বৃহস্পতিবার, ২৭শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

English

ইসলাম কেন ব্যক্তিগত ও সামাজিক দায়িত্ববোধের উপর জোর দেয়?

পোস্ট হয়েছে: নভেম্বর ২৭, ২০২৫ 

news-image

ইসলাম একটি সামাজিক ধর্ম যা মানব জীবনের সব দিক বিবেচনা করে; ব্যক্তি এবং সামাজিক উভয় দিকই। এই ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে এ উভয় দিক বিবেচনা না করে জীবনকে সম্পূর্ণ এবং সুখী করা সম্ভব হবে না।

ইসলাম অন্যান্য অনেক ধর্ম থেকে এই দিক থেকে আলাদা যে এটি জীবনের সামাজিক দিকগুলোর ওপর বেশি জোর দেয় এবং মানুষের সমাজের প্রতি উদাসীন থাকাকে মেনে নেয় না।

ইসলাম ইসলামী সম্প্রদায়কে একটি “ঐক্যবদ্ধ জাতি” হিসেবে বিবেচনা করে, যার অর্থ হল যদি সম্প্রদায়ের একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে অন্যান্য অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামে সামাজিক সংহতির গুরুত্ব তুলে ধরে।

সকল ব্যক্তির সহযোগিতার মাধ্যমেই সমাজ সংস্কার সম্ভব। ইসলাম বিশ্বাস করে যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য জনগণের সরকারের সাথে একসাথে কাজ করা উচিত। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, ব্যক্তি সমাজের প্রতি এবং সমাজ ব্যক্তির প্রতি দায়বদ্ধ, এবং কোনটিই অপরটিকে ছাড়া সম্পূর্ণ নয়। ইসলাম মানুষের মধ্যে ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিবেক জাগ্রত করতে এবং স্বার্থপরতা ও অহংকার প্রতিরোধ করতে চায়।

ইসলামের মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন: “তোমরা সকলেই অভিভাবক ও তোমরা সকলেই তোমাদের সমাজের লোকদের জন্য দায়িত্বশীল।” এর অর্থ হল ইসলামী সম্প্রদায়ের সব সদস্যই দায়িত্বশীল তবে নেতা নন এবং খোদায়ি নেয়ামতগুলোর জন্য এবং অন্যান্য মুসলমানদের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে।

এই হাদিস মানুষের মধ্যে সংহতির চেতনা জাগ্রত করে ফলে মানব জাতি অন্যের বা অন্যদের কষ্টকে সকলের কষ্ট ও অন্যের আনন্দকে সকলের আনন্দ বলে মনে করে। পবিত্র কুরআনেও এই বিষয়টির ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সূরা হাশরের ৯ ও ১০ নং আয়াতে বলা হয়েছে:
যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে মদীনায় বসবাস করেছিল এবং বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালবাসে, মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে সেজন্য তারা অন্তরে ঈর্ষা পোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে অগ্রাধিকার দান করে। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম।

আর এই সম্পদ তাদের জন্যে যারা তাদের পরে আগমন করেছে। তারা বলেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে এবং ঈমানে আগ্রহী আমাদের ভাইদেরকে ক্ষমা করুন এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি দয়ালু, পরম করুণাময়।

এই আয়াত ও বর্ণনাগুলো থেকে বোঝা যায় ইসলাম মানুষের মধ্যে সহানুভূতি, ত্যাগ ও ঐক্যের উপর অত্যন্ত জোর দেয়। আমরা যদি মহানবী (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবীদের জীবনী দেখি, তাহলে আমরা দেখতে পাই যে তারা সর্বদা অন্যদের করুণা ও ভালোবাসার মাধ্যমে পথ দেখিয়েছেন, তাদের পতন থেকে বিরত রেখেছেন এবং তাদের উন্নতি ও মুক্তির জন্য কাজ করেছেন।

এই সংহতি ও বোঝাপড়ার চেতনা মানবিক সমস্যা সমাধানের একটি উপায়। #
পার্স টুডে