বৃহস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

ইসলামী বিপ্লবের মূল লক্ষ্যসমূহকে সব সময় জীবন্ত রাখতে হবে

পোস্ট হয়েছে: মার্চ ২৫, ২০১৬ 

হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী ১১ই ফেব্রুয়ারি (২০১৬) ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ৩৭তম বিজয় বার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর সাথে সাক্ষাৎকারী ইরানের বিমান বাহিনীর একদল অধিনায়ক ও বিভিন্ন স্তরের সদস্যদের উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে এ মন্তব্য করেন। তিনি তাঁর ভাষণে ইসলামী বিপ্লবের বিজয় বার্ষিকীর সমাবেশে ইরানী জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণকে দুশমনদের জন্য হতাশার কারণ হিসেবে অভিহিত করেন।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী ১১ই ফেব্রুয়ারীর বিপ্লব বার্ষিকী ও জাতীয় নির্বাচনকে ইরানী জাতির জন্য দু’টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ আনন্দজনক উৎসব হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বিপ্লব বার্ষিকীর গণমিছিল ও নির্বাচন উভয়েই জনগণের জন্য দুশমনদের চূর্ণকারী রূপে ব্যাপক ও দৃষ্টিগ্রাহ্য অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, ২৬শে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনেও জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ একটি দেহে নতুন রক্ত সঞ্চালনের ন্যায় ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের শক্তিমত্তা ও দেশের ইসলামী শাসনব্যবস্থার জন্য বীমাস্বরূপ কাজ করবে এবং ষড়যন্ত্রকারী প্রতারক দুশমনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যসমূহকে অকেজো করে দেবে।
ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার প্রতি বছর ইসলামী বিপ্লবের বিজয়বার্ষিকী উদ্যাপন কর্মসূচিতে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের প্রশংসা করে বলেন, দীর্ঘ সাঁইত্রিশ বছর যাবত ইরানী জনগণ তাদের দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি এবং ইসলামী বিপ্লবের প্রতি তাদের ভালোবাসা ও পৃষ্ঠপোষকতা সহকারে নিয়মিত ১১ই ফেব্রুয়ারির বিপ্লববার্ষিকীর মিছিলে উপস্থিত হয়ে আসছেন। আর এ বছরও আল্লাহ্র অনুগ্রহে এ উপলক্ষে তাঁদের ব্যাপকভাবে ও দৃষ্টিগ্রাহ্যভাবে রাস্তায় নেমে আসার বিষয়টি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের দুশমন ও অকল্যাণকামীদের জন্য চরম হতাশা সৃষ্টিকারী।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ১১ই ফেব্রুয়ারির গণমিছিলকে ইসলামী বিপ্লবের বিজয়োৎসবের আনন্দময় পুনরাবৃত্তি হিসেবে অভিহিত করে বলেন, কোনো ব্যাপারে জনগণের আনন্দময় অনুষ্ঠানের এভাবে অব্যাহত থাকা বিশ্বের বুকে নজিরবিহীন। তিনি বলেন, ইরানের জনগণ ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের শুরু থেকে এ পর্যন্ত পরিবেশগত কঠিন অবস্থা ও ব্যক্তিগত কারণে অনেকের মনের খারাপ অবস্থা নির্বিশেষে সর্বাবস্থায়ই নিয়মিত ইসলামী বিপ্লবের বিজয়োৎসবে অংশগ্রহণ করে আসছে।
ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যারা ইসলামী বিপ্লবের বিজয়বার্ষিকীর মিছিলে অংশগ্রহণ করেছে তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই তাদের বয়সের বিচারে এমন যারা ইসলামী বিপ্লবের দিনগুলোকে ও ১৯৭৯ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের দিনটিকে দেখে নি। এ থেকে সুস্পষ্ট যে, এ ধারাবাহিকতা কোনোদিন সমাপ্ত হবে নাÑ যা ইসলামী বিপ্লবের নব সৃজনশীল শক্তিরই প্রমাণ বহন করছে।
ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের এ বিরাট ও মহান ঘটনার স্মৃতি কিছুতেই বিস্মৃত হতে দেয়া যাবে নাÑ এ কথা উল্লেখ করে হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী বলেন, ইসলামী বিপ্লবের প্রকৃত অবস্থা সর্বাবস্থায় ও সব সময় জনগণের অন্তরে ও মন-মস্তিষ্কে জাগ্রত রাখতে হবে। কারণ, প্রকৃতপক্ষে ইসলামী বিপ্লব এখনো তার মাঝপথে রয়েছে। তাই এর ভিত্তিসমূহকে সুদৃঢ়ীকরণ এবং এর সুমন্নত ও মহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহের বাস্তব রূপায়নের লক্ষ্যে এ বিপ্লবের মূল্য লক্ষ্যসমূহকে সব সময় জীবন্ত রাখতে হবে।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার অকল্যাণকামীদের সকলে যে এর বিরুদ্ধে এক ব্যাপক বিস্তৃত রণাঙ্গনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তাদের সমস্ত অপচেষ্টার লক্ষ্য হচ্ছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানকে স্বীয় মর্যাদা সৃষ্টিকারী ও শক্তি সৃষ্টিকারী লক্ষ্যসমূহের অভিমুখে অভিযাত্রা অব্যাহত রাখা হতে বিরত রাখা এবং ইরানের বুকে বিজাতীয়দের আধিপত্যকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা।
ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার বলেন, ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার লক্ষ্য হচ্ছে এমন একটি সমাজ গড়ে তোলা যা জ্ঞান-বিজ্ঞান, সুবিচার, উন্নত নৈতিক চরিত্র, সম্মান ও মর্যাদা এবং উন্নতি ও অগ্রগতির অধিকারী থাকবে। তিনি বলেন, দুশমন ফ্রন্টের আসল লক্ষ্য হচ্ছে এ মহান ও সমুন্নত লক্ষ্যসমূহকে বিস্মৃতির কবলে নিক্ষেপ করা, নিদেনপক্ষে ইরানী জনগণের আচরণে ও ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অভ্যন্তরীণ বা গুণগত পরিবর্তন ঘটানো।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী বলেন, দুশমনের আসল লক্ষ্য হচ্ছে ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার বৈপ্লবিক প্রকৃতি ও চরিত্রবৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন ঘটানো। তিনি উল্লেখ করেন যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে কোনো কঠিন যুদ্ধের সম্ভাবনা নেই, তবে তা একেবারে অসম্ভবও নয়। তিনি বলেন, বর্তমানে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে দুশমনদের সবচেয়ে বড় কর্মসূচি হচ্ছে ংড়ভঃ ধিৎ Ñ যার লক্ষ্য হচ্ছে ইরানের ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও ইরানী জনগণকে যা কিছু গ্রথিত করে রেখেছে তার বিলুপ্তি ঘটানো।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা একটি জাতির শক্তির গ্রথিতকারী উপাদানগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়াকে সে জাতির জন্য দুশমনদের সামনে আত্মসমর্পণের সমার্থক বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, একটি জাতি যদি দুর্বল হয়ে পড়ে তাহলে আর তার বিরুদ্ধে মোকাবিলা করার জন্য কোনো কঠিন যুদ্ধের প্রয়োজন হয় না।
ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার বলেন, এ ধরনের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি প্রতিহত করার একমাত্র পথ হচ্ছে কর্ম, আচরণ, লক্ষ্য নির্ধারণ এবং আইন-কানুন ও বিধি-বিধান প্রণয়নে তথা সকল ক্ষেত্রে বিপ্লবী চিন্তাধারার হেফাযত ও প্রহরা প্রদান।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী তাঁর ভাষণের ধারাবাহিকতার এক পর্যায়ে নির্বাচনকে দেশ ও জাতির দেহে নতুন রক্ত ও নতুন চেতনা প্রবেশ করানো এবং তার শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য নতুন হাওয়া সরবরাহের সাথে তুলনা করেন। তিনি বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের জনগণ স্বীয় প্রাকৃতিক অধিকারকে কাজে লাগিয়ে বার বার নির্ধারিত সময়ে মঞ্চে আগমন করে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তারা ইতিপূর্বে যেসব দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে নির্বাচিত করেছিল তাদের মধ্যে কে কে থাকবে ও কে কে বিদায় নেবে।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা নির্বাচনকে জাতির শক্তির নবায়ন ও ইসলামী বিপ্লবের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যসমূহের সাথে জনগণের নতুন করে বাই‘আত হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, আমি এ কারণে নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করি যে, নির্বাচনে জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ দেশ ও দেশের শাসনব্যবস্থার জন্য সম্মান ও মর্যাদার পরিচায়ক এবং তার জন্য বীমাস্বরূপ তথা তার সুুরক্ষার নিশ্চয়তা বিধানকারী। সুতরাং এ বিরাট ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় জনগণের অংশগ্রহণ করা একটি অবশ্য কর্তব্য বিষয়।
ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের জনগণ ও সরকারের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করা এবং দু’টি বিপজ্জনক কৃত্রিম ও মিথ্যা মেরু তৈরিকরণ হচ্ছে ইসলামী বিপ্লবের দুশমন ফ্রন্টের সব সময়ের লক্ষ্যসমূহের অন্যতমÑ তিনি বলেন, নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক উপস্থিতি এবং জনগণ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যকার সম্পর্ককে নতুন করে শক্তিশালীকরণের মানে হচ্ছে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের বিজয় এবং দুশমনের এ লক্ষ্যসমূহের অসফল থেকে যাওয়া। আর আল্লাহ্ তা‘আলার সত্য ওয়াদার ভিত্তিতে এটা সুনিশ্চিত যে, তাদের এ উপস্থিতি আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে বিজয় ও সাহায্য বয়ে নিয়ে আসবে।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী তাঁর ভাষণে ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পর থেকেই দুশমনরা এর বিরুদ্ধে যেসব অপতৎপরতা চালিয়েছে ও যেসব ষড়যন্ত্র করেছে তার কথা স্মরণ করিয়ে দেন, বিশেষ করে তিনি ইরানকে বিভক্ত করার অপচেষ্টা, সামরিক অভ্যুত্থান, আট বছরব্যাপী চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ ও ক্রমবর্ধমান নিষেধাজ্ঞার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, কিন্তু দেশের জনগণ সব সময়ই এ সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার জন্য এগিয়ে আসে। আর তাই মহান আল্লাহ্ ও ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানকে ও ইরানী জাতিকে সাহায্য ও বিজয় প্রদান করে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের একটি আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত করেছেন এবং কতক ব্যাপারে বৈশ্বিক অঙ্গনে একটি প্রভাবশালী শক্তিতে রূপান্তরিত করে দিয়েছেন।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা দেশের জনগণকে সম্বোধন করে বলেন যে, দেশ ও জাতির, সম্মান, মর্যাদা, গৌরব ও শক্তিমত্তা বিপ্লবী দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের মধ্যে নিহিত রয়েছে। আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ হচ্ছে এ সবের মধ্য থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব-কর্তব্যসম্যূহের অন্যতম।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা নির্বাচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে অভিহিত করেন। তবে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, এ বিষয়টির সমস্ত রকমের গুরুত্ব সত্ত্বেও এটি একটি সাময়িক বিষয়; কিন্তু যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এরপরও অব্যাহত থেকে যাবে তা হচ্ছে অর্থনীতিকে প্রতিরোধমূলক করে গড়ে তোলাসহ দেশের মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি।
ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার ইরানের শিক্ষিত ও লক্ষ্যাভিসারী জনশক্তির বিরাট সম্ভাবনা, আঞ্চলিক অবস্থানগত বৈশিষ্ট্য এবং প্রাকৃতিক সম্পদের কথা পুনরায় উল্লেখ করে দেশের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের উদ্দেশে বলেন, এ নজিরবিহীন পুঁজির ওপর নির্ভর করে দেশের অর্থনীতিকে এমনভাবে প্রতিরোধমূলক করে গড়ে তুলুন যাতে দুশমনরা তাদের লক্ষ্য হাসিলের জন্য ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হয়।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী বলেন, দেশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের দায়িত্ব হচ্ছে দেশের পুঁজিসমূহকে দ্রুত গতিতে শিল্প ও কৃষি উৎপাদন, উৎপাদন বৃদ্ধি, অচলাবস্থার সমস্যার সমাধান এবং দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে পরিচালিত করা যাতে দুশমনরা বুঝতে বাধ্য হয় যে, ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় তাদের কোনোই লাভ হবে না।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা বিগত দশ-বারো বছর যাবত জাতীয় অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধির ওপর যে গুরুত্ব আরোপ করে আসছেন দেশের দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তাদেরকে তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, এ লক্ষ্য বাস্তবায়িত হলে দেশের যুবশক্তির কর্মসংস্থানের সমস্যা, বেকারত্ব ও অর্থনীতির অন্যান্য সমস্যারও যথাযথ সমাধান পাওয়া যাবে।
ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার দুশমনদের ব্যাপক বিস্তৃত ফ্রন্টের সকল ষড়যন্ত্র ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের প্রতি পুরোপুরি সতর্ক দৃষ্টি রাখা অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যারা নিজেদের দুশমনদের ব্যাপারে উদাসীন থাকে এবং তাদের ব্যাপারে যাদের অন্তর নিশ্চিন্ত তারা কখনোই জনগণের প্রিয়পাত্র হতে পারবে না। এ ধরনের লোকদের উদ্দেশে তিনি বলেন : দুশমন মৃদু হাসি উপহার দেয়, জবাবে তোমরাও তাদেরকে মৃদু হাসি উপহার দাও; কিন্তু দুশমনের মৃদু হাসির পিছনে কী প্রতারণাময় অপকৌশল লুকিয়ে আছে সে ব্যাপারে তোমাদের সচেতন থাকা উচিত।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী বলেন, ইরানী জাতির নিরাপত্তা, ভালোভাবে জীবন যাপন, সংস্কৃতি ও যুব সমাজের ব্যাপারে দুশমনের ষড়যন্ত্রসমূহ, সামাজিক ক্ষতিসমূহ ও অন্যান্য সমস্যাকে বুঝতে হবে এবং এগুলোর মোকাবিলা করার লক্ষ্যে যথাযথ নীতি নির্ধারণ করতে হবে, আইন প্রণয়ন করতে হবে, পদক্ষেপ নিতে হবে ও কথা বলতে হবে।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা মিষ্টভাষী খ্যাতনামা ইরানী কবি শেখ সা‘দী শীরাযীর একটি উক্তির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, দুশমন যখন বন্ধুত্বের জন্য বার বার ছুটে আসে তখন সে বন্ধুত্বের পোশাক পরিধান করে এমন কাজ করে যা কোনো দুশমনই করতে পারে না।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলার রহমতে দুশমনের মোকাবিলায় ইরানী জাতি সব সময়ই পুরোপুরি সতর্ক ছিল এবং এখনো সতর্ক। তিনি বলেন, ইরানী জাতির মহান অভিযাত্রা এ পর্যন্ত ষড়যন্ত্রকারী ও প্রতারণাময় অপকৌশলের আশ্রয় গ্রহণকারী দুশমনের সকল ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তাদেরকে অপদস্থ করবে।
ইসলামী বিপ্লবের রাহ্বার তাঁর সাথে সাক্ষাৎকারী ইরানের বিমান বাহিনীর একদল অধিনায়ক ও বিভিন্ন স্তরের সদস্য এবং বিমান বিধ্বংসী কামানের দায়িত্বে নিয়োজিতদের উদ্দেশে প্রদত্ত এ ভাষণের শুরুতে ১৯৭৯ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি ইরানের বিমান বাহিনী কর্তৃক ইসলামী বিপ্লবের মহান নেতা হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.)-এর কাছে বাই‘আত্ করার ঘটনাকে স্মরণ করেন এবং এ ঘটনাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ঘটনা এবং ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাসে একটি দিকনির্দেশক ঘটনা হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ৮ই ফেব্রুয়ারি তারিখে ইরানের বিমান বাহিনী জনগণের কাতারে শামিল হয়ে দেশের ভিতরকার রাজনৈতিক ক্ষমতার ভারসাম্যে পরিবর্তন সৃষ্টি করে এবং সাথে সাথে জনগণের পক্ষ থেকে এ পদক্ষেপকে স্বাগতম জানানো হয়। আর এটা প্রমাণ করে যে, ‘জনগণ হওয়া’র ফল হচ্ছে জনগণের সমর্থন লাভ।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী বিগত সাঁইত্রিশ বছর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিমান বাহিনী যে কর্মতৎপরতা চালিয়েছে তা প্রকৃতই খুবই ভালো বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে ইরানের গোটা বিমান বাহিনী পুরোপুরিভাবে সুদৃঢ়, শক্তিশালী ও উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী এবং তারা জনগণের পাশে আছে; তাদের এ দৃঢ়তা, শক্তি, সক্ষমতা ও জনগণের সাথে সম্পর্ক দিনের পর দিন আরো বৃদ্ধি করতে হবে। [সংক্ষিপ্ত]