বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

ইমাম জাফর আস-সাদিক (আ.)-এর বাণী

পোস্ট হয়েছে: অক্টোবর ২২, ২০১৯ 

সংকলন ও অনুবাদ : মুহাম্মদ মুনীর হোসেইন খান –
২৫ শাওয়াল মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইতের ষষ্ঠ ইমাম জাফর ইবনে মুহাম্মাদ আস-সাদিক (আ.)-এর শাহাদাত দিবস। তিনি ৪র্থ ইমাম হযরত আলী ইবনুল হুসাইন যায়নুল আবেদীনের পৌত্র। তাঁর পিতা ছিলেন আহলে বাইতের পঞ্চম ইমাম মুহাম্মাদ আল বাকির (আ.)। ইমাম জাফর ইবনে মুহাম্মাদকে ‘সাদিক’ (সত্যবাদী) উপাধি দেয়া হয়েছে এ কারণে যে, তাঁর যুগে বনী উমাইয়্যা ও বনী আব্বাস শাসকচক্রের প্রতিপালিত ও পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত মিথ্যাবাদী রাবীরা (বর্ণনাকারীরা) মহানবী (সা.)-এর নামে মিথ্যা ও জাল হাদীস বর্ণনা ও প্রচার করত, আর এ রকম এক যুগসন্ধিক্ষণে ইমাম জাফর (আ.) মহানবীর দিশাহারা উম্মতের সামনে মহানবীর সত্য ও বিশুদ্ধ (সহীহ) হাদীস ও সুন্নাহ উপস্থাপন করেছিলেন এবং ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ৪০০০ শিষ্য, মুহাদ্দিস (হাদীসশাস্ত্রবিদ), মুফাসসির, মুতাকাল্লিম (কালামশাস্ত্রবিদ), রাবী (হাদীস বর্ণনাকারী) ফকীহ-মুজতাহিদকে শিক্ষা দিয়েছিলেন ও প্রশিক্ষিত করেছিলেন। তাই মহানবীর সত্য হাদীস ও সুন্নাহ বর্ণনা করার জন্য তাঁকে ‘সাদিক’ বা ‘সাদিকু আলে মুহাম্মাদ’ (হযরত মুহাম্মাদ সা.-এর আহলে বাইতের সত্যবাদী) বলা হয়, যদিও মহানবী (সা.) এবং তাঁর আহলে বাইতের সকল ইমাম সত্যবাদী ছিলেন। ইমাম জাফর আস-সাদিকের অক্লান্ত চেষ্টা-প্রচেষ্টার কারণে মহানবী (সা.)-এর হাদীস ও সুন্নাহ এবং তাঁর আহলে বাইতের অমিয় বাণী তথা খাঁটি ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞান সংরক্ষিত হয়েছে। তাই এ মহান ইমামের শাহাদাত দিবসে তাঁর কিছু অমিয় বাণীর অনুবাদ উপস্থাপন করছি যা আমাদের জীবনে চলার পথে হবে নিঃসন্দেহে আলোকবর্তিকাস্বরূপ। বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে, মহানবী (সা.) এবং তাঁর আহলে বাইতের সকল বাণী ও হাদীস হচ্ছে হেদায়াতের নূর (সঠিক পথ প্রদর্শনের আলো) এবং প্রাণ-সঞ্জীবণী সুধা।
ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : 
১. আমি বেহেশতের সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম দানশীলতার মাঝে।
২. আমি সুস্থতা ও মুক্তির সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম (গঠনমূলক ও ইতিবাচক) নির্জনবাসের মধ্যে। (গঠনমূলক ও ইতিবাচক নির্জনবাসে মানুষের চিন্তাশক্তির বিকাশ হয় এবং নিভৃতে রিয়ামুক্ত ইবাদত-বন্দেগি করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয়। তাই এ ধরনের নির্জনবাসের প্রয়োজন রয়েছে।)
৩. আমি (পরকালে) মানদণ্ডে (মীযান) আমলসমূহ যাতে ভারী হয় তার সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ- এ কলেমার সাক্ষ্যদানের মাঝে (অর্থাৎ মহান আল্লাহর তাওহীদ এবং মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর রিসালতে সাক্ষ্যদান ও বিশ্বাস স্থাপনের মধ্যে)।
৪. আমি বেহেশতে দ্রুত প্রবেশের (উপায়) সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম মহান আল্লাহর জন্য নিষ্ঠার সাথে সৎকর্ম স¤পাদন করার মাঝে।
৫. আমি মৃত্যুর প্রতি ভালোবাসার সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম মহান আল্লাহর (সন্তুষ্টি অর্জনের) জন্য স¤পদ ব্যয় ও উৎসর্গ (ইনফাক) করার মধ্যে।
৬. মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগির মাধুর্য, স্বাদ ও মিষ্টতার সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম পাপ ও গুনাহ বর্জন করার মধ্যে।
৭. আমি হৃদয়ের কোমলতার সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম ক্ষুধা ও তৃষ্ণার মাঝে।
৮. আমি হৃদয়ের আলো ও ঔজ্জ্বল্যের সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম চিন্তা (শীলতা) ও কান্নার মধ্যে।
৯. আমি (কিয়ামত দিবসে) পুল সিরাত অতিক্রমের (উপায়ের) সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম দান করার (সাদাকা দেয়ার) মধ্যে।
১০. আমি মুখম-লের আলোকোজ্জ্বল্যের সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম রাতের নামাযের (তাহাজ্জুদের নামায পড়ার) মধ্যে।
১১. আমি জিহাদের ফযিলতের (মর্তবা ও পুণ্যের) সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম পরিবারের জন্য (হালাল) উপার্জন করার মধ্যে।
১২. আমি মহান আল্লাহর বন্ধুত্বের সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম পাপীদেরকে ঘৃণা করার মধ্যে।
১৩. আমি নেতৃত্বের (নেতা হওয়ার উপায়ের) সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম মানুষকে সদুপদেশ (নসিহত) দানের মধ্যে।
১৪. আমি চিত্তের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম ধন-স¤পদের স্বল্পতার (স্বল্প ধন-স¤পদের অধিকারী হওয়ার) মধ্যে।
১৫. আমি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসমূহ যেগুলো স¤পাদন করার জন্য দৃঢ় সংকল্প ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন সেগুলো (স¤পন্ন করার উপায়ের) সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম ধৈর্য অবলম্বনের মধ্যে।
১৬. আমি বংশ মর্যাদা ও গৌরবের সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম বিদ্যার মধ্যে।
১৭. আমি ইবাদত-বন্দেগির সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম পাপ না করার (পরহেজগারী) মধ্যে।
১৮. আমি আরাম ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম যুহ্দ অর্থাৎ দুনিয়ার প্রতি উপেক্ষা ও ইবাদতে মনোসংযোগ করার (পার্থিবতা বর্জনের) মধ্যে।
১৯. আমি শ্রেষ্ঠত্ব ও মহানতার সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম বিনয় ও নম্রতার মধ্যে।
২০. আমি মর্যাদা ও সম্মানের সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম সততা ও সত্যবাদিতার মধ্যে।
২১. আমি নম্রতা ও বিনয়ের সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম রোযার মধ্যে।
২২. আমি প্রাচুর্য ও নিরাভবতার সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম অল্পে তুষ্টির মধ্যে।
২৩. আমি ঘনিষ্ঠতা ও সখ্যের (ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর) সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্যে।
২৪. আমি মানুষের সাহচর্যের সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম সদাচরণ ও সুমিষ্ট ব্যবহারের মধ্যে।
২৫. আমি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির সন্ধান করলাম, অতঃপর তা পেলাম পিতামাতার প্রতি সদাচরণ ও পুণ্যের মধ্যে।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে ইমাম সাদিক (আ.)-এর এই অমিয় বাণীগুলো আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করার তৌফিক দান করুন।