শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

English

গারো পাহাড়ে সবুজ মাল্টা

পোস্ট হয়েছে: আগস্ট ১৬, ২০১৭ 

news-image

সবুজ পাতায় পরিবেষ্টিত গুচ্ছ আকৃতির গাছে ধরেছে সবুজ মাল্টা। ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে প্রতিটি গাছ। গাছপ্রতি গড়ে শতাধিক ফল ধরেছে। পাঁচ-ছয় ফুট উচ্চতার ডালপালা আর ফলের আকৃতি ও গঠন বর্তমানে বিদেশ থেকে আমদানি করা মাল্টা অপেক্ষা হৃষ্টপুষ্ট এবং রসাল। বারি মাল্টা-১ নামের উন্নত জাতের মাল্টা চাষ করে সফল হয়েছেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার হাজি মোশারফ হোসেন। তিনি একা নন, গারো পাহাড়ের পাদদেশে সীমান্তবর্তী এই উপজেলার চার শতাধিক কৃষক বসতবাড়িতে ও ব্লক (৪০ শতক জায়গায় ১০০টি ফলের গাছ) আকারে মাল্টা চাষ করছেন। এই এলাকার কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত এই উন্নত জাতের বারি মাল্টা-১।

২০০৩ সালে মাল্টার এই উন্নত জাত উদ্ভাবন করেন বাংলাদেশের কৃষি গবেষকেরা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এখন এটা চাষ হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইংয়ের সহযোগিতায় ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন পাহাড়ের ঢালে দুই একর জমিতে ৫৮০টি বারি-১ নামের উন্নত জাতের মাল্টার চারা লাগান। এ বছর তাঁর বাগানে প্রায় সব গাছে ফল ধরেছে। দেড় শতাধিক গাছে ধরেছে ৮০-১০০টি করে মাল্টা। উপজেলার পাহাড়ি জমি, মাটি আর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২০১৪ সাল থেকে উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় মাল্টা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে পাহাড়ের টিলা ও ঢালে, সমতলের বসতবাড়িতে মাল্টা চাষ করতে ৩৬১ জন কৃষককে ৪ হাজার ৩৩২টি আর ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্লকের জন্য ৭৯ জন কৃষককে ৭ হাজার ৯০০ লেবুজাতীয় (মাল্টা, কমলা ইত্যাদি) ফলের চারা বিনা মূল্যে দেওয়া হয়েছে। তবে লেবুজাতীয় ফলের মধ্যে পাহাড়ি জমিতে মাল্টার ফলন আশাব্যঞ্জক।

সম্প্রতি রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের কালাকুমা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে সীমান্তবর্তী পাহাড়ের ঢালে মোশারফ হোসেনের মাল্টার বাগান। বাগানে প্রায় প্রতিটি গাছের ডালে থোকায়

থোকায় সবুজ রঙের মাল্টা ঝুলে আছে। বাগান পরিচর্যাকারী শামসুল হক বললেন, ‘আমি ৫৮০টা গাছ নিয়মিত পরিচর্যা করি। এবার কোনো কোনো গাছে ১৩০টি পর্যন্ত ফল ধরেছে।’

মোশারফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাগানের মাল্টা বড় ও সুমিষ্ট। পাহাড়ি এলাকায় মাল্টার উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখে এখন অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়েছেন।’

বারি মাল্টা-১ গাছে মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল আসে। আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ফল পাকে। মাল্টার রং গাঢ় সবুজ হয়। তবে পাকলে কিছুটা হালকা সবুজ রং হয়। মিষ্টতা ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। ৫-৬টা মাল্টা ওজনে এক কেজি হয়। ঠিকভাবে পরির্চযা করলে একটি পরিণত গাছে গড়ে ১৫০ থেকে ৩০০টি পর্যন্ত ফল ধরে। একটি গাছ সাধারণত ১৫ বছর পর্যন্ত পরিপূর্ণভাবে ফল দেয়।

নয়াবিল ইউনিয়নে মাল্টা বাগান করেছেন আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ঢালকুনা এলাকায় পাহাড়ের টিলায় এক একর জমিতে ২০১৫ সালে ১০০টি মাল্টা চারা লাগিয়েছি। এ বছর প্রতিটা গাছে গড়ে ৬০-৭০টি করে ফল এসেছে। বাগানের চেহারা অনেক ভালো। আগামী দিনে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ করার কথা ভাবছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফ ইকবাল বলেন, পাহাড়ি এলাকায় মাল্টা চাষে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। ধাননির্ভর এ এলাকায় মাল্টার মতো উচ্চমূল্যের ফসল আবাদ করলে সাধারণ কৃষক অনেক লাভবান হবেন।

শেরপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন,শেরপুর জেলার পাহাড়ি এলাকায় মাটির গুণাগুণ ভালো থাকায় বারি-১ জাতের মাল্টা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সাধারণ কৃষকদের মাঝে বাণিজ্যিকভাবে বাগান তৈরিতে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। – প্রথম আলো।