ইমাম আলী (আ.)-এর জন্মবার্ষিকী উদযাপন


গত ২৪ মে ২০১৩ ইরান কালচারাল সেন্টারের মিলনায়তনে ইমাম আলী (আ.)-এর জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে আলোচনা উপস্থাপন করেন মোস্তফা আন্তর্জাতিক ইউনিভার্সিটির ঢাকা ক্যাম্পাসের দায়িত্বশীল হুজ্জাতুল ইসলাম আলী রেযায়ী, একই ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তা হুজ্জাতুল ইসলাম মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন ও বিশিষ্ট আলেম হুজ্জাতুল ইসলাম আব্দুল কুদ্দুস বাদশা এবং জনাব শাহজাহান।

জনাব আলী রেযায়ী বলেন, হযDSCF0343রত আলী (আ.) জন্মগ্রহণ করেন পবিত্র কাবার অভ্যন্তরে। মাজহাব নির্বিশেষে সকল আলেম এই বিষয়টি স্বীকার করেন। আহলে সুন্নাতের বড় বড় আলেম হযরত আলীর ফযিলত বর্ণনায় এ ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, হযরত আলীকে অবমাননা করার জন্য যদিও অনেক প্রচেষ্টা হয়েছে, এমনকি সত্তর হাজার মিম্বার তৈরি করা হয়েছিল হযরত আলীর বিপক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য, তবু তাঁর মর্যাদা সম্পর্কিত এ বিষয়টি ইতিহাস থেকে তারা মুছতে পারেনি। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে হযরত আলীর সম্পর্কের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, মদীনায় হিজরত করার পর রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত আলীকে নিজের ভাই হিসাবে পরিচয় দেন। তিনি হযরত আলীর ব্যাপারে রাসূলের অনেক হাদীস উল্লেখ করেন। যেমন খন্দকের যুদ্ধে হযরত আলীর তরবাবির একটি আঘাত জীন ও মানব জাতির কিয়ামত পর্যন্ত ইবাদতের চেয়ে উত্তম, রাসূলের কাছে হযরত আলীর মর্যাদা মূসা (আ.)-এর কাছে হারুন (আ.)-এর মর্যাদার ন্যায়, মসজিদে নববীতে প্রবেশের সকল দরজা বন্ধ করে দেয়া কেবল হযরত আলীর দরজা খোলা রাখা ইত্যাদি।

তিনি হযরত আলীর ফযিলতের ব্যাপারে বলেন যে, মুফাসসিরদের মতে পবিত্র কুরআনের প্রায় ৩০০টি আয়াত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হযরত আলীর সাথে সম্পর্কিত। তিনি আরো বলেন, খ্রিস্টানদের সাথে মোবাহেলার ঘটনায় রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত আলীকে নিজের সত্তা হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেন।

জনাব শাহজাহান বলেন, হযরত আলীর জন্ম নেয়ার স্থান হওয়ার মাধ্যমে আসলে পবিত্র কাবাই সম্মানিত হয়েছে। মারইয়াম (আ.)-এর গর্ভাবস্থায় মহান আল্লাহ তাঁর প্রতিপালনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, কিন্তু যখন সন্তান প্রসবের সময় হলো তখন আল্লাহ তাঁকে আল্লাহর ঘর থেকে বাইরে যাবার জন্য নির্দেশ দিলেন। অথচ তিনি ছিলেন একজন নবীকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন। কিন্তু মাওলা আলীর জন্মের সময় কাবা ঘরের দেয়ালে ফাঁক সৃষ্টি করে আল্লাহ তায়ালা হযরত আলীর মা হযরত ফাতিমা বিনতে আসাদকে কাবায় প্রবেশ করার সুযোগ তৈরি করে দিলেন। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের চিন্তা করার প্রয়োজন রয়েছে।DSCF0354

জনাব মোহাম্মাদ মাঈন উদ্দিন বলেন, হযরত আলী (আ.)-কে বলা হয় ‘মওলুদে কাবা’। সাধারণত যখন কোন ঘটনা এক ব্যক্তির ক্ষেত্রে ঘটে থাকে তখনই এমন নামকরণে বিষয়ের অবতারণা হয়। তিনি বলেন, ইসলামের প্রতিটি পরতে হযরত আলীর অবদান রয়েছে। হযরত আলী এমন মর্যাদায় উপনীত হয়েছিলেন যে, তাঁর চোখ, কান, হাত, মুখ, পা সবকিছুই আল্লাহর হয়ে গিয়েছিল, সেই হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত অবস্থার মতো যেখানে আল্লাহ মুমিনদের ব্যাপারে বলেছেন যে, তিনি মুমিনের  চোখ, কান, হাত ইত্যাদি হয়ে যান।

DSCF0359জনাব আব্দুল কুদ্দুস বাদশা বলেন, হযরত আলী (আ.)-এর মা তাঁর অসহায় অবস্থায় মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন। আর আল্লাহ তাআলা তাঁকে সাহায্য করলেন। তিনি তাঁকে নিজ ঘরের মেহমান করলেন। আল্লাহ চাইলে তাঁকে দরজা দিয়েই নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি সারা বিশ্বের বুকে দৃষ্টান্ত রাখার জন্য তাঁকে কাবা ঘরের দেয়ালে ফাটল সৃষ্টি করার মাধ্যমে তাঁকে বরণ করলেন।

মূসা (আ.)-এর মা এবং ঈসা (আ.)-এর মাকেও আল্লাহ হেফাজত করেছেন, পথ প্রদর্শন করেছেন এবং তাঁদেরকে প্রতিপালন করেছেন। অবশেষে তাঁদের সন্তানরা নবী-রাসূল হয়েছেন। আর আমরা দেখতে পাচ্ছি হযরত আলীর মাকেও আল্লাহ প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করছেন। নিশ্চয়ই এর মধ্যে আমাদের জন্য ভাববার বিষয় রয়েছে।

হযরত আলীর মর্যাদার ব্যাপারে তিনি মুসলিম শরীফ থেকে একটি হাদীস উল্লেখ করে বলেন যে, হযরত আলীকে মুমিন ছাড়া কেউ ভালোবাসবে না, আর মুনাফিক ছাড়া কেউ ঘৃণা করবে না।

DSCF0355তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদীস থেকে বলেন যে, যারা আহলে বাইতকে ভালোবাসবে মহান আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। সবশেষে তিনি হযরত আলী (আ.)-এর একটি বাণী তুলে ধরেন : হযরত আলী বলেন : যে চায় কারো সঙ্গী হতে, আল্লাহ তাআলা হলেন শ্রেষ্ঠ সঙ্গী। যে চায় কথা বলতে তাহলে কুরআনের সাথে কথা হলো শ্রেষ্ঠ কথা। যে উপদেশ চায়, মৃত্যু হলো শ্রেষ্ঠ উপদেশ। যে চায় ধনী হতে তার যতটুকু আছে ততটুকুতেই তুষ্ট থাকাই শ্রেষ্ঠ ধন।

অনুষ্ঠানে শিশু-কিশোরদের মধ্যে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের প্রতিযোগিতা ও এর পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানের মাঝে মাঝে মহানবী (সা.)-এর হাদীস থেকে পাঠ করা হয়। এতে কাসিদা ও ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন জনাব মাহদী হাসান, জনাব নুরুল মুনীর, জনাব শাহ নওয়াজ তাবীব, জনাব নাজিম হোসেন ও অন্যরা।