ইমাম বাকের (আ.)-এর দৃষ্টিতে জ্ঞান অন্বেষণের মূল্য
পোস্ট হয়েছে: এপ্রিল ২২, ২০১৮
ইমাম বাকের (আ.)-এর দৃষ্টিতে জ্ঞান অন্বেষণের মূল্য
ফায়েয কারিমী :
আহলে বাইতের পঞ্চম ইমাম মুহাম্মাদ আবু জাফর আল বাকের (আ.) ৫৭ হিজরির রজব মাসের ১ তারিখে তাঁর জন্মের মাধ্যমে বিশ্বকে আলোকিত করেছিলেন। তিনি জ্ঞানের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক মূল্যবান কথা বলেছেন এবং মুসলমানদেরকে জ্ঞান অন্বেষণের আহ্বান জানিয়েছেন যেহেতু এটিই হলো প্রথম স্তম্ভ যার ওপর জাতিসমূহ ও লোকজনের জীবনযাত্রা নির্ভর করে। তিনি জ্ঞানী ও পণ্ডিত ব্যক্তিদেরও প্রশংসা করেছেন, যেহেতু তাঁরা হলেন সমাজের কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও পথনির্দেশনা দানের উৎস। এই বিষয়ে তাঁর থেকে বর্ণিত কয়েকটি বাণী এখানে তুলে ধরা হলো।
১. জ্ঞানের প্রশংসা
ইমাম আবু জাফর আল বাকের (আ.) জ্ঞানের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন : ‘জ্ঞান অর্জন কর, যেহেতু জ্ঞান হলো রক্ষক। জ্ঞান অন্বেষণ করা ইবাদত, এর অধ্যয়ন (আল্লাহর) প্রশংসা, এর প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হলো জিহাদ, এটি (অন্যদেরকে) শিক্ষাদান হলো সাদাকাহ এবং উপযুক্ত ব্যক্তিকে তা দান করা হলো (মহান আল্লাহর) নৈকট্য।’
জ্ঞান হলো বাগানের নির্দেশক স্তম্ভ। এটি একাকীত্বের ঘনিষ্ঠজন, নির্বাসিত অবস্থার সাথি, বিরহে বন্ধু, উপশমকারী পথপ্রদর্শক, বিপদে সাহায্য (কারী), বন্ধুদের সাথের ভূষণ এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে অস্ত্র। এর দ্বারা আল্লাহ কিছুসংখ্যক ব্যক্তিকে উত্তম ব্যক্তিদের নেতা করেন। সুতরাং (মানুষজন) তাদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে এবং তাদের কর্মসমূহের আলোচনা করে। সকল সিক্ত ও শুষ্ক জিনিস, সাগরের তিমি ও কীটমূষিকাদি এবং জমিনের পশুপাখি তাদের জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করে।’ (ইবনে হামাদান, আততাযকিরা, পৃ. ২৬)
এসকল বাণী যেভাবে জ্ঞানকে মহিমান্বিত, জ্ঞানী ও পণ্ডিতদের প্রশংসা এবং জ্ঞানের উপকারিতাসমূহ বর্ণনা করতে পারে তা অন্য কোন বাণীই পারে না। সুতরাং এই কথাগুলো জ্ঞান-গবেষণার স্থান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে লেখার জন্য সবচেয়ে যোগ্য।
২. জ্ঞানী ও পণ্ডিত ব্যক্তিদের প্রশংসা
ইমাম বাকের (আ.) জ্ঞানী ও পণ্ডিত ব্যক্তিদের প্রশংসা করেছেন। ইমাম বাকের (আ.) বলেন : ‘যে পণ্ডিত ব্যক্তির জ্ঞান (মানুষজন) ব্যবহার করে সে সত্তর হাজার ইবাদতকারীর চেয়ে উত্তম।’ (জামি বায়ানুল ইল্ম ওয়া ফাযলাহ, ১ম খ-, পৃ. ৩২)
ইমাম বাকের (আ.) বলেন : ‘যে কেউ হেদায়াতের একটি প্রবেশপথের শিক্ষা দেয়, সে যে ব্যক্তি তা বাস্তবায়ন করে তার মতো পুরস্কার পাবে। তাদের (যারা পথনির্দেশের বাস্তবায়ন করে) পুরস্কার থেকে কিছুমাত্র কম করা হবে না। (আর) যে কেউ ভ্রষ্টতার একটি প্রবশেপথের শিক্ষা দেয় তার জন্য রয়েছে যারা তা বাস্তবায়ন করে তাদের মতো বোঝা। তাদের (যারা ভ্রান্ত বিষয়কে বাস্তবায়ন করে) থেকে কিছুমাত্র কম করা হবে না।’ (উসুলে কাফী, ১ম খ-, পৃ. ৩৪)
ইমাম বলেন : ‘যে বান্দা প্রত্যুষে জ্ঞান অন্বেষনে বের হয় সে পুরোপুরিভাবে রহমতের মধ্যে প্রবেশ করে।’ (নাসিখ আত-তাওয়ারিখ, ২য় খ-, পৃ. ২০৫)
৩. প-িত ও ধার্মিক ব্যক্তিবর্গের সাথে সহযোগিতা
ইমাম বাকের (আ.) মুসলমানদেরকে পণ্ডিত ও ধার্মিক ব্যক্তিবর্গের পথনির্দেশ ও আচরণকে কাজে লাগানোর জন্য তাঁদের সাথে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন : ‘নিশ্চয়ই যাকে আমি বিশ্বাস করি তার সাথে সহযোগিতা আমার কাছে এক বছরের কাজের চেয়েও নির্ভরযোগ্য।’ (উসুলে কাফী, ১ম খ-, পৃ. ৩৪)
৪. জ্ঞানের আলোচনা
ইমাম বাকের (আ.) মুসলমানদেরকে পরস্পরের সাথে জ্ঞানের আলোচনা করতে উপদেশ দিয়েছেন। কারণ, তা জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন নতুন দরজা উন্মোচন করে। তিনি বলেন : ‘জ্ঞানের আলোচনা হলো অধ্যয়ন, আর অধ্যয়ন হলো উত্তম ইবাদত।’ (উসুলে কাফী, ১ম খ-, পৃ. ৪১)
৫. ছাত্রদের জন্য উপদেশ
ইমাম বাকের (আ.) ছাত্রদের জন্য চমৎকার নিয়ম-কানুনের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন : ‘যখন তুমি একজন পণ্ডিতের সাথে বসবে তখন তার সাথে কথা বলার চেয়ে তার কথা অধিক শ্রবণ করবে। ভালোভাবে শ্রবণ করা শিক্ষা কর যাতে তুমি ভালোভাবে বক্তব্য প্রদান করা শিক্ষা করতে পার। যখন সে বক্তব্য দেয় তখন তাকে বাধাগ্রস্ত করো না।’ (নাসিখ আত-তাওয়ারিখ, ২য় খ-, পৃ. ২০৫)
৬. জ্ঞানের প্রচার
ইমাম বাকের (আ.) পণ্ডিতদেরকে জ্ঞানের প্রচার ও বিস্তৃতি ঘটানোর উপদেশ দিয়েছেন, যাতে কেউ অজ্ঞ না থাকে। তিনি বলেন : ‘জ্ঞানের যাকাত হলো তুমি আল্লাহর বান্দাদেরকে তা শিক্ষা দেবে।’ (উসুলে কাফী, ১ম খ-, পৃ. ৪১)
তিনি আরো বলেন : ‘যে জ্ঞান শিক্ষা করে সে তার মতো পুরস্কার পাবে যে তা শিক্ষাদান করে, এবং তার চেয়ে উত্তম হবে। পণ্ডিতদের নিকট থেকে জ্ঞান শিক্ষা কর। অতঃপর তা তোমার ভাইদেরকে শিক্ষা দাও যেভাবে পণ্ডিত ব্যক্তিরা তা তোমাকে শিক্ষা দিয়েছে।’ (নাসিখ আত-তাওয়ারিখ, ২য় খ-, পৃ. ২০৫)
৭. মুসলমানদেরকে জ্ঞান শিক্ষা করার আহ্বান
ইমাম বাকের (আ.) মুসলমানদেরকে জ্ঞান শিক্ষা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন এবং এ সম্পর্কে জ্ঞানী ব্যক্তিদেরকে জিজ্ঞাসা করতে বলেছেন। তিনি বলেন : ‘জ্ঞান হলো গুপ্তভাণ্ডার এবং এর চাবি হলো প্রশ্ন করা। অতঃপর, আল্লাহ তোমাদের ওপর রহম করুন, জিজ্ঞাসা কর (পণ্ডিতদের)। নিশ্চয়ই চার ব্যক্তি জ্ঞানের কারণে পুরস্কৃত হবে : প্রশ্নকারী, বক্তা, শ্রোতা এবং যে তাদেরকে ভালোবাসে।’ (আল খিসাল, পৃ. ২২৩)