ড. মুদাররেস- অমর শহীদ


ইরানে শাহের আমলে যাঁরা অন্যায়, অসত্য, যুলুম, নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, অকুতোভয় সৈনিকের মতো সাধারণ মানুষের মনে প্রাথমিক পর্যায়ে বিপ্লবের বীজ বপন করেছেন তাঁদের অন্যতম হচ্ছেন শহীদ সাইয়্যেদ হাসান মুদাররেস (রহ.)। তিনি ১৮৭১ সালে ইরানের ইসফাহান প্রদেশের আরদিস্তানের একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ধর্মীয় বিষয়ে প্রগাঢ় জ্ঞানের অধিকারী শহীদ মুদাররেস পরপর বেশ কয়েকবার মজলিসের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রথমবার মজলিসের সদস্য হওয়ার পর মজলিসের সংখ্যাগরিষ্ঠদের নেতা নির্বাচিত হন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি ১৯১৯ সালের চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি যুগপৎ দুটি দায়িত্বই পালন করতেন। একদিকে মজলিসের সদস্য হিসেবে রাজনৈতিক দায়িত্ব, অন্যদিকে শিক্ষকতার দায়িত্ব। তিনি মজলিসের প্রতিনিধি হিসেবে সাহসিকতা, দক্ষতা, দূরদর্শিতা ও মনোবলের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন এবং মজলিসকে ইসলামী নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালনা করার চেষ্টা করেন। মজলিসে সবসময় অন্যায় ও স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার কারণে রেযা খান তাঁর কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে চান আর এজন্য চালানো হয় ষড়যন্ত্র। এর ফলে পূর্ববর্তী নিবার্চনগুলোতে তিনি সর্বোচ্চ ভোট পেলেও সর্বশেষ নির্বাচনে তিনি কোন ভোট পাননি। রেযা খান তাঁকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার উদ্দেশ্যে খোরসানে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেন। দীর্ঘ আট বছর নির্বাসনে থাকার পর তাঁকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয় এবং কোমরের বেল্ট দিয়ে ফাঁসিতে লটকিয়ে রেখে আত্মহত্যার কথা প্রচার করা হয়।

শহীদ হাসান মুদাররেসের রাজনীতির একটি বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, তিনি ক্ষমতার ভারসাম্যের ব্যাপারে সচেতন ছিলেন এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর ছিলেন, যাকে বর্তমানে আমরা প্রাচ্যও নয়, পাশ্চাত্য নয়নীতি হিসেবে অভিহিত করে থাকি। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, স্বাভাবিক কারণেই মানুষের জন্য স্বাধীনতা এবং বন্ধনমুক্তি প্রয়োজন। এজন্যই তিনি বলতেন : যে কেউ সাম্রাজ্যবাদীদের নীতির প্রতি ঝুঁকে পড়বে, সে আমাদের জনগণের সমর্থন হারাবে। চাই সে ঝোঁক প্রবণতা রাশিয়া, ব্রিটেন অথবা অবশিষ্ট পৃথিবীর যে কারো প্রতিই হোক। আমরা জোটনিরপেক্ষই থাকতে চাই।তিনি বিশ্বাস করতেন ইসলামী জীবনাদর্শের বাস্তবায়ন ছাড়া জাতির ও দেশের কোন কল্যাণ হতে পারে না। তিনি বলতেন : আমাদের প্রকৃত মূলনীতি হচ্ছে আমাদের ধর্ম। যারা আমাদের বিরোধিতা করবে, আমরাও তাদের বিরোধিতা করব- তারা যারাই হোক না কেন।তাঁর একটি কথা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলতেন : আমাদের রাজনীতি হচ্ছে আমাদের ধর্ম আর আমাদের ধর্মই হচ্ছে আমাদের একমাত্র রাজনীতি।

শহীদ মুদাররেস সম্পর্কে ইমাম খোমেইনী (রহ.) বলেন : রেযা শাহ মুদাররেসকে এত ভয় করত যে, সে বিদ্রোহী তথা সশস্ত্র দস্যুদেরকেও এত ভয় করত না। মুদাররেস রেযা খানকে অনেক বীভৎস ও ঘৃণ্য কাজ থেকে বিরত রেখেছেন, অবশেষে রেযা খান তাঁকে গ্রেফতার করেছে এবং হত্যা করেছে।

(নিউজলেটার, ডিসেম্বর ১৯৯১)