ইমাম খোমেইনী (র.)-এর ওফাত বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে রাহবার সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর ভাষণ
পোস্ট হয়েছে: জুলাই ১৭, ২০১৮
ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা হযরত আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী গত ৪ জুন ২০১৮ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা হযরত ইমাম খোমেইনীর আধ্যাত্মিক জগতে ঊর্ধ্বগমন-মৃত্যুবরণের ২৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে ভক্তি ও কৃতজ্ঞতায় উদ্বেলিত অগণিত মানুষের এক প্রাণোচ্ছল, উদ্দীপনামুখর ও তাৎপর্যপূর্ণ সমাবেশে দীর্ঘ গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ পেশ করেন। এই ভাষণে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাহবার আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.)-এর ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় বিরল বৈশিষ্ট্যসমূহ পর্যালোচনা করেন এবং এসব বিজয়ম-িত ও মর্যাদার প্রতীক বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে ইসলামি বিপ্লবের মরহুম নেতা ইমাম খোমেইনীর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য ও মিলগুলোর ওপর আলোকপাত করেন। এ পর্যায়ে তিনি দুশমনের মোকাবিলা ও ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে মহান নেতা ইমাম খোমেইনীর সাতটি আচরণগত আদর্শ ও প্রশাসনিক মূলনীতি তুলে ধরেন। রাহবার বলেন, ইমাম খোমেইনী চলে যাওয়ার পরও সেই পথ ও আদর্শকে তীক্ষ্ণ সচেতনতায় অব্যাহত রেখেছি এবং ভবিষ্যতেও রাখব। আল্লাহর মেহেরবানীতে ঈমান, অবিচলতার ওপর নির্ভরতা এবং জনগণ ও রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের বিচক্ষণতার আলোকে দুশমন বর্তমানে অর্থনৈতিক চাপ, মনস্তাত্বিক চাপ ও কর্মগত চাপ প্রয়োগ এর যে নীল নকশা এঁকেছে তা ব্যর্থ করে দেব।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা রাহবার সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে সামরিক অধিনায়কগণ, রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলবর্গ এবং বিদেশী রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। এই ভাষণে তিনি ইমাম খোমেইনীকে ‘বিপ্লবের প্রতীক’ নামে আখ্যায়িত করেন। তিনি ইসলামি বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেইনীর মৃত্যুবার্ষিকী এ বছর আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.)-এর শাহাদত বরণ বার্ষিকীর একই সময় হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর নিষ্ঠাবান ও সত্যিকার এই অনুসারী মহান ইমাম আমীরুল মুমিনীনের সাথে যে সাদৃশ্য বহন করেন তা ইরানি জাতি এবং গোটা ইসলামি উম্মাহর জন্য গৌরবের বিষয়। এসব সাদৃশ্যের প্রতি মনোযোগ দিলে মরহুম ইমামের চলার পথের সঠিকতার চিত্র খুঁজে পাওয়া যাবে এবং ইমামকে আরো ঘনিষ্ঠভাবে চেনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী হবে।
আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী হযরত আলী (আ.)-এর সঙ্গে ইমাম খোমেইনীর সাদৃশ্যগুলোকে তিনটি প্রধান শিরোনামে বিন্যস্ত করেন এবং প্রথম শিরোনামটি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেন, আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর ব্যক্তিত্বে দু’টি দৃশ্যত পরস্পরবিরোধী বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল। একদিকে দৃঢ়তা, বলিষ্ঠতা, রুখে দাঁড়ানোর মনোবৃত্তি ও কঠোরতা, যা তিনি যে কোনো বাতিল তৎপরতা এবং জালিম ও অবাধ্যদের মোকাবিলায় গ্রহণ করতেন। আরেক দিক ছিল সূক্ষ্ণতা, নাজুকতা ও অন্তরের কাতরতা, যা তিনি মহান আল্লাহর দরবারে এবং মজলুম, বঞ্চিত ও মুস্তাজআফ মানুষের বেলায় গ্রহণ করতেন।
মাননীয় রাহবার আরো বলেন, অন্যদিকে আল্লাহর এই মহান অলী (ইমাম আলী) এতিম, অনাথ-অসহায় মানুষের বেলায় নিজ থেকে এত বেশি নম্রতা, সংবেদনশীলতা ও আন্তরের কাতরতা প্রদর্শন করতেন যে, মানুষ চিন্তা করলে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যায়। রাহবার খামেনেয়ী বলেন, ইমাম খোমেইনীর জীবনেও এই দু’টি বৈশিষ্ট্য বলবৎ ছিল। ইমাম একদিকে তাগুতি ও অধঃপতিত পাহলভী সরকার, আমেরিকা ও আগ্রাসী সাদ্দামের মোকাবিলায়, এমনকি তাঁর পুরনো সঙ্গী ও ছাত্রের বেলায়-যিনি সত্যের পরিপন্থি আচরণের শিকার হয়েছিলেন, (ইমাম) মজবুত পাথর ও অটল পাহাড়ের মতো রুখে দাঁড়ান। কিন্তু একজন শহীদের মায়ের আত্মত্যাগী ও ভক্তিপূর্ণ বার্তা পড়ে এবং অধিকারহারা ও নাঙ্গা পা মানুষের অধিকার রক্ষার বেলায় অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়েন ও একান্ত কাতরতা প্রকাশ করেন। ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর বৈশিষ্ট্যসমূহের দ্বিতীয় অধ্যায়ে হযরত আলীর দৃশ্যত অসংগতিপূর্ণ তিনটি বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা দেন। যেমন, একতেদার বা ক্ষমতাচর্চা। মাজলুমিয়াত বা মজলুম অবস্থাকে বরণ করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করা।
হযরত আলী (আ.)-এর বিশাল রাষ্ট্রে তাঁর শক্তিমান প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, ইস্পাতকঠিন ইচ্ছা, বীরত্ব, সামরিক কৌশল, শক্তিশালী বাচনভক্তি ও বলিষ্ঠ আকর্ষণীয় যুক্তিতর্ক আমীরুল মুমিনীনের ক্ষমতাচর্চার উজ্জ্বল নমুনা। মুত্তাকীদের সর্দার আমীরুল মুমিনীনের প্রতি দুশমন ও হিংসুকদের কাপুরুষোচিত অভিযোগসমূহ এবং দুনিয়ার প্রতি প্রলুব্ধ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের আচরণকে হযরত আলীর মজলুম অবস্থার শিকার হওয়ার নমুনা হিসেবে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, এসব কুল-কিনারাহীন চাপ ও গভীর মাজলুমিয়াত এত কঠিন ও সীমাহীন ছিল যে, সাগরের মতো উদার র্ধৈযের পরাকাষ্ঠা ইমামকে কুয়ার (পাড়ে বসে কুয়ার) সাথে মনের বেদনা ব্যক্ত করতে বাধ্য করত। হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আরো বলেন, এতসব সত্ত্বেও এই দীর্ঘ ও কঠিন লড়াইয়ে চূড়ান্ত বিজয় আমীরুল মুমিনীনই অর্জন করেছিলেন। কেননা, আজ তাঁর নাম, ব্যক্তিত্ব, খ্যাতি, চরিত্র, ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি পৃথিবীর দিক দিগন্তে, মানব জাতির ইতিহাসে অত্যন্ত উজ্জ্বল ও দীপ্তিমান। অথচ যারা তাঁর সাথে শক্রতা করেছিল পৃথিবীতে কেউ তাদেরকে স্মরণ করে না।
আমীরুল মুমিনীনের সত্যিকার অনুসারী তথা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতায় ইমাম খোমেইনী হযরত আমীরুল মুমিনীনের উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যের সাথে যে সাদৃশ্য রাখতেন তার বিবরণ দিয়ে হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, ইমাম খোমেইনীও অসাধারণ ক্ষমতাচর্চার মাধ্যমে একটি তাগুতি, স্বৈরাচারী ও হাজার বছরের বংশানুক্রমিক শাসকের পতন ঘটান। আমেরিকাকে ব্যর্থ ও পরাজিত করেন এবং চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের পরিকল্পনাকারীদের লক্ষ্য অর্থাৎ ইসলামি বিপ্লব ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে মূলোৎপাটিত করার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেন।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা আরো বলেন, ইমাম খোমেইনী একই সময়ে তাঁর পূর্বসুরি অর্থাৎ আমীরুল মুমিনীনের মতো মজলুম ছিলেন। দুশমনদের ব্যাপক লাগাতার অবমাননাকর প্রচার-প্রপাগান্ডা এবং কতিপয় লোকের আচরণ, যা তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত ছিল না, ইসলামি বিপ্লবের মরহুম মহান নেতার মাজলুমিয়তের একেকটি নমুনা। ইমাম যে কত মনঃকষ্ট ভোগ করেছেন তার চিহ্ন তাঁর বলিষ্ঠ ও অবিচল বক্তব্যসমূহের মাঝ থেকে উপলব্ধি করা যায়।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আরো বলেন, মরহুম ইমাম খোমেইনী হযরত আমীরুল মুমিনীন এর তৃতীয় বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ চূড়ান্ত বিজয়েরও অধিকারী ছিলেন। ঐ বিজয়কে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার মজবুতি, স্থায়িত্ব, বিকাশ, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির মধ্যে ভালোভাবে উপলব্ধি করা যায়।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা স্মরণ করিয়ে দেন যে, ইমাম খোমেইনীর অনেকগুলো আশা তাঁর বরকতপূর্ণ জীবনকালে বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে। আর তাঁর বহু আশা-প্রত্যাশা তাঁর ইন্তিকালের পরে বাস্তবায়িত হয়েছে। যেমন নিজের ওপর আস্থা, স্বনির্ভরতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অগ্রগতি, এশিয়ার পশ্চিমে ও উত্তর আফ্রিকায় ইসলামি বিপ্লবের প্রভাববলয় বিস্তৃত হওয়া ও রাজনৈতিক অগ্রগতি এর অন্তর্ভুক্ত।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী এ প্রসঙ্গে জোর দিয়ে বলেন, আমাদের প্রিয় ইমামের অন্যান্য আশা-আকাক্সক্ষা ও লক্ষ্যসমূহও আল্লাহর ইচ্ছায় বাস্তবায়িত হবে। আর ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান দিনের পর দিন সুউচ্চ অবস্থান ও বলিষ্ঠতার অধিকারী হবে। তিনি বলেন, দুশমন যেসব তৎপরতা চালাচ্ছে তা তাদের শক্তিমত্তার কারণে নয়; বরং দিশেহারা ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হওয়ার কারণে এসব আচরণ করছে। তিনি বলেন, ইরানের প্রিয় জাতির জেনে রাখা উচিত যে, এ জাতির অগ্রগতি, বলিষ্ঠতা ও রুখে দাঁড়ানোর কারণে দুশমনরা ক্ষীপ্ত ও দিশেহারা হয়েছে এবং তড়িঘড়ি কতক আচরণ করছে।
হযরত আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী তাঁর ভাষণের পরবর্তী অংশে ইমাম খোমেইনীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বিশাল সমাবেশে আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর শত্রু ফ্রন্টের সাথে ইসলামি বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেইনীর শত্রুদের ফ্রন্টের মধ্যকার সাদৃশ্যসমূহের বিবরণ দেন।
তিনি বলেন, ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারীদের শিরোমণি হযরত আলী তিনটি ফ্রন্টের মুখোমুখি ছিলেন। একটি ফ্রন্টের নাম ‘কাসেতীন’। অর্থাৎ তাঁর হুকুমতের প্রকৃত শত্রু ও বুনিয়াদি দুশমন গোষ্ঠী। দ্বিতীয় ফ্রন্ট হলো ‘নাকেসীন’। অর্থাৎ নড়বড়ে স্বভাবের সঙ্গী-সাথি। তৃতীয় ফ্রন্টে ছিল ‘মারেকীন’। অর্থাৎ যাদের চিন্তা ও বোধ ছিল বিকৃত এবং মূর্খতাপূর্ণ। যাদের নেতারা ছিল বিশ্বাসঘাতক। কিন্তু নিজেরা কুরআনের অনুসরণ করছে-এমন ধারণা নিয়ে কুরআনের বাস্তব অবয়ব অর্থাৎ আমীরুল মুমিনীনের মোকাবিলা করেছিল।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আরো বলেন, ইমাম খোমেইনীর দুশমন ও বিরোধীদের ফ্রন্টেও উপরোল্লিখিত তিনটি শ্রেণির বিন্যাস ছিল। ‘কাসেতীন’ অর্থাৎ আমেরিকা, যায়নবাদী সরকার এবং তাদের অভ্যন্তরীণ লেজুড়রা। ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সাথে এদের মৌলিক শত্রুতা রয়েছে। আর ‘মারেকীন’- যারা পরিস্থিতি উপলব্ধি না করা এবং দুশমনদের মেরুকরণের চরিত্র অনুধাবন করতে না পারার কারণে ইমামের তৎপরতার সত্যতা ও বাস্তবতাকে নির্ণয় করতে পারে নি। হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী মুনাফিকদেরকে ‘মারেকীন’ শ্রেণির একটি নমুনা বলে উল্লেখ করেন। যারা তাদের নেতাদের বিশ্বাসঘাতকতা ও মূল কাঠামো সম্পর্কে অজ্ঞতা ও প্রতারিত হওয়ার কারণে ইমাম খোমেইনীর প্রতি ব্যর্থ শত্রুতা পোষণ করেন।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী এই তিনটি ফ্রন্টের মোকাবিলায় ইমাম খোমেইনীর বিজয় লাভের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আজকের দিনেও এই তিনটি গোষ্ঠী ইমাম খোমেইনীর রেখে যাওয়া উত্তরাধিকার অর্থাৎ ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে রণাঙ্গনে সারিবদ্ধ হয়েছে। এই জগাখিচুড়ি ফ্রন্ট অবশ্য দেশের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে। দেশের এগিয়ে যাওয়াকে বাধাগ্রস্ত, কঠিন বা শ্লথ করে দিচ্ছে। কিন্তু জাতির উন্নতি-অগ্রগতি ঠেকাতে তারা অক্ষম ও নেহায়েত দুর্বল।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা রাহবার সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী তাঁর ভাষণের এ পর্যায়ে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকে দীর্ঘ ১০ বছর ইমাম খোমেইনী যে আচরণ ও আদর্শ স্থাপন করেছেন, তার বর্ণনা দেন এবং তাঁর আচরণ ও আদর্শের সাতটি মূল সূচক চিহ্নিত করেন।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন ইমাম খোমেইনীর একটি বৈশিষ্ট্য ছিল দুশমনের সাথে বীরত্বপূর্ণ ও সক্রিয় মোকাবিলা করা। এটি তাঁর চরিত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। তিনি বলেন, মরহুম ইমাম দুশমনের মোকাবিলা করতে গিয়ে কখনো বিচলিত হন নি। সব সময় তিনি তাদের মোকাবিলায় শক্তিশালী ও সক্রিয়ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।
‘বুদ্ধিমত্তাহীন আবেগতাড়িত উত্তেজনা থেকে বেঁচে থাকা’ ছিল ইমাম খোমেইনীর চরিত্রের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। রাহবার খামেনেয়ী তার ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন, ইমাম খোমেইনীর সিদ্ধান্তগুলো ছিল বীরত্বপূর্ণ এবং একই সময়ে বুদ্ধিবৃত্তিক হিসাব-নিকাশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ইমাম খোমেইনীর আচরণগত তৃতীয় বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, ইমাম খোমেইনী আন্দোলন ও সংগ্রাম চলাকালীন সময়ে হোক বা ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের পরবর্তী সময়ে হোক সব সময় অগ্রাধিকারযোগ্য বিষয়গুলোকে বিবেচনায় রাখতেন এবং মূল বিষয়কে কেন্দ্র করেই তাঁর সিদ্ধান্ত আবর্তিত হতো। তিনি কখনো পাশর্^ বিষয়কে মূল কর্মধারায় অন্তর্ভুক্ত করতেন না।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী মরহুম ইমাম খোমেইনীর আচরণগত আরো দুটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, এগুলো ছিল জনগণের, বিশেষ করে যুবসমাজের কর্মক্ষমতার ওপর আস্থা ও ইরানি জাতির প্রতি ভালো ধারণা পোষণ। একই সাথে দুশমনের প্রতি আস্থাহীনতা ও খারাপ ধারণা পোষণ করা। রাহবার আরো বলেন, ইমাম খোমেইনী দুশমন এবং তার প্রস্তাবসমূহের ওপর মুহূর্তের জন্যও আস্থা স্থাপন করেন নি; বরং শত্রুকে আক্ষরিক অর্থেই শত্রু জ্ঞান করতেন।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ইরানি জাতির ঐক্য ও সংহতির প্রতি গুরুত্বারোপ এবং জনগণের মাঝে যে কোনো ধরনের বিভক্তি ও দ্বিমেরুকরণ সর্বতোভাবে প্রত্যাখ্যান করাকে ইমাম খোমেইনীর আরেকটি আচরণগত বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করেন। রাহবার হযরত ইমামের অষ্টম আচরণগত বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, ইমাম খোমেইনী আল্লাহর ওয়াদা ও সাহায্য এর ব্যাপারে পুরোপুরি ঈমান রাখতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, কাজ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে তাহলে তার কোনোরূপ ক্ষতি হবে না।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী তাঁর আলোচনার উপসংহার টেনে বলেন, ইমাম চলে যাওয়ার পর আমরা তাঁর অনুসৃত পথকে ঠিক ঠিকভাবে অনুসরণ করেছি। আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহে এরপর থেকেও সেই পথ চলাই অব্যাহত রাখব। তিনি আরো বলেন, আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতার বদৌলতে আমরা বিচলিত হব না, দুর্বলতার শিকার হব না।
দুশমনদের অতি লোভ এবং ক্ষমতার দাপটের মোকাবিলায় রুখে দাঁড়াব। বিচলিত হয়ে বা আবেগতাড়িত অবস্থায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব না। মূল বিষয় ছেড়ে পার্শ্ব বিষয় নিয়ে জড়াব না। আল্লাহর তাওফীক ও সামর্থ্য নিয়ে আমাদের অগ্রাধিকারযোগ্য বিষয়গুলো নির্ণয় করব। জনগণ বিশেষ করে যুবসমাজের শক্তি ও সামর্থ্যরে প্রতি আস্থাবান থাকব। তবে দুশমনের প্রতি মোটেও আস্থা রাখব না। আমাদের প্রিয় জনগণকে দ্বিধাবিভক্তি ও দ্বিমেরুকরণ হতে সর্তক রাখব। আল্লাহর সাহায্যের ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত। এ ব্যাপারে কোনোরূপ সন্দেহ করি না যে, ইরানি জাতি এই ঈমান ও চেতনা নিয়ে এই আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে অবশ্যই বিজয় অর্জন করবে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বর্তমান পরিস্থিতিতে দুশমনের নীল নকশার বর্ণনা দেন। এ পর্যায়ে তিনি বলেন, দুশমনের নীল নকশাটি তিনটি বিষয়ে, যথা: অর্থনৈতিক চাপ, মনস্তাত্ত্বিক চাপ ও কর্মগত চাপ-এর ভিত্তিতে এবং দেশের ওপর আধিপত্য কায়েমের লক্ষ্য নিয়ে প্রণীত হয়েছে। তিনি বলেন, এই নীল নকশায় অর্থনৈতিক চাপটি প্রয়োগ করা হবে। অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ এবং ইরানের সাথে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমে।
মহামান্য রাহবার স্মরণ করিয়ে দেন যে, তারা তাদের মিথ্যা প্রচার-প্রপাগান্ডার উল্টো কাজ করে থাকে। যে ক্ষেত্রে তারা বলছে যে, এই অবরোধের লক্ষ্য ইরানের সরকার। আসলে তারা ইরানের জনগণকে টার্গেট করেছে। যাতে জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দাপটের সামনে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করতে পারে। কিন্তু দুশমনরা না ইরানি জাতিকে চিনেছে আর না ইসলামি প্রজাতন্ত্রী ব্যবস্থাকে। কেননা, আল্লাহর ফযল ও করমে এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টায় ও জনগণের উচ্চ মনোবলের বদৌলতে তারা তাদের নীল নকশার এই অংশটিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হবে।
হযরত আলী খামেনেয়ী দুশমনের দ্বিতীয় নীল নকশা অর্থাৎ ‘মনস্তাত্ত্বিক চাপ’ প্রয়োগের ওপর আলোকপাত করেন। তিনি এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে বলেন, দুশমন তার এই নকশার মাধ্যমে চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের শক্তিমত্তার দিক ও জাতীয় ক্ষমতার উপাদানগুলোকে দুর্বল দিক ও চ্যালেঞ্জিং পয়েন্ট হিসেবে পরিবর্তন করতে পারে, যাতে ইরানি জাতি নিজস্ব শক্তিমত্তার এই বিষয়গুলোর প্রতি সন্দিহান হয়ে পড়ে ও মনোবল হারায়।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা উদাহরণস্বরূপ পারমাণবিক অগ্রগতিকে একটি প্রধানতম শক্তিমত্তার দিক এবং দেশের জ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে গৌরবজনক অর্জন বলে অভিহিত করেন। রাহবার বলেন, এমন পরিস্থিতিতে বিশ পার্সেন্ট সমৃদ্ধ ইউরোনিয়াম উৎপাদনে দেশের তরুণ বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের সক্ষমতা অর্জন- যে পরিস্থিতিতে প্রতিপক্ষ চিকিৎসা খাতে ব্যবহার উপযোগী বিশ পার্সেন্ট সমৃদ্ধ ইউরোনিয়াম সরবরাহের ব্যাপারে নানারূপ শর্ত আরোপ ও সমস্যার সৃষ্টি করছিল, তা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে শক্তিমত্তার একটি সূচক এবং জাতীয় জীবনে এক বিরাট শক্তিশালী অর্জন। যা দেশের জন্য অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদার। হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, দুশমন এখন চেষ্টা চালাচ্ছে যাতে নানা মনস্তাত্ত্বিক কৌশল প্রয়োগ করে জাতীয় শক্তির এই সূচককে একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়ে রূপান্তরিত করতে পারে এবং জাতিকে এর প্রতি সন্দিহান করে তুলতে পারে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ‘ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা’-কে দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী এবং শক্তিমত্তার আরো একটি ধাপ বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ চলাকালে যেহেতু আমাদের প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্রে সক্ষমতা ছিল না সেহেতু সীমান্তবর্তী শহরগুলো থেকে নিয়ে তেহরান পর্যন্ত রাত দিন ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণের আওতায় ছিল। কিন্তু আজকে তরুণ বিশেষজ্ঞদের মনোবলের কারণে আমরা এতদঞ্চলের এক নম্বর ক্ষেপণাস্ত্র শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছি। দুশমন জানে যে, আমাদের প্রতি একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলে দশটি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে তার জবাব পাবে। ইসলামি বিপ্লবের নেতা আরো বলেন, দুশমন একটি মনস্তাত্ত্বিক অভিযান নিয়ে আমাদের শক্তিমত্তার এই সূচকটির ওপর কেন্দ্রীভূত হয়েছে। দুঃখজনকভাবে দেশের ভেতরেও কতিপয় লোক দুশমনের সাথে সুর মিলিয়েছে।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ‘আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে ন্যায়-ইনসাফ’ এর পক্ষাবলম্বন ও মজলুম জাতিসমূহের প্রতি সমর্থন যোগানোকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের আরো একটি শক্তিশালী দিক বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, যায়নবাদী সরকারের মোকাবিলায় ফিলিস্তিন ও প্রতিরোধ শক্তির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন এবং এতদঞ্চলের দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব ও অখ-তার প্রতিরক্ষায় ভূমিকা রাখা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জন্য সম্মান বয়ে এনেছে; কিন্তু দুশমনের চেষ্টা হলো, এটিকে এতদঞ্চলে ইরানের দখলদারিত্ব হিসেবে প্রচার করে একে চ্যালেঞ্জিং পয়েন্টে রূপান্তরিত করা।
এ পর্যায়ে দেশের অভ্যন্তরের কতিপয় অনুচর দুশমনের সাথে সুর মিলানোর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এই অনুচররাই বছর কয়েক আগে তেহরান ও কুদস দিবসের মিছিলে গাজা নয়, লেবানন নয় (গাজার বা লেবাননের জন্য ঝুঁকি নেয়া উচিত নয়) স্লোগান দিয়েছে। এরা হলো মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে দুশমনকে সাহায্যকারী কতিপয় তুচ্ছ জীব। এটা তাদের জন্য লাঞ্ছনা বয়ে আনবে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা দুশমনের মনস্তাত্ত্বিক অভিযানের আরেকটি নমুনা উল্লেখ করে বলেন, বিজাতীয়রা এবং দেশের ভেতরের কতিপয় লোক তাদের প্রচার-প্রপাগান্ডায় এমনটি দেখতে চায় যে, ইরান যদি পারমাণবিক চুক্তির ত্রুটিপূর্ণ ধরনটি- যা তারা চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে, মেনে না নেয় তা হলে যুদ্ধ হবে না। এই কথা মিথ্যা।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা ইউরোপীয় নেতাদের কোনো কোনো কথার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, মনে হচ্ছে এসব দেশ আশা করছে যে, ইরানি জাতি অবরোধগুলোও সহ্য করবে আর যে পারমাণবিক কার্যক্রম ইরানের ভবিষ্যতের জন্য একান্ত জরুরি, তা থেকেও হাত গুটিয়ে থাকবে। একই সাথে ইরানের ওপর আরোপিত সীমাবদ্ধতাগুলোও তারা অব্যাহত রাখবে। কিন্তু তাদের জানা উচিত যে, তাদের এ দুঃস্বপ্ন কখনো বাস্তবায়িত হবে না। হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, ইরানের সরকার ও জনগণ অবরোধও চলবে, আবার সীমাবদ্ধতা ও পারমাণবিক বন্দিত্বও চলবে- এ অবস্থা কখনো সহ্য করবে না।
মাননীয় রাহবার ইরানের আণবিক সংস্থার দায়িত্বশীলদের ১৯০০০০ সেন্ট্রিফিউজ অর্জনের জন্য (অবশ্য আপাতত পরমাণু চুক্তির আওতায়) প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং প্রেসিডেন্ট যেসব বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন সেসব বিষয় বাস্তবায়নের প্রস্তুতিপর্ব আগামীকালই শুরু করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা দুশমনের মনস্তাত্ত্বিক অভিযানের বিষয়গুলোর উপসংহার টানতে গিয়ে বলেন, তারা চেষ্টা করছে যাতে আমরা মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের শিকার হয়ে আমাদের শক্তিমত্তার বিষয় ও জাতীয় কর্তৃত্বের উপাদানগুলো পরিত্যাগ করি। যাতে দুশমন খুব আরামে আমাদের দেশ ও জাতির ওপর এবং আমাদের ভবিষ্যৎ ভাগ্যের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে। কিন্তু ইরানি জাতি এই তৎপরতার মোকাবিলায় রুখে দাঁড়িয়েছে।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ইরানের মহান জাতির মোকাবিলার জন্য দুশমনের চলতি নীল নকশার তৃতীয় দিক ‘কর্মগত চাপ’ প্রয়োগ বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, দুশমনের নিশ্চিত পরিকল্পনা হলো, জনগণের দাবি ও চাহিদার অপব্যবহার করে দেশে গোলযোগ সৃষ্টি করা। কিন্তু তাদের মাথা নিশ্চিতই পাথরে ঠেকবে।
এই প্রতারণামূলক নীল নকশার আরো ব্যাখ্যা দিয়ে রাহবার বলেন, হতে পারে কোনো অঞ্চলে বা কোনো শহরে শ্রমিকরা বা অন্য কোনো জনতা দাবি দাওয়া পেশ করবে। তখন দুশমন এসব ক্ষেত্রে গুটি কতক অনুপ্রবেশকারী ও দুষ্ট প্রকৃতির গুণ্ডাশ্রেণির লোক ঢুকিয়ে দিয়ে চেষ্টা করবে, যাতে জনগণের শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে নিরাপত্তাবিরোধী ও গোলযোগ সৃষ্টিকারী তৎপরতায় রূপান্তরিত করতে পারে আর রাষ্ট্রব্যবস্থা ও গোটা জাতির জন্য দুর্নাম বয়ে আনতে পারে।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী দুশমনের এই নীল নকশার ব্যাপারে পূর্ণ সর্তক থাকার জন্য জনগণের প্রতি জোর তাগিদ দেন। তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, দুশমনরা এবারও মস্তবড় ভুল করেছে। আমাদের জনগণ পূর্ণশক্তি ও বিচক্ষণতা নিয়ে এই নীল নকশা ও চক্রান্তকে রুখে দাঁড়াবে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের মাননীয় রাহবার মাঠে-ময়দানে জনগণের উপস্থিতিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেন এবং রমযানের শেষ দশকের চলতি সপ্তাহের শুক্রবার বিশ্বকুদস দিবস উদ্যাপনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আল্লাহ তা‘আলার দয়া ও ফযল করমে এবং জনগণের উদ্দীপনায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এ বছর কুদস দিবস আগের বছরগুলোর চাইতে অধিকতর প্রাণবন্ত রূপে উদ্যাপিত হবে।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা তাঁর ভাষণের শেষ ভাগে আরবি ভাষায় এবং আত্মমর্যাদাসম্পন্ন আরব তরুণদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আজকের দিনটি হলো আপনাদের পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তব ময়দানে অবতীর্ণ হওয়ার দিন। অবশ্যই আপনারা আপনাদের দেশের অগ্রগতি, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হবেন।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আমেরিকার সামনে কতিপয় আরব রাষ্ট্রের নতজানু অবস্থা ও অপমানজনক আচরণ এবং যায়নবাদী দুশমনের মোকাবিলায় বলিষ্ঠ নীতি অবস্থান গ্রহণ না করার কথা উল্লেখ করে বলেন, কতিপয় আরব সরকার এখন তাদের জাতির দুশমনে পরিণত হয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে আত্মমর্যাদাশীল আরব যুবকদের দ্বায়িত্ব হলো এই বাতিল ভারসাম্য তছনছ করে দেয়া।
রাহবার বলেন, ভবিষ্যৎ যুবকদের জন্যই অপেক্ষা করছে। তাদের উচিত বাস্তব পদক্ষেপ ও উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদেরকে আগামীর জন্য প্রস্তুত করা। যদি আগামীকে ঠিকভাবে নির্মাণ করা যায় তাহলে নিশ্চিতভাবেই মুসলিম ও আরব জাতিসমূহ বিশেষ করে এসব দেশের তরুণরা তার দ্বারা লাভবান হবে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ইসলামি দেশগুলোর যুবকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, কুফরী শক্তির রণাঙ্গনের হম্বিতম্বিকে ভয় পাবেন না, আল্লাহর পক্ষ হতে সাহায্যের ওয়াদার ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখবেন। হযরত আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী আসন্ন বিশ্বকুদস দিবস উপলক্ষে বলেন, এই মিছিলে আপনাদের উপস্থিতি এবং ফিলিস্তিনী মজলুম, মুজাহিদ ও লড়াকু জনগণের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন সত্যিকার অর্থে উন্নততর আগামী নির্বাচনের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা পরিশেষে ইসলামি দেশগুলোর যুব সমাজের শক্তি-সামর্থ্য ও প্রতিরোধের পথচলা অব্যাহত রাখার জন্য দোয়া করেন।