিঘ্নে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থী বিষয়ক পরিচালক সাইয়েদ মাহদি লুতফি জানান, বর্তমানে ১২টি দেশের প্রায় ১,৪০০ বিদেশি শিক্ষার্থী ইস্ফাহান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে।
তিনি বলেন, “আমরা সংখ্যার চেয়ে গুণগত মানকে অগ্রাধিকার দিই। মানসম্মত শিক্ষা ও কল্যাণমূলক সেবা আমাদের সবচেয়ে বড় প্রচার।”
মানবিক শাখার বিষয়গুলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। লুতফি আরও জানান, মেধাবী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়টি বৃত্তি চালু করেছে, যার আওতায় ইতিমধ্যে শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।
শিক্ষার পাশাপাশি এক সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা
ইস্ফাহান বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দর ও সবুজ ক্যাম্পাসটি শহরের এক নিরাপদ ও মনোরম এলাকায় অবস্থিত। এখানে আধুনিক গবেষণাগার, সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, ক্রীড়া কমপ্লেক্স ও ছাত্রাবাসের সুব্যবস্থা রয়েছে।
শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা উপভোগ করতে পারেন ইস্ফাহানের ঐতিহাসিক স্থাপত্য, ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য, এবং শহরের অনন্য সাংস্কৃতিক পরিবেশ— যা শিক্ষাজীবনকে করে তোলে সমৃদ্ধ ও স্মরণীয়।
জ্ঞান ও সংস্কৃতির মিলনভূমি
বর্তমানে ইস্ফাহান বিশ্ববিদ্যালয় ইরানের লেভেল–ওয়ান বা শীর্ষ পর্যায়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম। সাশ্রয়ী ফি, উচ্চমানের শিক্ষা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার অঙ্গীকার নিয়ে এটি বিশ্বের শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাচ্ছে- “আসুন, জ্ঞান, উদ্ভাবন ও সংস্কৃতির সংলাপে যুক্ত হই ইরানের এই আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে।”
পার্সটুডে