শুক্রবার, ৮ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদ

পোস্ট হয়েছে: জুন ১৩, ২০২০ 

 

ড. সাইয়্যেদ মাহদী হোসেইনী ফায়েক –

খ্রিস্টপূর্ব ৭০ সালে উরশেলিম (জেরুসালেম)-এর উপসানালয় ধ্বংস হওয়ার পর খাখামীয় ইহুদিবাদ শান্তির নীতি অবস্থান গ্রহণ করে। এই নীতির মূল লক্ষ্য ছিল ইহুদি সম্প্রদায়ের মুক্তির ব্যবস্থা করা। তারা বিশ^াস করত যে, ইহুদিদের নির্বাসিত জীবন ঈশ^রের ইচ্ছারই প্রতিফলন এবং বনি ইসরাইলের পাপের প্রায়শ্চিত্যস্বরূপ এটি তাদের উপর আরোপিত হয়েছে। এই নীতিভঙ্গি এবং ইহুদি জাতির নির্বাসিত ও ছন্নছাড়া জীবন ঐশ^রিক শাস্তি বলে মনে নেয়ার নীতিকে সামনে রাখলে প্রতীয়মান হয় যে, ইহুদি জাতির মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে, একজন পরিত্রাতা ও মুক্তিদাতা ত্রাণকর্তার আবির্ভাব। তার মাধ্যমেই ঈশ^র ইহুদি জাতিকে তাদের প্রতিশ্রুত ভূখ-ে পুনর্বাসিত করবেন। আর পুরো ব্যাপারটি ঈশ^রের ইচ্ছাতেই সম্পন্ন হবে। ঈশ^রের নির্ধারিত এই নিয়তির উপর কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ এবং পরিত্রাতার আবির্ভাবকে ত্বরান্বিত করার জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা পাপ বলে গণ্য হবে। কাজেই ইহুদিদেরকে ধৈর্যের সাথে সেই দিনের আগমনের অপেক্ষায় থাকতে হবে। যাতে ঈশ^র পরিত্রাতার মাধ্যমে তাদেরকে সে অবস্থা থেকে মুক্তি দান করেন, তাদের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটান এবং উপসানলায়টি পুনঃনির্মিত হয়।
এই সময়টিতেই ইহুদি জাতির কাছে বাদশাহী ফেরত দেয়া হবে। এবং তাদের জীবনের সাফল্য অর্জিত হবে। বস্তুত এই প্রক্রিয়ার উপর মানুষের কোনো হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ হিসেবে বিবেচিত। এবং তাদের সকল জাতীয় ও রাজনৈতিক আশা-ভরসা পরিত্রাতার আবির্ভাব না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। নির্বাসিত জীবনে ইহুদিদের দায়িত্ব হচ্ছে রাজনীতি থেকে দূরে এবং আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় বিষয়াদি নিয়ে ব্যস্ত থাকা। নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক ও সামরিক উপায়-উপকরণ ব্যবহার করা ঈশ^রের ইচ্ছায় হস্তক্ষেপ বলে গণ্য হবে।
এমন পরিস্থিতিতে ঈশ^রের ইচ্ছা হল, ইহুদি জাতিকে অ-ইহুদিদের শাসনাধীন থাকতে হবে। তাদের প্রতি ঐশী আদেশ দেয়া হয়েছে যে, তাদেরকে অ-ইহুদি আইন-কানুনের, এমনকি তা ইহুদি ধর্মীয় বিধানের পরিপন্থী হলেও তার আনুগত্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শুধু তিনটি ব্যতিক্রম আছে। একটি হল ইশ^রকে অস্বীকার করা, মূর্তিপূজা ও যৌন অনাচার। (এগুলোতে অন্যদের আনুগত্য করা বৈধ নয়।)
উল্লিখিত পরিস্থিতিতে ইহুদিদেরকে তাওরাত পাঠ, তাওরাতের বিধান পরিপালন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। অ-ইহুদিদের থেকে বেঁচে থেকে, বিজাতীয় ও বিভ্রান্ত সংস্কৃতি বর্জন করে আপন কওমের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। খাখামীয় তাওরাতের ব্যাখ্যা সূত্রে ইহুদিদের জন্য উপরোক্ত বাধ্যবাধকতা ছাড়াও নির্বাসিত জীবনে আরো তিনটি মৌলিকনীতি মেনে চলতে হবে।
১. ইহুদিরা অ-ইহুদিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারবে না।
২. ত্রাণকর্তার আবির্ভাবের আগে পবিত্র ভূমিতে ইহুদিদের প্রত্যাবর্তন করা নিষেধ।
৩. ইহুদিরা নির্ধারিত সময়ের আগে ত্রাণকর্তার আবির্ভাব ত্বরান্বিত করার জন্য প্রার্থনায় বাড়াবাড়ি করতে পারবে না।
ইহুদি মৌলবাদীদের এই সম্প্রদায়টি এই প্রাচীন নীতিকে আধুনিক ইহুদি জীবনের বৈধতা নির্ণয়ের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। তারা এই মানদ- থেকে যে কোনো ধরনের বিচ্যুতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে। এই দৃষ্টিকোণ থেকেই যায়নবাদী মতবাদ এবং ইসরাঈল রাষ্ট্র তাদের কাছে বিভ্রান্তি হিসেবে বিবেচিত।
নির্বাসিত জীবনে প্রতিশ্রুত ভূখ- ও উপাসনালয় সম্পর্কিত অনেক বিধান কার্যকর করা সম্ভব নয়। ধর্মীয় পুরোধারা ভবিষ্যৎ বাদশাহি সংক্রান্ত থিওরি নির্ধারণ করতে পারবেন। কিন্তু এসব আইন-কানুন নির্বাসিত জীবন চলাকালীন সময়ে যখন ইহুদিরা সংখ্যালঘু হবে, তখন অবশ্য পালনীয় নয়। কাজেই ইহুদি রাজত্ব সম্পর্কিত যাবতীয় হালখায়ী (ইহুদি ধর্মতত্ত্ব সম্বন্ধীয়) আইন-কানুনের বাস্তবায়ন মসীহ এর আগমন না হওয়া পর্যন্ত জমিনের বুকে স্থগিত থাকবে। (সূত্র : তবুফধহ, ২০০৬: ২২৫-২২৮)
বস্তুত ইহুদি সূত্রসমূহ থেকে পাওয়া তথ্যগুলোতে দেখা যায় যে, ইহুদিরাও তাদের ধর্মীয় ও বিশ^াসগত শিক্ষার মূলনীতির ভিত্তিতে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে ভুল পদক্ষেপ ও অবৈধ বলে গণ্য করে। মোটকথা যায়নবাদী সরকার শুধু মুসলমানদের দৃষ্টিতে নয়, বরং ইহুদিদের দৃষ্টিতেও জবরদখলকারী ও অবৈধ সরকার।
লেখক : ডেপুটি কালচারাল কাউন্সেলর
ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ঢাকা