ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ৬৭তম ফারসি ভাষা শিক্ষা কোর্সের উদ্বোধন
পোস্ট হয়েছে: এপ্রিল ১৩, ২০১৭
গত ১২ এপ্রিল ২০১৭ ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মিলনায়তনে ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র পরিচালিত ৬৭তম ফারসি ভাষা শিক্ষা কোর্সের উদ্বোধনী ও ৬৬তম কোর্সের সনদপত্র ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. ইফফাত আরা নাসরীন মাজিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সভাপতি ড. আবদুস সবুর খান। অনুষ্ঠানে প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. কুলসুম আবুল বাশারসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক মিসেস শামীম বানু, নতুন ও পুরাতন কোর্সের ছাত্রছাত্রীবৃন্দ ও অন্যান্য অতিথিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর জনাব সাইয়্যেদ মূসা হোসেইনী।
অধ্যাপক ড. ইফফাত আরা মাজিদ বলেন, ফারসি খুবই মিষ্টি ভাষা। এই ভাষাটি আমার কাছে নতুন নয়। স্কুল জীবনে দুটি বছর আমি ফারসি ভাষা শিখেছিলাম। তারপর দীর্ঘ ৪৫ বছর পর ফারসির আসরে বসে আবারো সেসব মনে পড়ছে।
তিনি বলেন, যাঁরা ফারসি ভাষা শেখেন ও চর্চা করেন তাঁরা মূলত ইরান ও ফারসির প্রতি ভালোবাসা থেকেই এটি করেন। বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য তাঁরা এটি চর্চা করেন না। আর বাণিজ্যিকভাবে শিখলে সেটির চর্চাও থাকে না। তাই আমি অনুরোধ করব যাঁরা এ ভাষা শিখছেন তাঁরা পুরোপুরি তা আয়ত্ব করুন। তাহলেই আপনারা আরো এগিয়ে যেতে পারবেন। আর এ ব্যাপারে আমার পরামর্শ হলো আপনারা বেশি করে ফারসি গল্পের বই পড়–ন। এটি খুবই কার্যকর একটি পদ্ধতি।
তিনি আরো বলেন, ভাষা শিখায় লাভ ছাড়া কোন ক্ষতি নেই। কোন না কোন সময় তা কাজে আসবেই। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ সরকারের একটি উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ সরকার ৬৪টি জেলায় ১০টি ভাষা শিক্ষা দেয়ার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে শিক্ষকের ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে ভাষা শিক্ষার ব্যাপারে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটে বিভিন্ন ভাষা শিক্ষা কোর্সে এ বছর ৬০০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও শিক্ষা বিভাগ ও ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে ফারসি ভাষা শিক্ষা কোর্স ও অন্যান্য কর্মসূচি প্রণয়ন করার সম্ভাবনার বিষয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ড. কুলসুম আবুল বাশার বলেন, ফারসি ভাষার সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব ছাত্রকে ফারসি ভাষা শিক্ষা দিয়েছি আজ তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সুনামের সাথে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করছে, এ বিষয়টি আমার জন্য একটি গৌরবের বিষয়। একই সাথে ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রেও দীর্ঘদিন ফারসি ভাষা কোর্সের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি যা আমার কাছে অত্যন্ত আনন্দের বিষয়।
ড. আবদুস সবুর খান বলেন, ফারসি ভাষা শেখার জন্য খুব বেশি বেগ পেতে হয় না। তিনি এ প্রসঙ্গে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার কথা উল্লেখ করে বলেন, স্কুল-কলেজে বারো বছর ইংরেজি অধ্যয়ন করেও ছাত্ররা ইংরেজিতে তেমন কথা বলতে পারে না, অথচ একটি বছর ফারসি অধ্যয়ন করে ছাত্রছাত্রীরা ফারসিতে কথা বলতে পারে। তিনি বলেন, প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক সকল যুগেই ইরান বিশ্বসভ্যতায় নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে। তাই অর্থ উপার্জনের জন্য ফারসি ভাষা শিক্ষা না করে ভালোবাসার জন্য এবং মানবতা, সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে জানার জন্য ফারসি ভাষা শিক্ষা করতে হবে।
জনাব সাইয়্যেদ মূসা হোসেইনী অনুষ্ঠানের শুরুতে উপস্থিত সকলকে ইরানি নওরোজ ও বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ভ্রাতৃপ্রতিম এই দুই দেশের নববর্ষ উদ্যাপনের ক্ষেত্রে বেশ মিল রয়েছে। যেমন এ দিনে পরস্পরের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা, উপঢৌকন দেয়া, বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন ইত্যাদি। তিনি বলেন, এ অনুষ্ঠানের আরেকটি উপলক্ষ হলো ইরানি নওরোজ উপলক্ষে গত ২৪ মার্চ ২০১৭ বিএমএ অডিটোরিয়ামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের যেসব ছাত্রছাত্রী সাংস্কৃতিক পর্বে অংশগ্রহণ করেছে তাদেরকে সম্মাননা দেয়া।
ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র পরিচালিত ৬৬তম ফারসি ভাষা শিক্ষা কোর্সের শিক্ষকগণ ও কোর্সে অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীরা দীর্ঘ কয়েকমাস ধরে যে পরিশ্রম করেছেন সেজন্য তিনি তাঁদেরকে অভিনন্দন জানান। তিনি ৬৭তম কোর্সটিও যেন সাফল্যের সাথে সম্পন্ন হয় সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে ফারসি ভাষায় বক্তব্য রাখে সিনিয়র কোর্সের ছাত্র বাদল মিয়া ও ডিপ্লোমা কোর্সের ছাত্র আবু সালেহ। ডিপ্লোমা কোর্সের ছাত্রী সিফাত-ই-ইলাহী ফারসি ভাষায় মহাকবি ইকবালের একটি কবিতা থেকে আবৃত্তি করে। সবশেষে জুনিয়র ও সিনিয়র কোর্সে কৃতকার্যদের মধ্যে সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়। একই সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের যেসব ছাত্রছাত্রী ইরানি নওরোজ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পর্বে অংশগ্রহণ করেছিল তাদেরকে সম্মাননা ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।