ইমাম জাফর সাদিক (আ.)
পোস্ট হয়েছে: জানুয়ারি ৯, ২০২১
সংকলন ও অনুবাদ : মো. আশিফুর রহমান –
ভূমিকা : আহলে বাইতের ষষ্ঠ ইমাম জাফর সাদিক (আ.) ১৪৮ হিজরিতে পবিত্র মদীনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ৩৪ বছর ইমামতের দায়িত্ব পালন করেন।
পিতামাতা : ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর পিতার নাম ছিল ইমাম মুহাম্মাদ আল বাকের (আ.) ও মাতার নাম ছিল হযরত ফারওয়া।
কুনিয়া ও উপাধি : ইমামের কুনিয়া ছিল আবু আবদুল্লাহ। কোনো কোনো সূত্রে তাঁর কুনিয়া আবু ইসমাইল (যেহেতু তাঁর বড় ছেলের নাম ছিল ইসমাইল) ও আবু মূসা (তাঁর জীবিত পুত্র মূসা কাযিম) হিসেবেও বর্ণিত হয়েছে।
তাঁর প্রসিদ্ধ উপাধি হচ্ছে আস-সাদিক যার অর্থ সত্যবাদী। একটি হাদিস অনুসারে, মহানবী (সা.) স্বয়ং তাঁর এই উপাধি বলে গিয়েছিলেন যাতে ‘জাফর আলকায্যাব’ থেকে পৃথক করা যায়।- সাদুক, কামালুদ্দীন, পৃ. ৩১৯
যাহোক, ইতিহাসের বিশ্লেষণ অনুযায়ী ইমাম সাদিক (আ.) এই উপাধি পেয়েছিলেন এজন্য যে, তিনি তাঁর সময়ের যে কোনো বিদ্রোহ থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিলেন। ওই সময়ে যে কেউ শাসকদের বিরুদ্ধে লোকদেরকে জমায়েত করত ও বিদ্রোহে প্ররোচনা দিত তাদেরকে ‘কায্যাব’ বলা হতো।
এই উপাধি কেবল তাঁর জন্যই ব্যবহৃত হতো। কয়েকজন সুন্নি পণ্ডিত, যেমন মালিক বিন আনাস, আহমাদ বিন হাম্বাল এবং আল জাহিয ইমাম জাফর সাদিককে এই উপাধি দ্বারাই উল্লেখ করেছেন।
ইমাম সাদিকের অন্যান্য উপাধির মধ্যে রয়েছে আস-সাবির, আত-তাহির এবং আল-ফাযিল।
জীবনকাল
ইমাম সাদিক (আ.) তাঁর জীবনের বারো বছর তাঁর দাদা ও ত্রিশ বছর তাঁর পিতার সান্নিধ্যে কাটান। ইমাম জাফর সাদিক (আ.) দশ জন উমাইয়্যা খলিফা ও দুই জন আব্বাসী খলিফার সমসাময়িক ছিলেন।
ইমাম সাদিক (আ.) তাঁর পিতার সাথে সিরিয়ায় গমন করেন যখন হিশাম ইবনে আবদুল মালিক ইমাম বাকের (আ.)-কে সিরিয়া ডেকে পাঠায়।
ইমাম সাদিক (আ.)-এর ইমামতকালে উমাইয়্যা খেলাফত পতনোন্মুখ হয়েছিল এবং অবশেষে পতনও ঘটে আর আব্বাসীরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। শাসকবর্গের দুর্বলতা ইমামের শিক্ষা বিস্তারে সুযোগ সৃষ্টি করে। তুলনামূলকভাবে এই উন্মুক্ত অবস্থা দ্বিতীয় শতাব্দীর একটি অংশে বিস্তৃত ছিল। কিন্তু এর আগে ইমাম ও তাঁর অনুসারীরা উমাইয়্যাদের পক্ষ থেকে ভীষণ চাপের মধ্যে ছিলেন। মুহাম্মাদ আন-নাফসে যাকীয়াহ এবং তাঁর ভাই ইবরাহীমের বিদ্রোহের পরও ইমাম প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ছিলেন।
ইমাম জাফর সাদিকের ইমামতকাল ৩৪ বছর স্থায়ী হয়েছিল। মানসুর দাওয়ানিকির শাসনকালের দশ বছর পর ইমাম শহীদ হন। ইমাম সাদিক খলিফা মানসূর কর্তৃক ইরাকে নীত হন এবং সেখানে কিছুকাল বসবাস করতে বাধ্য হন।
ইমামতের প্রমাণ
কয়েক ব্যক্তি ইমাম বাকের (আ.)-এর নিকট থেকে তাঁর সন্তান ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর জন্য ইমামতের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে বর্ণনা করেছেনÑ যাঁদের মধ্যে রয়েছেন হিশাম বিন সালিম, আবুল সাবাহ আল কানানী, জাবির ইবনে ইয়াযীদ আল জুফী এবং আবদুল আলা মাওলা আল শাম।
শেখ মুফীদ বলেন, ইমাম বাকের (আ.) কর্তৃক ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর ইমামতের বিষয়টি বলে যাওয়া ছাড়াও তাঁর ভাইদের, তাঁর চাচাতো ভাইদের ও অন্য মানুষদের ওপর তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব এবং তাঁর জ্ঞানগত প্রতিভা, ধার্মিকতা এবং ধর্মপরায়ণতা ইত্যাদি তাঁর ইমামতের প্রমাণ বহন করে।
প্রতিনিধি নিয়োগ
যেহেতু আহলে বইতের অনুসারী মুসলমানরা মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করতো এবং ইমামের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করাটা তাদের জন্য খুব কষ্টকর ছিল তাই ইমাম সাদিক (আ.) বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগের পদ্ধতি চালু করেন যারা খুম্স, যাকাত ও অন্যান্য অনুদান ও উপঢৌকন ইমামের কাছে পৌঁছে দিতেন। তারা বিভিন্ন বিষয়ে জনসাধারণের প্রশ্নসমূহ ইমামদের কাছে নিয়ে আসতেন এবং সেগুলোর জবাবও জনগণের কাছে পৌঁছে দিতেন।- জাব্বারী, সাজমান-ই ওয়াকালাত-ই আইম্মা, ১ম খ-, পৃ. ২৮০, ৩২০, ৩২২
পরবর্তীকালে এই প্রতিনিধি নিয়োগের ধারা আলী বিন মুহাম্মাদ আল সামারীর মৃত্যু পর্যন্ত অব্যাহত থাকে যিনি ইমাম মাহদী (আ.)-এর চতুর্থ সরাসরি প্রতিনিধি ছিলেন।- জাব্বারী, বাররাসীয়ে সাজমানে দাওয়াতি আব্বাসীয়ান, পৃ. ৭৫-১০৪
গুলাতের বিরোধিতা
ইমাম বাকের (আ.) ও ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর সময় গুলাতরা তাদের কর্মকা- বিস্তৃত করে ফেলে। তারা বিশ্বাস করত ইমামরা খোদা অথবা নবী। ইমাম সাদিক (আ.) শক্তভাবে এই মতবাদের বিরোধিতা করেন। তিনি তাঁর অনুসারীদেরকে গুলাতদের সাথে মিশতে নিষেধ করতেন এবং তাদেরকে কাফির হিসেবে ঘোষণা করেন। তাদের সম্পর্কে ইমাম বলেন, ‘তাদের সাথে সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করো না, তাদের সাথে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করো না এবং তাদের সাথে মুসাফাহা করো না।’ ইমাম হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন : ‘সতর্ক থেক, গুলাতরা যেন তোমাদের যুবকদেরকে বিপথে না নিতে পারে। তারা আল্লাহর সবচেয়ে নিকৃষ্ট শত্রু। তারা আল্লাহকে তুচ্ছ গণ্য করে, কিন্তু আল্লাহর বান্দাদের ওপর প্রভুত্বের বৈশিষ্ট্য আরোপ করে।’- তূসী, আল আমালী, পৃ. ৬৫০
জ্ঞানগত আন্দোলন
উমাইয়্যাদের দুর্বলতার কারণে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) শিক্ষাদান ও সামাজিক কর্মকা- করার জন্য অপেক্ষাকৃত অধিক সুযোগ লাভ করেন। ইমামদের সময়ে এমনটি খুবই দুর্লভ বিষয় ছিল। আর তাই আহলে বাইতের অধিকাংশ হাদিস ইমাম জাফর সাদিক (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে।
ইবনে হাজার হাইসামীর অভিমত অনুযায়ী, মানুষ তাঁর নিকট থেকে বিপুল পরিমাণ জ্ঞান অর্জন করে ও প্রচার করে এবং তাঁর সুখ্যাতি বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়ে। আল-জাহিয বলেন যে, তাঁর জ্ঞান এবং ফিকাহ্শাস্ত্র বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। আল হাসান বিন আলী আল ওয়াসসা বর্ণনা করেন যে, কুফার মসজিদে নয় শত লোক ইমাম জাফর সাদিক (আ.) থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।- নাজাশী, রিজাল আল নাজাশী, পৃ. ১২
আহলে বাইতের মাযহাব
আহলে বাইতের অধিকাংশ হাদিস, তা ফিকাহ বিষয়ে হোক, অথবা ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কিত, ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে এবং তাঁর নিকট থেকে হাদিস বর্ণনাকারীদের সংখ্যা চার হাজার পর্যন্ত বলা হয়েছে (ইরবিলির অভিমত)- যা অন্য যে কোনো ইমাম থেকে বর্ণিত হাদীসের চেয়ে অনেক বেশি। আবান ইবনে তাগলিবের মতে, আহলে বাইতের অনুসারীরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কোনো বাণীর বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করলে সেক্ষেত্রে আলী (আ.)-এর বাণী দেখত, তেমনিভাবে যখন ইমাম আলী (আ.)-এর বাণীর বিষয়ে মতানৈক্য করত তখন তারা ইমাম সাদিক (আ.)-এর বাণীর দিকে লক্ষ্য করত।
ইসলামি শিক্ষার ব্যাপক বিস্তারে ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার জন্য আহলে বাইতের অনুসারীদেরকে জাফরী মাযহাবের অনুসারী বলা হয়।
বুদ্ধিবৃত্তিক সংলাপ ও বিতর্ক
আহলে বাইতের হাদিস সংকলনে কিছু সংখ্যক পারস্পরিক সংলাপ ও বিতর্কের বিষয় লিপিবদ্ধ হয়েছে যা ইমাম সাদিক (আ.) এবং অন্যান্য মাযহাবের পণ্ডিত এবং কতিপয় নাস্তিকের সাথে সংঘটিত হয়েছিল। কিছুসংখ্যক বিতর্কে ইমামের শিষ্যগণ অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং ইমাম তা অবলোকন করেছিলেন। কখনও কখনও ইমাম নিজেই বিতর্কে অংশ নিতেন।- কুলাইনী, আল-কাফী, ১ম খ-, পৃ. ৭৯, ৮০, ১৭১-১৭৩
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দামেশকের একজন পণ্ডিতের সাথে ইমামের শিষ্যদের বিতর্কের অুনরোধ করা হলে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) হিশাম বিন সালিমকে ধর্মতত্ত্বের বিষয়ে তার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার নির্দেশ দেন।৪৯ প্রাগুক্ত
অন্য একটি ঘটনায় দেখা যায়, এক ব্যক্তি তাঁকে বিতর্কের আহ্বান জানালে ইমাম প্রথমে তাঁর শিষ্যের সাথে তাকে বিতর্ক করার জন্য বলেন। সেই ব্যক্তি হুমরান বিন আয়ানের সাথে কোরআনের বিষয়ে, আবান বিন তাগলিবের সাথে আরবি সাহিত্যের বিষয়ে, যুরারাহর সাথে ফিকাহ বিষয়ে এবং মুমিন তাক ও হিশাম বিন সালিমের সাথে ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে বিতর্ক করে এবং তাদের সকলের কাছে পরাজিত হয়।- কাশশী, রিজাল, পৃ. ২৭৫-২৭৭
আহমাদ বিন আলী আল তাবরিযী ইমাম সাদিক (আ.)-এর কিছুসংখ্যক বিতর্কের সংকলন করেন যেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো :
১. আল্লাহর অস্তিত্বের বিষয়ে একজন নাস্তিকের সাথে বিতর্ক,
২. আবু শাকির আল দায়সানির সাথে আল্লাহর অস্তিত্বের বিষয়ে বিতর্ক;
৩. ইবনে আবিল আওযার সাথে আল্লাহর অস্তিত্বের বিষয়ে বিতর্ক;
৪. ইবনে আবিল আওযার সাথে বিশ্বের সৃষ্টি নিয়ে বিতর্ক;
৫. একজন নাস্তিকের সাথে ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘ বিতর্ক;
৬. ইমাম আবু হানিফার সাথে উসূলে ফিকহ্ নিয়ে বিতর্ক;
৭. কয়েকজন মুতাযিলী প-িতের সাথে শাসককে বেছে নেয়া ও কিছু ধর্মীয় নিয়ম-কানুন নিয়ে বিতর্ক।
এই বিতর্কগুলোর অধিকাংশই আল্লামা তাবারসীর ‘আল-ইহতিজাজ’ গ্রন্থের ২য় খ-ে ৩৩১ পৃষ্ঠা থেকে ৩৬৪ পৃষ্ঠা পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছে।
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড
ইমাম সাদিক (আ.)-এর জীবনী পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, তিনি রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতেন এবং এই অবস্থান উমাইয়্যা ও আব্বাসী উভয় শাসনামলে একই রকম ছিল। যদিও তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকতেন, কিন্তু সমাজের প্রতি এবং এর গন্তব্য সম্পর্কে খুবই মনোযোগী ছিলেন। তিনি শাসকদেরকে শাসনকার্যে ন্যায়নীতি বজায় রাখার উপদেশ দিতেন, মানুষের সাথে পরামর্শ এবং তাদের অনুরোধ রক্ষার জন্য উপদেশ দিতেন।
সেই সময়ে উমাইয়্যা শাসকদের দুর্বলতা সত্ত্বেও তিনি বিদ্রোহ ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থেকে দূরে থাকতেন। শাহরেস্তানীর মতে, আবু মুসলিম খোরাসানী ইবরাহীম আল ইমামের মৃত্যুর পর ইমাম সাদিকের কাছে একটি চিঠি প্রেরণ করেন এই কথা বলে যে, তিনিই খেলাফতের সবচেয়ে যোগ্য এবং তিনি যেন খেলাফতের পদ গ্রহণ করেন। ইমাম এর জবাবে লিখেন : ‘তুমি আমার অন্যতম সাহায্যকারী নও, আর এই সময়টিও আমার নয়।’- শাহরিস্তানী, আল মিলাল ওয়ান নিহাল, ১ম খ-, পৃ. ১৭৯
আবু সালামাও ইমামের নিকট এই রকম পত্র প্রেরণ করেন আর ইমাম তা পুড়িয়ে ফেলেন।- মাসউদী, মুরুযুয যাহাব, ৩য় খ-, পৃ. ২৫৪
ইমাম সাদিক (আ.) তাঁর চাচা যায়েদ বিন আলীর সাথে বিদ্রোহে যোগ দেন নি। একটি হাদিস থেকে জানা যায়, যথেষ্ট সংখ্যক বিশ্বস্ত সমর্থক না থাকায় ইমাম বিদ্রোহগুলোতে যোগ দেন নি।- ইবনে শাহরাশুব, মানাকিব আল আবি তালিব, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ২৩৭
আবদুল্লাহ আল মাহাযের সাথে মতানৈক্য
উমাইয়্যা শাসনের শেষের দিকে বনু হাশিমের কতিপয় ব্যক্তি-যাদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল মাহায ও তার সন্তানও ছিল-এবং আস সাফফাহ এবং আল মানসূর আবওয়া নামক স্থানে জমায়েত হয়েছিল নিজেদের মধ্যে কারো হাতে বাইয়াত করার জন্য। সেই সমাবেশে আবদুল্লাহ তার সন্তানকে ‘আল মাহদী’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং অন্যদেরকে তার হাতে বাইয়াত গ্রহণের আহ্বান জানায়। যখন ইমাম সাদিক (আ.) তাদের মনোভাব সম্পর্কে অবহিত হন তখন তিনি আবদুল্লাহকে বলেন, ‘যদি তুমি তোমার সন্তানকে মাহদী মনে কর (তাহলে তুমি ভুল করেছ, আসলে) সে আল মাহদী নয় এবং আল মাহদীর আগমনের সময় এখনও হয় নি।’ আবদুল্লাহ একথা শুনে রাগান্বিত হয় এবং ইমামকে হিংসার অভিযোগে অভিযুক্ত করে। ইমাম সাদিক (আ.) কসম করে বলেন, তাঁর কথা হিংসাপ্রসূত নয় এবং তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, আল সাফফাহ ও আল মানসূর শাসক হবে এবং আবদুল্লাহ ও তার সন্তানকে হত্যা করা হবে।- আবুল ফারায আল-ইসফাহানী, মাকতালুত তালিবিয়্যীন, পৃ. ১৮৫-১৮৬
খলিফাদের সাথে সম্পর্ক
যদিও ইমাম সাদিক (আ.) তাঁর সময়ের খলিফাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে অস্বীকার করেন, কিন্তু খলিফাদের সাথে তাঁর সম্পর্ক মোটেও ভালো ছিল না। একবার হজের মৌসুমে তিনি আহলে বাইতকে আল্লাহর মনোনীত হিসেবে ঘোষণা করেন এবং খলিফা হিশাম বিন আবদুল মালিকের আহলে বাইতের প্রতি শত্রুতার কথা উল্লেখ করেন।- মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ৪৬তম খ-, পৃ. ৩০৬
একবার আব্বাসী খলিফা মানসূর দাওয়ানিকি অন্য লোকেরা যেমন তার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য যায় ইমামকেও তেমন তার সাথে সাক্ষাৎ করা জন্য যাওয়ার আহ্বান জানালে ইমাম লিখে পাঠান- তোমাকে ভয় করার জন্য আমাদের তেমন কিছু নেই, পরকালে তোমার কিছু নেই যার জন্য তোমার কাছে আমাদের কিছু আশা থাকতে পারে, আর তুমি নেয়ামতের মধ্যেও নও যার জন্য তোমাকে অভিনন্দন জানানো যায়…- মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ৪৭তম খ-, পৃ. ১৮৪
ইমাম সাদিক (আ.)-এর বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া
একটি বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, যখন হাসান বিন যায়েদ মক্কা ও মদীনার গভর্নর ছিল সেসময় একবার ইমাম সাদিক (আ.)-এর বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আগুনে বাড়ির দরজা ও করিডোর পুড়ে যায়। ইমাম সাদিক (আ.) আগুনের ভেতর দিয়ে এ কথা বলতে বলতে বের হয়ে আসেন : ‘আমি পৃথিবীর মূলের সন্তান (অর্থাৎ ইসমাইল আ.-এর সন্তান); আমি আল্লাহর বন্ধু ইবরাহীমের সন্তান।’- কুলাইনী, আল-কাফী, ১ম খ-, পৃ. ৪৭৩
দ্বিতীয় হিজরি শতাব্দীর তৃতীয় দশকের কিছুটা সময় বাদে পুরো সময়টি ইমাম উমাইয়্যা ও আব্বাসী খলিফাদের কঠোর নজরদারির মধ্যে ছিলেন। ইমামের ওপর রাজনৈতিক চাপ চরমে পৌঁছেছিল।- জাফারীয়ান, হায়াতি ফিকরী সিয়াসীয়ে ইমামানে শিয়া, পৃ. ৪৩৫
কিছু কিছু বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, মানসুরের গুপ্তচররা ইমামের সাথে যেসব ব্যক্তি যোগাযোগ রাখত তাদেরকে নির্যাতন করত, এমনকি অনেককে হত্যাও করত। এতে ইমাম ও তাঁর অনুসারীদেরকে খুব সতর্ক হয়ে চলতে হতো।
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অনেক কিছু বর্ণিত হয়েছে, যেমন তাঁর বদান্যতা, ইবাদত-বন্দেগি, কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি। মালিকি মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা মালিক বিন আনাস বর্ণনা করেন যে, যখনই তিনি ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর সাথে দেখা করতে যেতেন তখন তাঁকে তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি অবস্থায় পেতেনÑ নামায পড়া, রোযা রাখা অথবা আল্লাহর যিকির করা।- মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ৪৭তম খ-, পৃ. ১৬
বর্ণিত হয়েছে যে, একবার ইমাম একজন ভিক্ষুককে চারশ’ দিরহাম ভিক্ষা দেন। ভিক্ষুকটি ইমামের প্রশংসা করলে ইমাম তাঁর হাতের আংটি সেই ভিক্ষুককে দিয়ে দেন যার মূল্য ছিল দশ হাজার দিরহাম।- মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার ৪৭তম খ-, পৃ. ৬১
বর্ণিত হয়েছে যে, ইমাম সবসময় কিছু রুটি ও মাংস এবং টাকা-পয়সা একটি থলেতে নিয়ে বিভিন্ন বাড়িতে যেতেন এবং তাদের মধ্যে সেগুলো বণ্টন করতেন। এসময় তিনি নিজের পরিচয় গোপন রাখতেন।- কুলাইনী, আল-কাফী, ৪র্থ খ-, পৃ. ৮
ইরাক সফর
আব্বাসী খলিফা সাফফাহ ও আল মানসূরের শাসনকালে ইমামকে কয়েকবার বাগদাদে নিয়ে যাওয়া হয়। এই সময়ে তিনি কারবালা, নাজাফ, কুফা ও হিরাও সফর করেন। মুহাম্মাদ বিন মারুফ আল হিলালির বর্ণনা অনুযায়ী, যখন ইমাম হিরা সফর করেন তখন বিপুল সংখ্যক লোকজন তাঁকে দেখার জন্য আসেন যে, তিনি কয়েকদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ইমামের সাথে দেখা করতে পারেননি।- মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ৪৭তম খ-, পৃ. ৯৩-৯৪
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) কারবালায় ইমাম হোসাইন (আ.)-এর মাযার যিয়ারত করেন। কারবালায় হোসাইনিয়া নদীর তীরে একটি স্থাপনা রয়েছে যার মধ্যে ইমাম সাদিক (আ.)-এর একটি মেহরাব রয়েছে।- মুজাফফার, আল-ইমাম আস-সাদিক, ১ম খ-, পৃ. ১৩০
ইমাম আলী (আ.)-এর মাযার চিহ্নিত করা
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) ইমাম আলী (আ.)-এর মাযার যিয়ারত করেন এবং এই স্থানটি চিহ্নিত করেন যা পূর্বে অনুদ্ঘাটিত ছিল। আল্লামা কুলাইনির বক্তব্য অনুযায়ী, ইমাম সাদিক (আ.) ইয়াযীদ বিন আমর ইবনে তালহাকে নাজাফ ও হিরার মধ্যবর্তী একটি স্থানে নিয়ে যান এবং ইমাম আলী (আ.)-এর কবর দেখিয়ে দেন। শেইখ আত তূসীও বর্ণনা করেন যে, ইমাম জাফর আস সাদিক (আ.) ইমাম আলী (আ.)-এর মাযার যিয়ারত করেন, এর পাশে নামায আদায় করেন এবং ইউনুস বিন জাবইয়ানকে বলেন যে, সেটি আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর মাযার।- তূসী, তাযহীবুল আহকাম, ৬ষ্ঠ খ-, পৃ. ৩৫
একান্ত অনুসারী, ছাত্র এবং হাদিসের বর্ণনাকারী
শেইখ আত তূসী তাঁর ‘রিজাল’ গ্রন্থে ইমাম সাদিক (আ.) থেকে ৩২০০ হাদিস বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করেছেন।- তূসী, ইখতিয়ার মাআরিফাতুর রিজাল, ২য় খ-, পৃ. ৪১৯-৬৭৯
শেইখ মুফীদ তাঁর ‘ইরশাদ’ গ্রন্থে এই সংখ্যা ৪০০০ বলে উল্লেখ করেছেন। ৮৫ মুফীদ, আল-ইরশাদ, ২য় খ-, পৃ. ২৫৪
বলা হয়েছে যে, ইবনে উকদা ইমাম জাফর সাদিক (আ.) থেকে ৪০০০ হাদিস বর্ণনাকারীর নাম একটি গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।- কুম্মী, আল-কিনা ওয়াল আলকাব, ১ম খ-, পৃ. ৩৫৮
ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর কয়েকজন প্রসিদ্ধ ছাত্রের নাম এখানে উল্লেখ করা হলো : ১. যুরারাহ বিন আয়ান, ২. বুরাইদ বিন মুয়াবিয়া, ৩. জামিল বিল দাররাজ, ৪. আবদুল্লাহ বিন মুসকান, ৫. আবদুল্লাহ বিন বুকাইর, ৬. হাম্মাদ বিন উসমান, ৭. হাম্মাদ বিন ঈসা, ৮. আবান বিন উসমান, ৯. আবদুল্লাহ বিন সিনান, ১০. আবু বাসীর, ১১. হিশাম বিন সালীম, ১২. হিশাম বিন আল-হাকাম।
ইমামের কয়েকজন একান্ত অনুসারী কিছু কিছু বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। যেমন- হামরান বিন আয়ান কোরআনভিত্তিক বিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। আবান বিন তাগলিব আরবি সাহিত্যে, যুরারাহ বিন আয়ান ফিকাহ্্শাস্ত্রে, মুমিন আল তাক ও হিশাম বিন সালীম ধর্মতত্ত্বে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। ধর্মতত্ত্বে আরো বিশেষজ্ঞ ছিলেন হামরান বিন আয়ান, কায়েস আল মাসির এবং হিশাম বিন হাকাম।- পাকাচী, ইমাম জাফর সাদিক (আ.), পৃ. ১৯৯
কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সুন্নি পণ্ডিতও ইমাম সাদিক (আ.)-এর ছাত্র ছিলেন। শেইখ আস সাদুকের মতে, মালিক বিন আনাস বলেন, তিনি ইমাম সাদিক (আ.)-এর কাছে যেতেন এবং ইমাম থেকে হাদিস শুনতেন।- সাদুক, আল-খিসাল, পৃ. ১৬৮
মুয়াত্তা ইমাম মালিকের মধ্যে তিনি ইমাম সাদিক (আ.)-এর নিকট থেকে কয়েকটি হাদিস বর্ণনা করেছেন।- মালিক বিন আনাস, আল-মুয়াত্তা, পৃ. ১০
ইবনে হাজার হায়সামী বলেন, সুন্নি পণ্ডিত, যেমন : ইয়াহইয়া বিন সাইদ, ইবনে যুরাইহ, মালিক বিন আনাস, সুফইয়ান বিন উইয়াইনা, সুফইয়ান সাওরী, আবু হানিফা, শুবা বিন আল-হাজ্জাজ এবং আইয়্যুব আল সাখতিয়ানী ইমাম জাফর সাদিক (আ.) থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।- ইবনে হাজার আল-হাইসামী, আল-সাওয়ায়েকুল মুহরিকাহ, ২য় খ-, পৃ. ৫৮৬
বিখ্যাত হাদিসসমূহ
১. তাওহীদে মুফাজ্জাল : এই দীর্ঘ হাদিসটি চারটি বৈঠকে ইমাম কর্তৃক মুফাজ্জাল বিন উমরকে প্রদত্ত বিভিন্ন শিক্ষামূলক বিষয়ের সমষ্টি। এতে রয়েছে বিশ্বের সৃষ্টি, মানব সৃষ্টি, জীবজগতের অপূর্ব বর্ণনা, বেহেশত ও দোযখের বর্ণনা, মৃত্যুর বাস্তবতা, মানুষ সৃষ্টির পেছনের প্রজ্ঞা ইত্যাদি। যেহেতু এতে ‘ফাক্কির ইয়া মুফাজ্জাল’ অর্থাৎ চিন্তা কর, মুফাজ্জল বাক্যটি পুনঃপুন ব্যবহৃত হয়েছে সেজন্য এটি ‘কিতাবে ফাক্কির’ নামেও প্রসিদ্ধ হয়েছে।
২. হাদিসে ইনওয়ান আল বাসরী : এই হাদিসে ইমাম সাদিক (আ.) ইনওয়ান আল বাসরী নামের এক ব্যক্তিকে আত্মপরিশুদ্ধি, ধৈর্য এবং জ্ঞান সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছেন।- মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১ম খ-, পৃ. ২২৪-২২৬
৩. উমাম বিন হানযালার মাকবূলা : এই হাদিস বিচারকার্য ও হাদিসের মধ্যকার বৈপরীত্য নিয়ে আলোচনা করেছে। ৯৫ এই হাদিসকে বেলায়াতে ফকীহর সমর্থক হিসেবে গণ্য করা হয়।- খোমেইনী, আল হুকুমা আল-ইসলামিয়াহ, পৃ. ১১৫-১২১
লিখিত কর্ম
কোনো কোনো সূত্রে কিছুসংখ্যক পত্র ও অসিয়তনামাকে ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর সাথে সম্পৃক্ত বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এসবের মধ্য থেকে কয়েকটির নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করা সম্ভব নয়, তবে কিছু কিছু বর্ণনা ‘আল-কাফি’র মতো সূত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। আর তাই এগুলোর নির্ভরযোগ্যতাকে উচ্চ সম্ভাবনাযুক্ত বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। নিচে এমন কিছু কর্মের উল্লেখ করা হলো :
১. নিজ সাথিদের কাছে ইমাম সাদিক (আ.)-এর চিঠি। ‘আল-কাফি’তে উল্লিখিত এ পত্রে বিভিন্ন বিষয়ে ইমামের নির্দেশনা বর্ণিত হয়েছে।
২. রিসালাত শারাই আদ দীন, আমাশের সূত্রে বর্ণিত। এটি ধর্মতত্ত্ব ও ইসলামের ব্যবহারিক শিক্ষা সংক্রান্ত- যা ইবনে বাবাওয়াই কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে।
৩. আর-রিসালাহ আল-আহওয়াযিয়া। এই পত্রটি আহওয়াযের গভর্নর নাজাশীর কাছে লেখা হয়েছিল। এটি শহীদে সানী’র ‘কাশ্্ফ আর-রিবা’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে।
৪. রিসালা আল-ইহলিলাযা। এটি ভারতীয় একজন পদার্থবিজ্ঞানীর সাথে ¯্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে জাফর সাদিক (আ.)-এর আলোচনা। নাজাশী এটি ‘বাদ আল খাল্্ক ওয়াল হাস্্ আলাল ইতিবার’ শিরোনামে উল্লেখ করেছেন।
৫. তাফসীরে নুমানী।
ইমাম সাদিক (আ.)-এর বাণীসমূহের সংকলনও রয়েছে যা তাঁর ছাত্রদের দ্বারা সংকলিত হয়েছিল। এর মধ্য থেকে প্রকাশিত কয়েকটি হলো :
১. আল-জাফারিয়াত; মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ আল-আশআস কর্তৃক সংকলিত।
২. নাস্র আদদুরার; এর বর্ণনাগুলো তুহাফুল উকূল গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে।
৩. আল-হিকাম আল জাফারিয়া
৪. সালমান বিন আইয়ুব কর্তৃক বর্ণিত কিছুসংখ্যক সংক্ষিপ্ত বাণী যেগুলো ‘ফারায়েদুস সিমতাইন’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুন্নি আলেমদের দৃষ্টিতে ইমাম সাদিক (আ.)
সুন্নি পণ্ডিতদের কাছেও ইমাম সাদিক (আ.) উচ্চ মর্যাদার অধিকারী। হযরত আবু হানিফা ইমাম জাফর সাদিককে সবচেয়ে জ্ঞানী এবং শ্রেষ্ঠ ফকীহ বলে বিবেচনা করতেন।- যাহাবী, তাযকিরাতুল হুফ্ফায, ১ম খ-, পৃ. ১২৬
প্রখ্যাত সুন্নি পণ্ডিত ইবনে আবিল হাদীদের মতে, আবু হানিফা, আহমদ বিন হাম্বাল এবং আশ শাফেয়ী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইমাম সাদিক (আ.)-এর ছাত্র ছিলেন।
শাহাদাত
১৪৮ হিজরিতে তৎকালীন খলিফার নির্দেশে ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-কে বিষ প্রয়োগ করা হয় এবং ইমাম শাহাদাত বরণ করেন।- মুফীদ, আল-ইরশাদ, ২য় খ-, পৃ. ১৮০
তাঁকে মদীনার জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
উত্তরসূরি
শাহাদাতের পূর্বে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) তাঁর সন্তান ইমাম মূসা আল কাযিম (আ.)-কে তাঁর উত্তরাধিকারী ও পরবর্তী ইমাম হিসেবে ঘোষণা করেন।- কাশশী, রিজাল, পৃ. ২৮২-২৮৩