শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

সাঁতার

পোস্ট হয়েছে: মার্চ ৩১, ২০১৮ 

 

শিশু-কিশোরদের জন্য সুস্থ, স্বাস্থ্যবান ও সক্রিয় থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সাঁতার কাটা হলো শিশুদের সুস্থ ও সক্রিয় থাকার একটি চমৎকার উপায়। চার বছর বয়সেই শিশুরা সাঁতারের প্রশিক্ষণ নিতে পারে। সাঁতার এমন একটি উত্তম ব্যায়াম ও ক্রীড়া যা থেকে মানুষ আজীবন উপকৃত হতে পারে। সকল বয়সের লোক সাঁতারের উপকারিতা লাভ করতে পারেন। সাঁতার এমন একটি খেলা যেটা তুমি খুবই অল্প বয়স থেকে শুরু করে ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত চালিয়ে যেতে পার। অন্যান্য খেলাধুলার চেয়ে সাঁতারে আঘাত প্রাপ্তির সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। আর শরীরের ফিটনেস ধরে রাখার জন্য এটি একটি চমৎকার খেলা। এটি তোমার স্টেমিনা, শরীরের নমনীয়তা ও ভারসাম্য রক্ষার ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
তা হলে কেন সাঁতারের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে পানিতে নামছ না ? এখনও সাঁতারের উপকারিতাগুলো পাওয়ার জন্য খুব বেশি দেরি হয়ে যায় নি। সাঁতার তোমার শরীরের জন্য যেমন উপকারী, ঠিক তেমনি তোমার মনের জন্যও উপকারী। এটি সত্যিই একটি উপযুক্ত খেলা। নিচে এ খেলার ১০টি অসাধারণ উপকারিতার কথা উল্লেখ করা হলো :
১. সামাজিক হয়ে গড়ে ওঠা
সাঁতারকে খুব বেশি মাত্রায় সামাজিক খেলা বলা যেতে পারে। সকল বয়সের সাঁতারু এক সাথে ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারেন, একই সাথে প্রশিক্ষণ গ্রহণ অথবা সুইমিং পুলে একজন প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে সাঁতার শিখতে পারেন। যদি তোমার বাড়িতে কোন সুইমিং পুল থাকে, তা হলে সেখানেও তুমি তোমার বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের সদস্যদের সাথে একত্রিত হতে পার। একটি গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, ব্যায়াম এবং এ রকম সামাজিক মিলন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটায়। এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের অবস্থা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, যারা এ ধরনের খেলাধুলার সাথে জড়িত তারা তাদের অন্যান্য সহকর্মী ও বন্ধু-বান্ধবের তুলনায় মানসিকভাবে প্রফুল্ল ও নিরুদ্বিগ্ন থাকে।
২. লক্ষ্যের পানে ধাবিত হওয়ার শিক্ষা
সাঁতারুরা তাদের ব্যক্তিগত ও পেশাদারী জীবনে লক্ষ্য অর্জনের দিকে বেশি ঝোঁকপ্রবণ হয়ে থাকে। সাঁতার সকল বয়সের মানুষকে লক্ষ্যপানে চলার ব্যাপারে প্রেরণা যোগায়। টাইমিংয়ের উন্নতির জন্য পুলের কিকবোর্ডে কিক করা অথবা কোন আঘাত থেকে সেরে ওঠার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ ও তা অর্জনে সাঁতার অতুলনীয় ভূমিকা পালন করে। সাঁতারুরা সুইমিং পুলে যে কৌশল ও দক্ষতা শিক্ষা লাভ করে তা জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও তাকে দারুনভাবে সহযোগিতা করে।
৩. সক্রিয় কর্মী হয়ে গড়ে ওঠা
সাঁতার শিশু-কিশোরদের স্থূলতা মোকাবিলায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে এবং এটি তাদের জন্য একটি আনন্দদায়ক খেলাও বটে। শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যে তিনটি শারীরিক কর্মকা-ের উপদেশ দেয়া হয়ে থাকে অর্থাৎ সহ্যক্ষমতা, শক্তি এবং নমনীয়তা বৃদ্ধি, তার সবই সাঁতারে রয়েছে। সাঁতার শিশু-কিশোরদেরকে দক্ষ এবং স্বাস্থ্যবান হিসেবে গড়ে উঠতে উদ্দীপনা যোগায়।
৪. আরো বেশি স্মার্ট করে তোলা
প্রতিনিয়ত ব্যায়াম করা, যেমন সাঁতার কাটা বুদ্ধিবৃত্তিক ক্রিয়া ও চিন্তাশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি শুধু শ্রেণিকক্ষ বা কাজের ক্ষেত্রে নয়, এটি বয়স বৃদ্ধির পরও উপকারী। সাঁতার উদ্বিগ্নতা এবং দুশ্চিন্তা দূরীকরণে সাহায্য করে যার ফলে আমাদের মস্তিষ্কের যথার্থভাবে চিন্তা করার সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পায়।
৫. দল গঠনের দক্ষতা শিক্ষা
সাঁতার এমন একটি খেলা যেখানে দল গঠনের দক্ষতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। সাঁতারুরা একত্রে কাজ করতে শেখে, একে অপরকে সাহস যোগাতে, পরস্পরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে শেখে এবং এভাবে দলকে নেতৃত্ব দেয়ার দক্ষতা অর্জন করে। বয়োপ্রাপ্ত হলে এ সকল দক্ষতা একজন কার্যকরী নেতা হতে সাহায্য করে। দল গঠনের দক্ষতা সহযোগিতা বৃদ্ধি, লক্ষ্য অর্জনের দিকে ঝোঁক, উদ্দীপনা, কৌশলগত উন্নয়ন ও সমন্বয় সাধনে উদ্বুদ্ধ করে যা সফল পেশা এবং পেশাদারী সম্পর্ক তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
৬. জগিং এর তুলনায় বেশি ক্যালোরি ব্যয়
যখন তুমি সাঁতারের সাথে দৌড়ানোর তুলনা করবে, তখন দেখতে পাবে যে, তুমি সাঁতারের সময় পুলের প্রতি পাকে এক ঘণ্টা দৌড়ানোর তুলনায় বেশি ক্যালরি ব্যয় করছ। সবলে এক ঘণ্টা পুকুরে সাঁতার কাটলে ৭১৫ ক্যালরি খরচ হয়। একই পরিমাণ সময় ঘণ্টায় ৫ মাইল বেগে দৌড়ালে ৬০৬ ক্যালরি খরচ হয়।
৭. বার্ধক্যের আগমন হয় বিলম্বিত
এমন কোন গোপন ঔষধ নেই যার মাধ্যমে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা যাবে, কিন্তু সুইমিং পুল হলো যৌবনের ঝরনাস্বরূপ। নিয়মিত সাঁতার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, মাংসের ঘনত্ব বৃদ্ধি, ব্রেনে অক্সিজেন ও রক্ত চলাচল সহজকরণ এবং হৃদপি- ও রক্তনালি সংক্রান্ত অন্ত্রসমূহের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বার্ধক্যের আগমনকে বিলম্বিত করে। সাঁতারের মাধ্যমে শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। বয়স্ক ব্যক্তি যারা বাতের ব্যথায় আক্রান্ত তারা পুকুরে সাঁতারের মাধ্যমে নমনীয়তা বৃদ্ধি করতে পারেন ও অস্থিসন্ধির জ্বালাপোড়া বা ব্যথা কমাতে পারেন। সর্বোপরি, এই খেলা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
৮. হাঁপানি রোগের ক্ষেত্রে উত্তম একটি ব্যায়াম
যাদের ফুসফুসের জটিল সমস্যা, যেমন হাঁপানি আছে, তাদের জন্য সাঁতার উত্তম ও কার্যকরী ক্রীড়া। হাঁপানি রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, বিশেষ করে খেলার সময় তাদের হাঁপানি শুরু হয়। তারা সমস্যায় পড়ে এজন্য যে, এসময়ে শ্বাসনালি তাপ ও আর্দ্রতা হারানোর ফলে সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। আর এটি তখনই ঘটে যখন বাতাস আর্দ্র বা ঠা-া থাকে সে সময়। সাঁতার হাঁপানি রোগীদের জন্য সর্বোত্তম চিকিৎসা। কারণ, যে আর্দ্রতা শরীর থেকে বের হয়ে যায় তা পানির আর্দ্রতায় মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত হয়।
৯. আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলা
সাঁতার আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার একটি খেলা। অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিন বিশ্ববিদ্যালয় একটি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ পেয়েছে যে, তরুণ সাঁতারুরা তাদের অসাঁতারু বন্ধুদের চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়। এটি প্রতিযোগী ও অপ্রতিযোগী উভয় ধরনের প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যই সত্য। সাঁতার পুলের ভেতরে বা উন্মুক্ত পানিতে যেমন আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, তেমনি স্থলেও আত্মবিশ্বাস জোগায়।
১০. স্বল্প উপকরণের খেলা
সাঁতার পৃথিবীর সর্বোত্তম খেলাগুলোর অন্যতম এবং এ খেলার জন্য খুব কম জিনিসের প্রয়োজন হয়। তুমি শুধু একটি সাঁতারের পোশাক ও একটি গগল্স নিয়েই সাঁতার কাটতে পারবে।
প্রকৃতপক্ষে সাঁতারের মাধ্যমে তুমি অনেক ধরনের উপকারিতা লাভ করতে পার। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাঁতার কাটা শুরু কর। পানিতে ঝাঁপিয়ে পড় এবং এর মজা উপভোগ কর। তোমার জীবন, স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার অনেক কিছুই এর ওপর নির্ভর করছে।

অনুবাদ : সরকার ওয়াসি আহম্মেদ