শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

English

ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর রচনাবলি এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় তাঁর অবদান

পোস্ট হয়েছে: সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৫ 

news-image

ওস্তাদ রেযা ওস্তাদী

এ যাবত হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর রচনাবলি সম্বন্ধে অজস্র লেখালেখি ও আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আমার জানা মতে এখনও তাঁর অসামান্য অবদানগুলো সম্পূর্ণ প্রকাশ পায়নি। এ কারণে আমি চিন্তা করলাম যে, এ প্রসঙ্গে একটি প্রবন্ধ রচনায় হাত দেব। আমি আশা করি, এর দুর্বল দিকগুলো পাঠক-পাঠিকাগণ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে কয়েকটি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করার চেষ্টা করব।

এক. হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর ১৩৪০ হিজরিতে ঐতিহাসিক ধর্মীয় নগরী কোমে পদার্পণ করা থেকে ১৩৫৫ হিজরি পর্যন্ত অর্থাত মরহুম আলহাজ শেখ আবদুল করিম হায়েরী ইয়াযদীর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি যে সকল বিশিষ্ট শিক্ষকের সান্নিধ্যে পড়াশুনা করেন ও ফয়েয লাভ করার সৌভাগ্য অর্জন করেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন :

১. আলহাজ মির্জা জাওয়াদ মালাকী তাবরিযী। ‘আসরারুস সালাত’ (اسرار الصلاة) ও অন্যান্য গ্রন্থ প্রণেতা, মৃত্যু ১৩৪৩ হিজরি।

২. মির্জা সাইয়্যেদ আলী ইয়াসরাবী কাশানী। তিনি ১৩৪১ থেকে ১৩৪৭ হিজরি পর্যন্ত কোমে অবস্থান করেন।

৩. আলহাজ মির্জা আবুল হাসান রাফিঈ কাজভিনী। তিনি হলেন ‘শারহে দোয়ায়ে সাহর’ (شرح دعاء سحر) নামক গ্রন্থের প্রণেতা। তিনি ১৩৪১ থেকে ১৩৪৯ হিজরি পর্যন্ত কোম নগরীতে ছিলেন।

উল্লেখ্য, কোমের বিশিষ্ট শিক্ষক সোবহানী বলেন, হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.) ‘হাইআত’  (هيئت) নামক কিতাবও মির্জা আবুল হাসান রাফিঈর কাছে অধ্যয়ন করেন।

৪. জনাব শেখ মুহাম্মাদ রেযা মাসজেদ শাহী। তিনি ‘বেকায়াতুল আযহান’ (وقاية الاذهان) নামক গ্রন্থের প্রণেতা। তিনি ১৩৪৪ থেকে ১৩৪৬ হিজরি পর্যন্ত কোমে ছিলেন।

৫. মির্জা মুহাম্মাদ আলী শাহ আবাদী। তিনি ‘রেশহাতুল বিহার’ (رشحات البحار) নামক কিতাবের রচয়িতা। তিনি ১৩৪৭ থেকে ১৩৫৪ হিজরি পর্যন্ত কোমে জীবনযাপন করেন। হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.) সাত বছর এ মহান শিক্ষকের সার্বক্ষণিক সান্নিধ্যে থেকে পরিপূর্ণ ফয়েয লাভে সক্ষম হন।

৬. আলহাজ শেখ আবদুল করিম হায়েরী ইয়াযদী। তিনি হলেন ধর্মীয় নগরী কোমের দীনি মাদরাসার (হাওযায়ে ইলমিয়া কোম) প্রতিষ্ঠাতা এবং বিশিষ্ট কিতাব ‘দুরারুল ফাওয়ায়েদ’ (درر الفوائد) এর প্রণেতা। হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.) ১৩৪৫ থেকে ১৩৫৫ হিজরি পর্যন্ত এ মহান শিক্ষকের নিকট ইলমে উসূল ও ফেকাহশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন।

দুই. ১০টি বিষয়ের ওপর ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর লিখিত কিতাবগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে দেওয়া হলো :

১. আধ্যাত্মিকতা (عرفان) : এ বিষয়ের ওপর তাঁর লিখিত বহু কিতাব বিদ্যমান। ১৩৪৭ থেকে ১৩৫৫ হিজরি পর্যন্ত তিনি এসব কিতাব লিপিবদ্ধ করেন।

২. নৈতিকতা (اخلاق) : এ বিষয়ের ওপরও তিনি ফারসি ভাষায় বিভিন্ন কিতাব লিখেছেন এবং তা ১৩৫৫ থেকে ১৩৬০ হিজরির মধ্যে রচনা করেন। এ ছিল এমন একটি সময় যখন তিনি কোমের বিশ্ববিখ্যাত মাদরাসায়ে ফায়যিয়াতে চরিত্র গঠনের উদ্দেশ্যে আধ্যাত্মিকতা ও নৈতিকতার ওপর গুরুত্বপূর্ণ র্দাস পেশ করতেন।

৩. দর্শন (فلسفه) : তিনি দর্শনের বিখ্যাত কিতাব ‘আসফার’ গ্রন্থের ওপর টীকা লেখেন বলে ধারণা করা হয়। কোমের একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সাপ্তাহিক কায়হান পত্রিকার ১১ ও ১৮তম সংখ্যায় এ ধরনের একটি মতামত ব্যক্ত করেছেন।

৪. প্রামাণিক ফেকাহ (فقه استدلالی) : প্রামাণিক ফেকাহ বিষয়ে ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর বিভিন্ন গ্রন্থ আছে যেগুলো তিনি ১৩৬৫ হিজরিতে নাজাফ থেকে ইরানে প্রত্যাবর্তন অর্থাত ১৩৬৫ থেকে প্রায় ১৩৯৭ হিজরির মধ্যে লিখেছেন।

৫. উসূলে ফেকাহ (اصول فقه) : এ বিষয়ের ওপরও ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর লেখা বিভিন্ন কিতাব রয়েছে এবং তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণও বটে, যা তিনি ১৩৭০ থেকে ১৩৭১ হিজরির মধ্যে লেখেন।

৬. ইলমে রেজাল (علم رجال) : ব্যক্তি পরিচয়বিদ্যা। এ বিষয়ের ওপর ইমামের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও মন্তব্য তাঁর রচিত ‘তাহারাত’ (طهارت) গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে।

৭. জরুরি মাসায়েল সম্পর্কিত দৈনন্দিন প্রয়োজন পড়ে এমন রেসায়েল। যেমন ‘রেসালাতুল আমালিয়াহ’ (رسالة العملية) : হযরত ইমাম খোমেইনী তাঁর অনুসারীদের জন্য যে সকল রেসালা ও তার হাশিয়াসমূহ লিখেছেন এবং উক্ত রেসালা ও হাশিয়া ইমামের প্রসিদ্ধ কিতাব ‘তাহরীরুল ওয়াসিলা’ (تحرير الوسيله) এর অন্তর্ভুক্ত নয় এবং তা লেখা হয়েছে ১৩৭০ হিজরির আগে।

৮. রাষ্ট্রবিজ্ঞান (حكومت) (সরকার পরিচালনা পদ্ধতি) : এ বিষয়ে ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী কিতাব ‘বেলায়াতে ফকীহ’ এবং সমস্ত ভাষণ, বিবৃতি ও রচনার সমষ্টি যা বিপ্লবের বিজয়ের পর হয়েছে।

৯. ইমামত ও ধর্মীয় নেতৃত্ব  (امامت و روحانيت): এ প্রসঙ্গে আমরা ‘কাশফুল আসরার’ (كشف الاسرار) নামক কিতাবটির কথা উল্লেখ করতে পারি যা ১৩৬৩ হিজরিতে লেখা হয়েছে।

১০. কবিতা (কাব্য)-شعر  : ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর সমস্ত কবিতার সমষ্টি যা ‘দিওয়ান’ (কাব্যসমগ্র) হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছে।

তিন. উল্লেখ করা যেতে পারে যে, হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.) আয়াতুল্লাহ আল-উযমা বুরুজেরদীর ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত অর্থাত ১৩৭০ হিজরি পর্যন্ত সাধারণ সমাজে তেমন প্রসিদ্ধি লাভ করেননি। বরং তাঁর ইন্তেকালের পর আলেমসমাজের আন্দোলন শুরুর প্রাক্কালে ১৫ খোরদাদের (১৩৪২ সৌরবর্ষের) ঐতিহাসিক ঘটনার পর মানুষ কিছু কিছু করে ইমামের মহান ব্যক্তিত্ব ও কর্মকা-ের সাথে পরিচিত হয়। কথাটা কিছুটা বাস্তব হলেও এমন নয় যে, ১৩৪২ সৌরবর্ষের আগে ইমাম একবারেই সমাজে আত্মগোপন করেছিলেন বা অপরিচিত ছিলেন; বরং কোমের দীনি মাদরাসা (হাউযায়ে ইলমিয়া কোম) ছাড়াও সারা দেশের অসংখ্য আলেম এবং দীনি মাদরাসা তাঁর প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের সাথে পরিচিত ছিল। এমনকি বিপ্লবের পূর্বেই বিভিন্ন বইপত্রে তাঁর রচনাবলি, ব্যক্তিত্ব ও কর্মকা- নিয়ে কমবেশি আলোচনা ও লেখালেখি হতো। এ প্রসঙ্গে লিখিত বইসমূহের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে :

১. নোকাবাউল বাশার  (نقباء البشر)- লেখক আল্লামা আলহাজ আগা বুজুর্গ তেহরানী।

২. আল-জারিয়াহ ইলা তাসানি ফিশশিয়া (الذريعة الى تصانيف في الشيعة)- লেখক : আলহাজ আগা বুজুর্গ তেহরানী।

৩. ফারসি গ্রন্থপঞ্জি : রচনায় মরহুম খান বাবা মাশার।

৪. আরবি গ্রন্থপঞ্জি : মরহুম খান বাবা মাশার।

৫. লেখকের গ্রন্থপঞ্জি : মরহুম খান বাবা মাশার।

৬. আছারুল হুজ্জাত (اثار الحجة) :  ১৩৭৩ হিজরিতে রচনা করা হয়েছে।

৭. রেজালে কোম (رجال قم) : রচনায় সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ মোকাদ্দাস জাদেহ। ১৩৩৫ সৌরবর্ষে প্রকাশিত।

৮. আইনেহ-ই দানেশওয়ারান (آئينه دانشوران) : ১৩৫১-১৩৫৩ হিজরি পর্যন্ত রচনা ও ১৩৫৩ হিজরিতে প্রকাশিত। এই সময় ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর বয়স হয়েছিল ৩২ বছর এবং উল্লেখ করা হয় যে, যে সকল জ্ঞানী ও মর্যাদাশীল ব্যক্তি জনাব শাহ আবাদীর কাছে অধ্যয়ন করার ও দীর্ঘকাল তাঁর আধ্যাত্মিক ও নৈতিক শিক্ষা লাভের সৌভাগ্য অর্জন করেছেন সাইয়্যেদ রুহুল্লাহ ছিলেন তাঁদেরই একজন। এ পরিপ্রেক্ষিতে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে সামান্য পরিবর্তন করে এভাবে বলব যে, জনাব সাইয়্যেদ রুহুল্লাহ (হযরত ইমাম) জনাব সাইয়্যেদ মোস্তফার সর্বকনিষ্ঠ সন্তান- যিনি খোমেইন শহর ও তার আশপাশের এলাকার জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে ছিলেন এবং ১৩২১ হিজরিতে ওই এলাকার একজন কুখ্যাত খুনীর হাতে তিনি (সাইয়্যেদ মোস্তফা) শাহাদাতবরণ করেন। তাঁর দাদা সাইয়্যেদ আহমদ- প্রসিদ্ধ ‘সাইয়্যেদ হিন্দি’ ছিলেন ভারতের অধিবাসী। একসময় তিনি ভারত থেকে ইরানে এসে কোম থেকে ১৯৫ কি.মি. দূরে জীবনযাপন শুরু করেন।

হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.) ১৩২০ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৩৩৯ হিজরি অর্থাত ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত ইমাম তাঁর জন্মস্থান থেকে দূরে কোথাও সফর করেননি। যেহেতু জন্মস্থানেই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন করেন সেহেতু ফারসি সাহিত্যের ওপর কিছু পড়াশুনা ছাড়া তেমন কোন উল্লেখযোগ্য পড়াশুনা সেখানে করেননি। সে বছরই আরাক শহরের অন্তর্গত সুলতান আবাদে এসে নিয়মিত পড়াশুনা শুরু করেন। হযরত আয়াতুল্লাহ হায়েরী যখন কোম শহরে চলে আসেন (হিজরত করেন) ইমাম খোমেইনীও তাঁর সাথে কোমে চলে আসেন এবং নিজের মূল্যবান সময়কে সারাক্ষণ সাদরুল মুতাআল্লিহীন  (মোল্লা সাদরা)-এর গ্রন্থসমূহ অধ্যয়নে কাজে লাগান। এরপর কয়েক বছর ধরে জনাব মির্জা মুহাম্মাদ আলী শাহ আবাদীর সান্নিধ্যে আধ্যাত্মিক জ্ঞান হাসিল করেন এবং সাথে সাথে কোমের দীনি শিক্ষায় আয়াতুল্লাহ পর্যায়ের অধ্যয়নে জনাব আয়াতুল্লাহ হায়েরীর সান্নিধ্যে থাকেন।

তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে দোয়ায়ে মাছুরের টীকা- ‘শারহে বার দোয়ায়ে মাছুর সাহর হা’য়ে মাহে রামাযান’ (شرح بر دعاء مأثور، سحر هاء ماه رمضان)- এ বইটি ১৩৪৭ হিজরিতে সমাপ্ত হয়। তাঁর অপর গ্রন্থ হচ্ছে ‘মিসবাহুল হেদায়া ফি হাকিকাতিল খালাকাহ’ (مصباح الهدايه في حقيقة الخلاقة)।

তিনি অন্যান্য যেসব গ্রন্থের টীকা লেখেন সেগুলোর মধ্যে ‘কাজী সায়ীদ কোমীর রেসালা’

(رساله قاضي سعيد قمي) অন্যতম যেটাকে ইমামিয়া মাযহাবের আধ্যাত্মিকতার সনদ হিসেবে চিহ্নিত করা যায় এবং তা ‘রা’সূল জালূত’ (رأس الجالوت) নামে হাদীস গ্রন্থের شرح (শারহ) বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ। তাঁর নিজের বইয়ের শারহ যা ১৩৪৮ হিজরিতে সমাপ্ত হয়। এ বইটি তাঁর আর একটি অবদান যেটি ‘শারহে ফুসুলুল হেকামে কায়সারী’ (شرح فصوص الحكم قسصري) নামে খ্যাত, কিন্তু এ বইটি অসম্পূর্ণ।

‘আইনেয়ে দানেশওয়ারান’ آئينه دانشوران নামক গ্রন্থের লেখক মরহুম আলহাজ সাইয়্যেদ রায়হানুল্লাহ ইয়াযদী ১৩৭৮ হিজরিতে অথবা এর দু’তিন বছর পরে এ বইটির দ্বিতীয় সংস্করণের নতুন পরিশিষ্টে বলেন, ‘আমার এ কিতাবটি লেখার ইতিহাসে হাউযায়ে ইলমিয়া কোম এর ছাত্রদের মধ্যে আধ্যাত্মিকতা ও দর্শন বিষয়ে আগ্রহী, সাদরুল মুতাআল্লেহীনের কিতাব অধ্যয়নকারীদের মধ্যে জনাব আলহাজ রুহুল্লাহ খোমেইনী ছিলেন এমন এক ব্যক্তি যাঁর আধ্যাত্মিকতার ওপর লেখা হৃদয় হরণ করা কবিতাগুলো আমরা- ছাত্রদের জন্য প্রতিদিন আবৃত্তি করা যেন একটি কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাঁর লেখা গযলগুলো এমন ছিল যে, আজও তা আমরা ভুলে যাইনি। আজও তাঁর কবিতাগুলো আমাদের মনে পড়ে। যেমন : তিনি লিখেছেন :

‘আমি আমার বন্ধুর প্রেমে

নিজের হৃদয় অতিক্রম করে চলেছি

আপনজন ও দেশ থেকে

অন্তরকে বিচ্ছিন্ন করেছি।’

দর্শন, আধ্যাত্মিকতা ও চরিত্র গঠনে ইমামের রচনাবলি

১. শারহে দোয়ায়ে সাহ্‌র  (شرح دعاء سحر) : আরবিতে লেখা এ বইটি এই বাক্যগুলো দিয়ে শুরু হয় : হযরত ইমাম রেযা (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, ইমাম বাকের (আ.) এ দোয়াটি রমযান মাসের সেহরীতে পাঠ করতেন। এ দোয়াটির বিভিন্ন টীকা ও ব্যাখ্যা রয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো হযরত ইমামের- যা ১৩৪৭ হিজরিতে তাঁর ২৭ বছর বয়সে তিনি লিখেছিলেন।

হযরত ইমামের এ কিতাবটি তাঁর আধ্যাত্মিক কিতাবগুলোর একটি। তাঁর অন্যান্য কিতাব, যেমন ‘মিসবাহুল হেদায়াহ’ (مصباح الهدايه) শুধু তাঁরাই বুঝতে পারবেন দর্শন ও আধ্যাত্মিকতার সাথে যাঁদের পূর্ব পরিচয় আছে।

হযরত মরহুম শাহ আবাদী যে বছর কোমে পদার্পণ করেন, সে বছরই এ বইটি লেখা হয়; বইটির দু’ জায়গায় তাঁর বাণী ও লেখা উল্লেখ করা হয়েছে। এ বইটি জনাব শাহ আবাদীর ছাত্র থাকাকালে প্রথম বছরে লেখা। এর প্রমাণ হলো হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.) তাঁর ওস্তাদ জনাব শাহ আবাদীর সাথে প্রথম সাক্ষাতে বলেছিলেন, ‘আমি দর্শন বিষয়ে আগেই অধ্যয়ন করেছি, আধ্যাত্মিকতার ওপর চর্চা করেছি এবং এ বিষয়ে শিক্ষকের সান্নিধ্য পেয়েছি।’ এ বইটির এক স্থানের উদ্ধৃতি একথার সাক্ষ্য বহন করে। তিনি বিভিন্ন স্থানে দলিল আনতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন : ‘আমি এ বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞের কাছে শুনেছি’। এ কথাটা কয়েকবার তিনি বিভিন্নভাবে উল্লেখ করেছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বুঝতে পারি যে, যাঁর কাছে বা যাঁদের কাছে শুনেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন তাঁরা জনাব শাহ আবাদী নন; বরং অন্য কেউ। কারণ, জনাব শাহ আবাদী সম্বন্ধে বলতে গেলে তিনি সব সময় ‘আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক’ শব্দটি ব্যবহার করতেন। উপরিউক্ত কিতাবটি মূলত আরবি ভাষায় লিখিত। বিপ্লবের বিজয়ের পর তা ফারসি ভাষায় অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছে।

২. মিসবাহুল হেদায়া আলে আল খেলাফা ওয়াল বেলায়াহ (مصباح الهدايه آل الخلافه و الولايه) : এ বইটিতে হাকীকতে মুহাম্মাদিয়া (حقيقت محمديه) ও হযরত আলীর বেলায়াত (ولايت علويه) সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এটিও আরবি ভাষায় লিখিত। ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পর এর ফারসি অনুবাদ প্রকাশিত হয়। ১৯৭০ সালে (১৩৪৯ ফারসি সালে) বইটি লেখা সমাপ্ত হয়েছিল। এ বইটিও ‘শারহে দোয়ায়ে সাহর’ (شرح دعاء سحر) এর ন্যায়। যাঁরা আধ্যাত্মিকতার সাথে পরিচিত শুধু তাঁদের কাছে এ গ্রন্থটি বোধগম্য হতে পারে।

বইটির শেষের দিকে হযরত ইমাম খোমেইনী আলেম ও রুহানী ব্যক্তিত্বদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ এবং নসিহত করেন।

ইমাম খোমেইনী (রহ.) তাঁর অন্যান্য কিতাবের মধ্যে, যেমন ‘সিররুস সালাত’ (سر الصلاة) এবং এ কিতাবটির টীকায় উক্ত কিতাবটির (মিসবাহুল হেদায়া)-এর উদ্ধৃতি দেন।

এ কিতাবটিতে তিনি প্রথমটির ন্যায় বেশ কয়েকটি কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। যেমন : কাজী সাঈদ কোমীর ‘শারহে তাওহীদে সাদুক’ (شرح توحيد صدوق), ‘আল বাওয়ারেকুল মালাকুতিয়াহ (البوارق الملكوتية), মোলভীর ‘মিফতাহুল গাইব’ (مفتاح الغيب), কায়ছারির ‘শারহে ফুছুছ’ (شرح فصوص), ইবনে ফারেজ আবদুর রাজ্জাক কাশীর কাসীদার ব্যাখ্যা (شرح قصيده ابن عبد الرزاق كاشى) এবং জনাব মোহাম্মদ রেযা কামশেইর ‘রেসালাহ দার-তাহকীকে আসফারে আরবাআ’ (رساله در تحقيق اسفار اربعه) থেকে এ বইয়ে উদ্ধৃতি এবং বর্ণনা দেয়া হয়েছে এবং তার ওপরে সমালোচনাও করা হয়েছে। এভাবে জনাব মহিউদ্দীন ও তাঁর শ্রদ্ধেয় ওস্তাদ জনাব শাহ আবাদীর কথাও কয়েক স্থানে উল্লেখ করেন।

৩. লিকা আল্লাহ (لقاء الله) : ফারসি ভাষায় সাত পৃষ্ঠার একটি প্রবন্ধ। এর মধ্যে ইমাম তাঁর শ্রদ্ধেয় ওস্তাদ জনাব শাহ আবাদীর স্মৃতি তুলে ধরেন। এ প্রবন্ধটি মরহুম আলহাজ মির্জা জাওয়াদ মালাকীর ‘লিকা আল্লাহ’ (لقاء الله) এর শেষে প্রকাশিত হয়।

৪. সিররুস সালাত : সালাতুল আরেফিন ইয়া মেরাজুস সালেকীন (سر الصلاه: صلاة العارفين يا معراج السالكين) (ফারসি) : এ বইটি বিশেষ করে আধ্যাত্মিকতার সাথে যাঁরা পুরোপুরি সম্পৃক্ত তাঁদের জন্য লেখা হয়েছে। ১৩৫৮ হিজরিতে বইটি লেখা শেষ হয় এবং এ যাবত এর দুটি সংস্কারণ প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম সংস্করণ সরাসরি এবং দ্বিতীয় সংস্করণ শহীদ মোতাহহারী (রহ.)-এর স্মৃতির স্মরণে।

‘আদাবুস সালাত’ (آدب الصلاة) নামে তাঁর অন্য একটি গ্রন্থে তিনি বলেন : ‘কিছুদিন আগে এ গ্রন্থটি সমাপ্ত করি। নামাযের আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্যের সামান্য কিছু সহজ করে আমি সেখানে উপস্থাপন করেছি। যেহেতু এ বইটির সাথে সাধারণ মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই (অর্থাৎ সাধারণের বোধগম্যের বাইরে) সেহেতু এতে আমি আল্লাহ পাকের সাথে একটি আন্তরিক মিলনের সূত্রকে তুলে ধরেছি। হয়তো এতে ঈমানদার ভাইদের অন্তরে একটি অনুভূতি ও প্রতিক্রিয়ার উদ্রেক হতে পারে।

এ বইটিতে ‘শহীদে সানী’ ও মরহুম জনাব শাহ আবাদীর ‘আসরারুস সালাত’ (اسرار الصلاة) থেকে  বর্ণনা দেয়া হয়েছে এবং তাঁর নিজের লেখা ‘শারহে আরবায়ীন’ (شرح اربعين) এর দিকে ইঙ্গিত করা হয়। এ কারণে বোঝা যায় যে, উক্ত বইটি ‘শারহে আরবায়ীন’ (شرح اربعين) এর পরে লেখা হয়েছে। অথবা তা লেখার সময় এ বইটিও তিনি লিখছিলেন। প্রথম সংস্করণের ৬৭ পৃষ্ঠায় তিনি বলেন : ‘যদি আরেফ দরবেশদের কাউকে চিনতে না পার তবে সুফি দরবেশদের মধ্যে উচ্চ স্থানীয় নৈতিক ও আধ্যাত্মিকভাবে যাঁরা স্বীকৃত তাঁদের অনুগত হও, যেমন মাওলানা সাইয়্যেদ ইবনে তাউস (রহ.), শেখ জলিল বাহায়ী (রহ.), শেখ মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী মাজলিসী (রহ.) এবং জনাব মাওলানা মাজলিসীর সুযোগ্য পুত্র শাইখুল মুহাদ্দিসীনদের মতো ব্যক্তিদের কিতাব। ‘শারহে ফাকিয়েহ’ জনাব মাওলানা মাজলিসী আউয়াল এর একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী কিতাব যা ফারসি ভাষায় লেখা। কিতাবটি অধ্যয়ন কর; যদি কোনো স্থানে বুঝতে না পার তবে যারা বোঝে তাদের কাছে এসে বুঝে নাও। তার মধ্যে আধ্যাত্মিকতার চাবিকাঠি নিহিত। এভাবে মোল্লা মেহেদী নারাক ও জানাব মোল্লা আহমদ নারাকীর বইসমূহ এবং জনাব আলহাজ মির্জা জাওয়াদ তাবরিযী (রহ.)-এর কিতাবগুলো অধ্যয়ন করবে।’

৫. তা’লিকাতুন আলা শারহে ফুসুলুল হেকাম (تعليقة علي شرح فصوص الحكم) : ফুসুলুল হেকাম (فصوص الحكم) মুহিউদ্দিন আরাবির লেখা একটি গ্রন্থ। আরবি এ গ্রন্থটির ওপর টীকা লিখেছেন জনাব মাহমুদ কায়সারি। যে সাত বছর ইমাম খোমেইনী (রহ.) তাঁর ওস্তাদ জনাব মরহুম শাহ আবাদীর পবিত্র সান্নিধ্যে থাকার সুযোগ পেয়েছেন সে সময়েই ‘শারহে ফুসুস’ নামক কিতাবটি তিনি তাঁর কাছে অধ্যয়ন করেছেন। ‘শারহে ফুসুস’ এর (شرح فصوص) ওপর ইমাম যে টীকা-টিপ্পনি লিখেছেন তাও এ সময়ের মধ্যে। এ বইটিতে ইমাম তাঁর প্রণীত ‘মিসবাহুল হেদায়াহ’ (مصباح الهدايه) নামক বইটির দিকে ইঙ্গিত করেন এবং মরহুম শাহ আবাদীর কথাও স্মরণ করেন। ‘শারহে ফুসুস’ নামক বইটি ৪৯৫ পৃষ্ঠার। ইমাম তার ৩৯৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত টীকা লেখেন।

৬. তা’লিকাতুন আলা মিসবাহুল উন্‌স- تعليقة على مصباح الانس (আরবি)

সদরুদ্দীন মুহাম্মদ বিন ইসহাক কৌনভী সংকলিত গ্রন্থ হচ্ছে ‘মিফতাহুন আয়েবুল জাময়ে ওয়াল উজুদ’ (مفتاح عيب الجمع والوجود) । এর শারহ হচ্ছে ‘মিসবাহুল উন্স’- যা সংকলন করেন মুহাম্মাদ বিন হামযা বিন মুহাম্মাদ উসমানী, যিনি ইবনে কানারী নামে খ্যাত।

ইমাম খোমেইনী (রহ.) ‘মিসবাহুল উন্স’ নামক কিতাবটির ৪৪ পৃষ্ঠা পর্যন্ত (১৩৫০ হিজরি থেকে ১৩৫৪ হিজরি পর্যন্ত) তাঁর সম্মানিত শিক্ষক হযরত শাহ আবাদীর কাছে অধ্যয়ন করেন। এ বইটির প্রথম পৃষ্ঠার টীকায় তিনি উল্লেখ করেন : ‘আমি এর আগেও ইঙ্গিত করেছি যে, এ গ্রন্থটি আমি আমার সুযোগ্য ওস্তাদ শেখ মির্জা মুহাম্মাদ আলী শাহ আবাদী ইসফাহানীর পবিত্র সান্নিধ্যে থেকে অধ্যয়ন করি।’

এরপর তিনি গ্রন্থের ৪৪ পৃষ্ঠায় এভাবে উল্লেখ করেন : ‘এ পর্যন্তই আমি আমার সম্মানিত ওস্তাদ শাহ আবাদীর নিকট অধ্যয়ন করার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। তারপর তিনি তেহরানে মৃত্যুবরণ করলে আমি তাঁর কাছে শিক্ষা লাভের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হই।’

ইমাম খোমেইনী (রহ.) তাঁর এ মূল্যবান লেখাটি সম্ভবত যে রমযান মাসে ‘মিসবাহুল উন্স’ নামক বইটি জনাব শাহ আবাদীর কাছে অধ্যয়ন করেছেন যে রমযানেই লিখেছেন। এরপর তিনি তেহরানে চলে যাওয়ার পরও এর চর্চা অব্যাহত রাখেন। স্মরণ করা যেতে পারে যে, উক্ত বইটি ৩৪৩ পৃষ্ঠাবিশিষ্ট, এটি ১৪০৬ হিজরিতে প্রকাশিত হয়।

৭. তা’লিকাতুন আলা শারহে হাদীসিন রাসূল জালুত (تعليقة على شرح رأس الجالوت)

কাজী সাঈদ মুহাম্মাদ বিন মুহাম্মাদ মুফীদ কোমী ১১ শতাব্দীর একজন বিশিষ্ট সুফি ও আধ্যাত্মিক নেতা এবং পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর অসংখ্য লেখা ও রচনার মধ্যে উক্ত বই একটি। বইটি সম্বন্ধে হাজী আগা বুজুর্গ এর ‘জারিয়া’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। সম্ভবত ‘শারহে হাদীসে রাসূল জালুত’ রচনার উদ্দেশ্য হচ্ছে হযরত ইমাম রেযা (আ.) বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে বিভিন্ন সময়ে যে সকল বাহাস বা বিতর্ক করেছেন তারই একটি অংশ হবে এবং রাসূল জালুতে ইহুদি গ্রন্থেরও একটি অংশ হবে।

৮. শারহুন হাদীসে রাসূল জালুত (আরবি) شرح حديث رأس الجالوت : উপরিউক্ত গ্রন্থটি ছাড়াও ইমাম খোমেইনী (রহ.) সরাসরি একটি ব্যাখ্যা করেছেন এ নামে। ১৩৪৮ ফারসি সালে এ লেখাটি সমাপ্ত হয়। কিন্তু বইটি এখনও প্রকাশিত হয়নি।

৯. শারহুন হাদীসে রাসূল জালুত (شرح حديث رأس الجالوت) : মরহুম সাইয়্যেদ রায়হান উল্লা ইয়াযদী তাঁর বিখ্যাত বই ‘আয়েনায়ে দানেশইয়ারান’ গ্রন্থে এ গ্রন্থটি যে ইমাম খোমেইনী লিখেছেন তার সত্যতা স্বীকার করেছেন। বইটি ১৩৪৮ (ফারসি) সালে লেখা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।

১০. তাফসীরে সূরা হাম্‌দ (ফারসি)- تفسير سوره حمد : এটি একটি আধ্যাত্মিক তাফসীর। ইমাম খোমেইনী (রহ.) সূরা ‘হাম্‌দ’ এর ওপর বিপ্লবের শুরুর বছরগুলোতে ৫টি অনুষ্ঠানে যে বক্তব্য পেশ করেন পর্যায়ক্রমে তা প্রকাশিত হয় এবং তাফসীর হিসেবে সমাদৃত হয়। ইমাম খোমেইনী (রহ.) ‘কিতাবে সিররুস সালাত’ ‘সূরায়ে হাম্‌দ ও তাওহীদ’ নামে অত্যন্ত সংক্ষেপে আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যান। এ ছাড়াও ‘কিতাবে আদাবুস সালাত’ এ সূরা হাম্‌দ, তাওহীদ ও সূরায়ে কাদরের বিস্তারিত তাফসীর করেছেন। তবে এ তাফসীর সাধারণ মানুষের জন্য করা হলেও আধ্যাত্মিকতায় পূর্ণ থাকার কারণে ইমাম নিজেই এর এক জায়গায় লিখেছেন, ‘আমার ইচ্ছা ছিল এ লেখাগুলো থেকে সর্বসাধারণ উপকৃত হবেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এর মধ্যে আধ্যাত্মিক বিষয়বস্তুর ঊর্ধ্বে উঠতে পারিনি। তাই বিশেষ একটি মহল ছাড়া তা সবার পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়ে উঠবে না। এজন্য আমি ঈমানদার ও আলেমদের কাছে সবিনয়ে অপারগতা প্রকাশ করছি।’

ইমাম একদিন এক অনুষ্ঠানে সূরা আলাক এর ওপর বক্তব্য পেশ করেন যা পরবর্তীকালে ‘তাফসীরে সূরা আলাক’ নামে প্রকাশিত হয়।

১১. আল-হাশিয়াতু আলাল আসফার (আরবি)- الحاشية على الاسفار : মোল্লা সাদরার ‘আসফার’ নামক গ্রন্থটি যাঁরা অধ্যয়ন করেন ও অধ্যাপনার কাজে ব্যবহার করেন তাঁদের মধ্যে ইমাম খোমেইনী (রহ.) ছিলেন একজন এবং সম্ভবত এ গ্রন্থটির ওপর তিনি টীকাও লিখেছেন। ধর্মতাত্ত্বিক শিক্ষাকেন্দ্রের একজন বিশিষ্ট শিক্ষক এর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন : সাদরুল মুতাআল্লেহীনের (মোল্লা সাদরার) গ্রন্থ ‘আসফার’ এর ষষ্ঠ খণ্ডের ২য় ও ৩য় পৃষ্ঠায় একটি হাদীসের ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে ইমাম খোমেইনী (রহ.) একটি অকাট্য যুক্তি ও দলিল পেশ করে সামনে অগ্রসর হয়েছেন যার ওপর কথা বলার কারো ক্ষমতা হয়নি। দর্শনের ওপর ইমাম খোমেইনীর এ ছাড়া অন্য কোনো লেখা আছে বলে জানা যায়নি।

১২. আদাবুস সালাত (আরবি)- اداب الصلاة : এ গ্রন্থটি ইমাম খোমেইনী (রহ.) তাঁর ‘সিররুস সালাত’ নামক গ্রন্থটি লেখার পর লিখেছেন। ইমাম তাঁর লেখায় এভাবে উল্লেখ করেন : ‘কয়েকদিন আগে এ বইটি সমাপ্ত করি। নামায সম্পর্কিত কিছু আধ্যাত্মিক কথা সেখানে আমি তুলে ধরেছি। যেহেতু এ গ্রন্থটি সাধারণের বোধগম্যতার ঊর্ধ্বে, তাই কিছু আধ্যাত্মিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিষয় এতে সন্নিবেশিত করার সিদ্ধান্ত নেই।’ এ গ্রন্থটি জনাব ফেহরীর সম্পাদনা ও তত্ত্বাবধানে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়।

১৩. মোবারেজেহ বা’ নাফ্স ইয়া’ জিহাদে আকবার (ফারসি)- مبارزه با نفس يا جهاى اكبر- এটি চরিত্র গঠনের উদ্দেশ্যে লিখিত। আর এটি ইমামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান যা ইমাম ইরাকের নাজাফে থাকাকালীন ছাত্র ও আলেমদের উদ্দেশে রচনা করেন। প্রকৃতপক্ষে এটি তাঁর প্রদত্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ ও নসিহতের একটি সমষ্টি। এ পর্যন্ত এর কয়েকটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে।

১৪. শারহে হাদীসে জুনুদে আক্‌ল ওয়া জাহ্‌ল (ফারসি)- شرح حديث جنود عقل و جهل : ‘উসূলে কাফী’ নামক বিখ্যাত কিতাবে হযরত ইমাম সাদেক (আ.)-এর বর্ণনায় ‘বুদ্ধিমান ও নির্বোধের সেনাবাহিনী’ নামে বিবৃত ঘটনা প্রসঙ্গে কয়েকটি হাদীসের উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে সত্তরটির বেশি শিরোনাম রয়েছে। ইমাম খোমেইনী (রহ.) ফারসি ভাষায় এ সকল হাদীসের ২৫টির মতো ব্যাখ্যা ও টীকা লিখেছেন। নৈতিকতা ও চরিত্র গঠনের জন্য এ গ্রন্থটি অন্যতম। একজন ব্যক্তি ‘আখলাকে ইসলামী’ নামে বইটি তাঁর নামে তিন খণ্ডে প্রকাশ করেন। বইটি ইমামের স্বনামে প্রকাশ না হওয়ার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে জনৈক ব্যক্তি বলেন : বিপ্লবের পূর্বে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ইমামের সাথে সাক্ষাতের জন্য নাজাফ গমন করেন। তিনি ইমামের বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষিদের একজন ছিলেন। ফেরার পথে ইমাম উক্ত বইটির পাণ্ডুলিপি তাঁর হাতে দিয়ে প্রকাশ করার জন্য অনুমতি দেন। লোকটি শাহের সৈন্যসামন্তের ভয়ের অজুহাত দেখিয়ে কিছু পরিবর্তন করে বইটি তার নামে ছাপিয়ে দেয়। তবে এ কাজের জন্য সে ধিকৃত হয়। তবে গ্রন্থের ২য় খণ্ডের একটি অংশ ইমামের বলে স্বীকার করে। আমরা আশা করব এ বইটির মূল কপি শীঘ্রই খুঁজে পাওয়া যাবে এবং কোনো প্রকারের পরিবর্তন পরিবর্ধন ছাড়াই প্রকাশিত হবে এবং ধর্মতাত্ত্বিক শিক্ষাকেন্দ্রসমূহে (হাউযে ইলমিয়া) নীতিশাস্ত্রের পাঠ্য বই হিসেবে গণ্য হবে।

১৫. আরবাঈন- শারহে আরবাঈন (اربعین- شرح اربعین) : এ গ্রন্থে চল্লিশটি হাদীসের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তার মধ্যে ৩৩টি হচ্ছে নৈতিকতা সংক্রান্ত এবং অপর ৭টি হচ্ছে আকীদাগত। এর শুরুতে তিনি উল্লেখ করেন : গ্রন্থটিতে সংক্ষিপ্ত সময়ে ইমামদের বর্ণিত চল্লিশটি হাদীস সংকলন করেছি যার মধ্যে সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো লোকে সামনে রেখে সবাই উপকৃত হতে পারে। হাদীস লেখার শুরুতে যে চারজন বিশেষ সনদপ্রাপ্ত ব্যক্তির অনুমতি নিয়েছেন তাঁদের নাম উল্লেখ করা হলো :

ক. শেখ মুহাম্মাদ রেযা আলে আল্লামা শেখ মুহাম্মাদ তাকী ইসফাহানী বেকায়াতুল আযহান (وقایة الاذهان) গ্রন্থের প্রণেতা, মৃত্যু ১৩৬২ হিজরি।

খ. আলহাজ শেখ আব্বাস কুমী : ওয়াত ১৩৫৯ হিজরি।

গ. আল্লামা সাইয়্যেদ মুহসিন আমীন আমলী, ওফাত ১৩৭১ হিজরি।

ঘ. সাইয়্যেদ আবুল কাশেম দেহকারদী ইসফাহানী, ওফাত ১৩৫৩ হিজরি।

এরপর ইমাম খোমেইনী বর্ণনা করেন যে, এছাড়াও হাদীস বর্ণনার জন্য আমি আরো একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের অনুমতি পেয়েছি যার সূত্র শেখ আনসারী পর্যন্ত পৌঁছে না। তাই এখানে উল্লেখ করা হলো না।

প্রথম অনুমতি সূত্রের পরম্পরা : মরহুম শেখ মুহাম্মাদ রেযা ও মরহুম আলহাজ শেখ আব্বাস উভয়েই আলহাজ নূরী থেকে, তিনি জনাব শেখ আনসারী এবং মরহুম সাইয়্যেদ মুহসিন আমীন থেকে, তিনি জনাব সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হিন্দী থেকে, তিনি জনাব শেখ আনসারী এবং মরহুম সাইয়্যেদ আবুল কাশেম দেহকারদী থেকে, তিনি মির্জা হাশেম ইসফাহানী খোনসারী থেকে, তিনি শেখ আনসারী থেকে।

১৩৫৮ হিজরিতে উক্ত গ্রন্থটি লেখা সমাপ্ত হয়। এর মধ্যে চারটি হাদীস জনাব ফেহরী কর্তৃক সম্পাদিত হয়ে এ কিতাবের ২২৪ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় ২০টি হাদীস সাজেমানে তাবলীগাত ইসলামীর মুখপত্র (অধুনালুপ্ত) এতেসামে ছাপা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ১৩৬৬ ফারসি সালে তা-হা প্রকাশনা থেকে সম্পূর্ণ গ্রন্থটি দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়। এরপর মারকাজে নাশরে ফারহাংগে রেযা নামক প্রকাশনী সংস্থা থেকে এক খণ্ডে ৫৫৬ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়।

প্রামাণ্য ফেকাহবিষয়ক কিতাবসমূহ

ইমাম খোমেইনী (রহ.) ৩০ বছরকাল ধরে উক্ত বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। তাঁর সমস্ত ক্লাস অথবা এর বেশিরভাগ অংশেরই বক্তব্য সাথে সাথে লিপিবদ্ধ করা হয়ছে। একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো যে, ক্লাসে ইমাম বক্তৃতা দেয়ার পরপরই সে বিষয়টির ওপর গবেষণা হতো। এ প্রসঙ্গে যে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর ইমাম লিখেছেন তা হলো : طهارت- তাহারাত (পবিত্রতা) এবং মাকাসেবে মুহাররামাহ- (مکاسب محرمه), বাই- بیع, খেয়ারত خیارات ও খালালে সালাত خلل صلاة এবং তাকিয়া تقیه সব বিষয়ই আরবি ভাষায় লিখা হয়। এর বিস্তারিত বর্ণনা নিম্নরূপ :

১৬. কিতাবে তাহারাত (প্রথম খণ্ড)- کتاب طهارت (جلد اول) : অপবিত্রতা (نجاست) সম্পর্কে এ গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩৭৩ হিজরির ১০ জিলহজ, পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৭২। এর প্রথম সংস্করণ কোম থেকে এবং দ্বিতীয় সংস্করণ ১৩৮৯ হিজরিতে নাজাফ থেকে প্রকাশিত হয়, পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৫৮।

১৭. কিতাবে তাহারাত (২য় খণ্ড)- کتاب طهارت (جلد دوم) : এর বিষয়বস্তু হচ্ছে : পানি তিন প্রকারের। লেখা শেষ হওয়ার তারিখ ২২ রবিউল আউয়াল, ১৩৭৬ হিজরি। এটি কোম থেকে প্রকাশিত হয় এবং এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩১৯।

১৮. কিতাবে তাহারাত (৩য় খণ্ড)- کتاب طهارت (جلد سوم) : বিষয়বস্তু তায়াম্মুম (تیمم); লেখা শেষ হওয়ার তারিখ ১১ শাবান ১৩৭৬ হিজরি। এটিও কোম থেকে প্রকাশিত হয় এবং এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৩৫।

১৯. কিতাবে তাহারাত (৪র্থ খণ্ড)- کتاب طهارت (جلد چهارم) : এ কিতাবটির মূল বিষয় হলো احکام نجاست (অপবিত্রতার বিধান)। কিতাবটির শেষের অংশের বিষয়বস্তু তাহারাত (পবিত্রতা) সংক্রান্ত। ১৩৭৭ হিজরির ২৮ জিলকাদ এটি লেখা শেষ হয় এবং ১৩৮৯ হিজরিতে নাজাফ (ইরাক) থেকে প্রকাশিত হয়। কিতাবটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৯০।

২০. আল-মাকাসেবুল মুহাররামাহ (প্রথম খণ্ড)- المکاسب المحرمة (جلد اول) : শরীয়তের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে এ গ্রন্থে আলোকপাত করা হয়েছে।

২১. আল-মাকাসেবুল মুহাররামাহ (দ্বিতীয় খণ্ড)- المکاسب المحرمة (جلد دوم) : এ খণ্ডে জুয়া, মিথ্যা, অত্যাচারীকে সাহায্য করা যায় কিনা প্রভৃতি বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। ১৩৮০ হিজরির জমাদিউল আউয়াল মাসে এটি লেখা শেষ হয়, ১৩৮১ হিজরিতে কোম থেকে প্রকাশিত হয়। এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৯০।

২২. কিতাবুল বাই (প্রথম খণ্ড)- کتاب البیع (جلد اول) : কেনা-বেচা সংক্রান্ত একটি কিতাব। ১৩৮০ হিজরিতে নাজাফ (ইরাক) থেকে এটি প্রকাশিত হয়। এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ৪৫৭।

২৩. কিতাবুল বাই (দ্বিতীয় খণ্ড)- کتاب البیع (جلد دوم) : এটিও বেচাকেনা সংক্রান্ত একটি কিতাব। ১৩৯১ হিজরিতে নাজাফ থেকে প্রকাশিত হয়। এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ৫৭৫। এটি ইমামের সাড়াজাগানো ফেকাহ্‌র কিতাব হিসাবে খ্যাত।

২৪. কিতাবুল বাই (তৃতীয় খণ্ড)- کتاب البیع (جلد سوم) : ৪৮৫ পৃষ্ঠার এ কিতাবটি ১৩৯২ হিজরির ১১ জমাদিউল আউয়ালে সমাপ্ত হয় এবং সে বছরই নাজাফ থেকে প্রকাশিত হয়।

ক্রমানুসারে ইমামের ১২ বছরের অধ্যাপনাকালে রচিত কিতাবসমূহের সংখ্যা এ পর্যন্ত দেয়া হলো।

২৫. কিতাবুল বাই (চুতর্থ খণ্ড)- کتاب البیع (جلد چهارم) : এটিও বেচাকেনা সংক্রান্ত একটি গ্রন্থ। ১৩৯৪ হিজরির ২৫ জমাদিউল আউয়াল এটি লেখা সমাপ্ত হয়। এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ৪৫২। উপরিউক্ত বছরই নাজাফ থেকে এটি প্রকাশিত  হয়।

২৬. কিতাবুল বাই (৫ম খণ্ড)- کتاب البیع (جلد پنجم) : এটিও কেনাবেচা সংক্রান্ত শরীয়তের বিভিন্ন বিধান সম্বলিত একখানা গ্রন্থ। ১৩৯৬ হিজরির ১৫ জমাদিউল আউয়াল এটি রচনা সমাপ্ত হয়। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৪০২। ১৩৯৭ হিজরিতে নাজাফ থেকে এটি প্রকাশিত হয়।

২৭. কিতাবুল খালাল  (کتاب الخلل): এ গ্রন্থটির বিষয়বস্তু হচ্ছে নামাযে ত্রুটিবিচ্যুতি সংক্রান্ত। সম্ভবত ১৩৯৭ হিজরির পর থেকে ইমামেরম ইরানে প্রত্যাবর্তনের সময় পর্যন্ত যে সমস্ত বক্তৃতা দেন ও লেখেন তা নিয়েই এ কিতাবটি রচিত হয়। ৩১৪ পৃষ্ঠার কিতাবটি কোম থেকে প্রকাশিত হয়।

২৮. রিসালাতুন ফিত তাকিয়াহ্ (رسالة فی التقیة) : এ প্রবন্ধটি তাকিয়া সম্পর্কিত। ১৩৭৩ হিজরির শাবান মাসে লেখা শেষ হয় এবং ১৩৮৫ হিজরিতে কোম থেকে প্রকাশিত হয়। এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৫।

২৯. রিসালাতুন ফি কায়েদাতিন মিন মালাক (رسالة فی قاعدة من ملک) : উল্লিখিত গ্রন্থটি সম্পর্কে ‘আসারুল হুজ্জাহ’ নামক কিতাবের ২য় খণ্ডের ৪৫ পৃষ্ঠায় আলোকপাত করা হয়।

৩০. রিসালাতুন ফি তাইনীল ফাজরি ফিল লায়ালী আল-মাকমারাহ  (رسالة فی تعیین الفجر فی اللیالی المقمرة) : ৩২ পৃষ্ঠাবিশিষ্ট এ প্রবন্ধটি ১৯৮৮ ইং সালে প্রকাশিত।

ইমাম খোমেইনীর উসূলে ফেকাহ বিষয়ে যে সকল প্রবন্ধ ও রচনা আরবি ভাষায় রচিত হয় নিম্নে তার বর্ণনা দেয়া হলো :

৩১. রিসালাতুন লা জারার (رسالة لا ضرر) : ইলমে ফেকাহ বিষয়ের একটি পারিভাষিক শব্দ কায়েদায়ে লা-জারার কিন্তু ইলমে উসূলের ‘বারাআত’ প্রসঙ্গেও এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ কারণে আমরা এ প্রবন্ধটাকে ইলমে উসূলের অন্তর্ভুক্ত করেছি। হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.) যখন উসূলে ফেকাহ বিষয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন তখন এ প্রবন্ধটি লেখা হয়। ১৩৬৮ হিজরিতে জমাদিউল আউয়াল মাসে লেখা সমাপ্ত হয় এবং কয়েকটি প্রবন্ধ রচনার পর ১৩৮৫ হিজরিতে ‘আর-রিসায়েল’ নামে ৬৮ পৃষ্ঠার পুস্তিকাটি প্রকাশিত হয়।

৩২. রিসালাতুল ইসতিসহাব (رسالة الاستصحاب) : এ গ্রন্থটি ইমামের উসূল বিষয়ে অধ্যাপনার শুরুর দিকে লেখা। এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৯০। ৯ রমযান ১৩৭০ হিজরিতে তিনি এটি সমাপ্ত করেন এবং ১৩৮৫ হিজরিতে কোম থেকে তা প্রকাশিত হয়।

৩৩. রিসালাতুন ফিত তাআদুলে ওয়াত তারাজীহ (رسالة فی التعادل و التراجیح) : এ গ্রন্থটিও ইমামের অধ্যাপনা জীবনের শুরুতে লেখা। ১৩৭০ হিজরির ৯ জমাদিউল আউয়াল তা সমাপ্ত করেন। সে বছরই রমযান মাসে এর সম্পাদনা হয়। ১৩৮৫ হিজরিতে কোম থেকে এটি প্রকাশ করা হয়। এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ৯২।

৩৪. রিসালাতুল ইজতিহাদ ওয়াত তাকলীদ  (رسالة الاجتهاد و التقلید): যেহেতু উসূলে ফেকাহ বিষয়ে ইমামের অধ্যাপনার প্রথম পর্ব ছিল ১৩৭০ হিজরি সেহেতু এ কিতাবটির লেখাও সে বছরই সমাপ্ত হয়। ৭৮ পৃষ্ঠার এ কিতাবটি ১৩৮৫ হিজরিতে কোম থেকে প্রকাশিত হয়।

৩৫. রিসালাতুন ফিত তালাবি ওয়াল ইরাদাহ (رسالة فی الطلب و الارادة) : এ কিতাবটিকে দর্শন ও আধ্যাত্মিক বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি কিতাব হিসাবে ধরা যেতে পারে। যেহেতু ইমাম তাঁর উসূলে ফেকাহ বিষয়ে পাঠ দান অবস্থায় এর বেশ কয়েকটি অধ্যায় আলোচনা করেছেন সেহেতু আমরাও উসূল বিষয়ে একে শামিল করি। এ কিতাবের শুরুতে ইমামও এ ধরনের উক্তি করেন।

আরবি ভাষায় লিখিত এ গ্রন্থটি ১৩৭১ হিজরির রমযান মাসে হামেদান শহরে অবস্থানকালে লেখা সমাপ্ত হয়। এরপর ফারসি ভাষায় এর অনুবাদও হয়, যার পৃষ্ঠা সংখ্যা হচ্ছে ১৫৭।

৩৬. তালিকাতুন আলা কিফায়াতুল উসূল (تعلیقة علی کفایة الاصول) : মরহুম আলহাজ আগা বুজুর্গ তেহরানী তাঁর কিতাবে আজ-জারিয়াহ এর ২৬তম খণ্ডের ২৮৫ নং পৃষ্ঠায় (মাশহাদ সংস্করণ) জনাব আকন্দে খোরাসানীর কেফায়াতুল উসূলের হাশিয়াতে ইমামের লেখার উদ্ধৃতি দেন।

৩৭. রিসালাহ দার মওজুএ ইলমে উসূল (رسالة در موضع علم اصول) : এ নামেও উসূল বিষয়ে ইমাম (রহ.)-এর কিতাবের সন্ধান পাওয়া যায়।

৩৮. হযরত সোবহানী ইমামের একজন বিশিষ্ট ছাত্র ছিলেন। তিনি কোমের দীনি মাদরাসার একজন সুযোগ্য ওস্তাদ। তিনি বর্ণনা করেন : ইমাম খোমেইনী (রহ.) মরহুম আয়াতুল্লাহ আল উযমা বুরুজেরদীর মোবাহেসে উসূল থেকে হুজ্জিয়্যাত পর্যন্ত টীকা লিখেছেন।

রিসালাহায়ে আমালিয়াহ ইয়া ফেকহে গায়রে ইসতেদলালী  (رساله های عملیه یا فقه غیر استدلالی)

৩৯. তালিকাতুন আলা উরওয়াতুল উসকা (আরবি)- (تعلیقة علی عروة الوثقی) : মরহুম সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ কাযেম ইয়াযদীর উরওয়অতুল উসকা (عروة الوثقی) নামক সম্পূর্ণ গ্রন্থের ওপর ইমামের লেখা হাশিয়া। ১৩৫৭ হিজরির ৭ জমাদিউল আউয়াল এই হাশিয়া লেখা শেষ হয়। এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৪৫। এটি প্রথম কোম থেকে প্রকাশিত হয়। এর কিছুদিন পর দ্বিতীয় সংস্করণও প্রকাশিত হয়। এভাবে এর কয়েকটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়।

৪০. তালিকাতুন আলা ওয়াসিলাতুন নাজাত (আরবি)- (تعلیقه علی وسیلة النجاة)  : সাইয়্যেদ আবুল হাসান ইসফাহানীর ‘ওয়াসিলাতুন নাজাত’ এর ওপর পরিপূর্ণ হাশিয়া।

৪১. হাশিয়ায়ে তাওজীহুল মাসায়েল (ফারসি)- (حاشیه توضیح المسائل) : আয়াতুল্লাহ বুরুজেরদীর তাওজীহুল মাসায়েলের ওপর ইমামের লেখা হাশিয়া। ১৩৮ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থটি আয়াতুল্লাহ বুরুজেরদীর ওফাতের পর কোম থেকে প্রকাশিত হয়।

৪২. রিসালায়ে নাজাতুল ইবাদ (ফারসি)- (رسالة نجاة العباد) : এ গ্রন্থটি সম্ভবত তিন খণ্ডে সমাপ্ত। এ যাবৎ শুধু দুই খণ্ডে মাকাসেবে মুহাররামাহ থেকে তালাক পর্যন্ত কোম থেকে ১৩৭০ ইরানী সালে প্রকাশিত  হয়। এ গ্রন্থটি ইমামের লেখা বলেই ধারণা করা হয়।

৪৩. হাশিয়ায়ে রিসালায়ে এরছ (ফারসি)- (حاشیه رساله ارث) : মুনতাখাবুত তাওয়ারিখ নামক গ্রন্থ প্রণেতা আলহাজ মোল্লা হাশেম খোরাসানী (রহ.) এরছ সংক্রান্ত একটি কিতাব রচনা করেন ফারসি ভাষায়- যার হাশিয়া কয়েকজন বিশিষ্ট আলেম এ যাবত লিপিবদ্ধ করেছেন। ইমাম খোমেইনীও এর ওপর হাশিয়া লেখেন। এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ১২। এটি আয়াতুল্লাহ বুরুজেরদীর ইন্তেকালের পর প্রকাশিত হয়।

৪৪. মানাসেক ইয়া দাসতুরে হজ (ফারসি)- (مناسک یا دستور حج) : ১৮৭ পৃষ্ঠার এ বইটির এ যাবত বেশ কয়েকটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। এর ৩য় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৩৮৪ হিজরিতে।

৪৫-৪৬. তাহরীরুল ওয়াসিলা (আরবি)- (تحریر الوسیلة) : আয়াতুল্লাহ আল উযমা সাইয়্যেদ আবুল হাসান ইসফাহানী প্রণীত ওয়াসিলাতুন নাজাত (الوسیلة النجاة)  ফেকাহশাস্ত্রের একটি বিশেষ গ্রন্থ। এর অধ্যায় সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ কাযেম ইয়াযদীর উরওয়াতুল উসকা নামক গ্রন্থ থেকে বেশি প্রাধান্য পায়; ইমাম খোমেইনী (রহ.) এ বহুল প্রচারিত গ্রন্থটির হাশিয়া (টীকা) লেখেন। ইমামকে যখন তুরস্কে নির্বাসন দেয়া হয় তখন তিনি এ বিষয়ে চিন্তা করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন যে, তাঁর লেখা হাশিয়া এবং মূল গ্রন্থের অসমাপ্ত বিষয়গুলোকে পরিপূর্ণ করবেন এবং নির্বাসনে থাকা অবস্থায় এ কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন করেন এবং এর নাম দেন ‘তাহরীরুল ওয়াসিলা’ (تحریر الوسیلة) । ইমাম নাজাফে থাকাকালীন এ গ্রন্থটি দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়। এরপরও এ যাবৎ বেশ কয়েকবার এর নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। এ গ্রন্থ দুটির পৃষ্ঠা সংখ্যা যথাক্রমে ৬৬২ ও ৬৪৭।

৪৭. যুবদাতুল আহকাম (زبدة الاحکام) :

এ গ্রন্থটি ইমামের প্রখ্যাত গ্রন্থ তাহরীরুল ওয়াসিলা গ্রন্থ অবলম্বনে তাঁর কয়েকজন ছাত্র কর্তৃক রচিত। এ গ্রন্থে জরুরি মাসআলাগুলো আরবি ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। গ্রন্থটি বহুবার প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৪০৪ হিজরিতে ইরানের সাজেমানে তাবলীগাতে ইসলামী ২৭৩ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থটি প্রকাশ করায় এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। তাহরীরুল ওয়াসিলা গ্রন্থের মূল বিষয়বস্তু অবলম্বনে কয়েক বছর পূর্বে আয়াতুল্লাহ জিলানী এবং আয়াতুল্লাহ আলহাজ সাইয়্যেদ খোনসারীও পৃথক পৃথক গ্রন্থ রচনা করেন।

৪৮. তাওজীহুল মাসায়েল (ফারসি)- (توضیح المسائل)  : ফারসি ভাষায় ইসলামী শরীয়তের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও প্রশ্নের উত্তর সন্নিবেশিত হয়েছে এ গ্রন্থে। আয়াতুল্লাহ আল উমযা বুরুজেরদীর সময়ে সাধারণ জনগণের সুবিধার্থে তাঁরই নির্দেশে তেহরানের আলাভী মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা হুজ্জাতুল ইসলাম শেখ আলী আসগর কেরবাচ্ছী এবং প্রখ্যাত লেখক ও গবেষক আলী আসগর ফকিহীর যৌথ প্রচেষ্টায় যে ফতোয়া গ্রন্থ রচিত হয় তারই নাম তাওজীহুল মাসায়েল। এ গ্রন্থের বহু টীকা জাফরী মাযহাবের অনুসারীর জন্য একটি অনন্য সম্পদ হিসাবে পরিগণিত।

৪৯. মুলহিকাতে তাওজীহুল মাসায়েল (ফারসি)- (ملحقات توضیح المسائل) : এ গ্রন্থটিতে সমকালীন পরিস্থিতিতে সৃষ্ট সমস্যা, নব উদ্ভূত প্রশ্নের জবাব ও ফতোয়া ফারসি ভাষায় রচনা করেছেন। তাওজীহুল মাসায়েল গ্রন্থের উপসংহার হিসাবে এ গ্রন্থ বহুবার প্রকাশিত হয়েছে।

৫০. ইসতিফতাআত (ফারসি)-  (استفتائات): ইমাম খোমেইনীর গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া সংকলন। মীরযায়ী কোমীর জামেউশ শিতাব (جامع الشتاب), হুজ্জাতুল ইসলাম শিফতার সাওয়াল জাওয়াব (سوال و جواب), সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ কাযেম ইয়াযদীর সাওয়াল ও জওয়াব এবং আয়াতুল্লাহ গুলপাইগানীর সাওয়াল-জাওয়াব নামক গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া গ্রন্থের মতোই ইমামের ফতোয়াসমূহের সংকলন। এ গ্রন্থে বিশেষ করে ১৯৮১ ও ১৯৮২ সালে প্রদত্ত ফতোয়সমূহ দুই খণ্ডে রচিত হয়েছে। ৫১৯ পৃষ্ঠা সম্বলিত ১ম খণ্ড কোমের জামেয়ায়ে মোদাররেসীন প্রকাশনা হতে প্রকাশিত হয়।

৫১. ইসতিফতাআত (দ্বিতীয় খণ্ড)-  استفتائات (جلد دوم): যা পূর্বোক্ত গ্রন্থেরই অংশবিশেষ।

৫২. হুকুমতে ইসলামী ইয়া বেলায়াতে ফকীহ (ফারসি)-  (حکومت اسلامی یا ولایت فقیه): এ গ্রন্থটি ছিল ইমামের আলোড়ন সৃষ্টিকারী অবদান। ইসলামী নেতৃত্বের স্বরূপ ও ইসলামী হুকুমতের চিন্তাদর্শন এতে অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে স্থান পেয়েছে। ১৩৯১ হিজরিতে ২০৮ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থখানি তৃতীয়বারের মতো প্রকাশ পায়।

৫৩. কাশফুল আসরার (ফারসি)- (کشف الاسرار) : এ গ্রন্থটি ছিল আলহাজ শেখ মাহদী পাইন শহরী রচিত আসরারে হেজার সালেহ (اسرار هزار ساله) গ্রন্থের জবাব। শেখ পাইন শহরী তাঁর গ্রন্থে শিয়া মাযহাবের বিরুদ্ধে এবং ওয়াহাবি ফেরকার সমর্থনে অত্যন্ত কড়া বক্তব্য রাখেন। ইরানের রেযা খান তাঁর এ গ্রন্থের পৃষ্ঠপোষকতা করে। রেযা খানের উদ্দেশ্য ছিল ইরানের আলেমদের কোণঠাসা করা। ইমাম খোমেইনী পাইন শহরীর জবাব ও ওয়াহাবি ফেরকার অসারতা প্রমাণ করে রেযা খানের কুকীর্তি অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরেন এ গ্রন্থে।

এ গ্রন্থটি ১৯৪৪ সালে প্রথম মুদ্রিত হয়। ১৯৪৮ সালে ৩৩৪ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থ তেহরানের কিতাবফুরুসী ইলমিয়ে ইসলামিয়া প্রকাশনা কেন্দ্র তৃতীয়বারের মতো প্রকাশ করে।

উল্লেখ্য, এ গ্রন্থ রচনার জন্য ইমাম কিছুদিনের জন্য তাঁর নিয়মিত ক্লাস বন্ধ রাখেন। এ গ্রন্থে ওয়াহাবিদের বাতিল আকীদার বিবরণ, তাদের জবাব, শিয়া মাযহাবের অকাট্যতা প্রমাণ করেন। তবে এতে কোনো প্রকার গোঁড়ামি বা একদেশদর্শী বক্তব্য স্থান পায়নি।

৫৪. রেসালা দার রেজাল (আরবি)- (رساله در رجال) : এ পুস্তিকাটিতে হাদীসের সম্বন্ধে উল্লিখিত ব্যক্তিদের গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে ইমামের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত হয়েছে। আরবি ভাষায় লিখিত ২৪ পৃষ্ঠার এ পুস্তিকা কিতাবুত তাহারাত গ্রন্থের ভূমিকাস্বরূপ ছাপা হয়েছে। এ গ্রন্থ ইমামের সুউচ্চ জ্ঞানের স্বাক্ষর বহন করছে।

৫৫. দিওয়ানে শেরে ফারসি (ফারসি)- (دیوان شعر فارسی): এটি ইমামের সাড়াজাগানো কাব্যগ্রন্থ। হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.) তাঁর যৌবনকাল থেকে শুরু করে জীবনসায়াহ্ন পর্যন্ত বহু কবিতা লিখেছেন। তাঁর ইন্তেকালের পর বিভিন্ন নামে এসব কবিতার কিছু অংশ প্রকাশিত হয়েছে। সবগুলো কবিতা একত্রে সংকলন করে যে কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে সেটাই দিওয়ানে শেরে ফারসি নামে পাঠকসমাজে উপস্থাপিত হচ্ছে। তবে তাঁর লিখিত বহু কবিতাই হারিয়ে গেছে। যৌবনের শুরুতে লেখা ইমামের কবিতার স্তবকের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে তিনি যে কোন্ পর্যায়ের আরেফ কবি ছিলেন তা সহজেই অনুমান করা যায়। তিনি লিখেছেন:

من در هوای دوست گذشتم زجان خویش

دل از وطن بریدم و از خاندان خویش

‘বন্ধুর প্রেমে সঁপেছি আমি মোর জীবন

ছিন্ন করেছি হৃদয় জন্মভূমি আর পরিবার থেকে।’

তাঁর এ বক্তব্যের নমুনা ছিলেন তিনি নিজেই। পনেরই খোরদাদের রক্তক্ষয়ী ঘটনা, তুরস্কে নির্বাসন, এ জটিল পরিস্থিতিতে কুয়েত ও প্যারিসে হিজরত, অত্যন্ত নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে ইরানে প্রত্যাবর্তন, বিমান হামলা, যুদ্ধের বিভীষিকা সর্ব অবস্থায় তার প্রমাণ রেখেছেন তিনি।

৫৬. রেসালেয়ী মুশতামেল বার ফাওয়ায়েদী দার বাজী মাসায়েলে মুশকিলা (رساله ای مستمل بر فوایدی در بعض مسائل مشکله) কোনো কোনো জটিল সমস্যার সমাধান সম্বলিত পুস্তিকা যা এখনও মুদ্রিত হয়নি।

৫৭. তাহজীবুল উসূল (আরবি) (تهذیب الاصول) : এ গ্রন্থটি শেখ জাফর সোবহানী কর্তৃক ইমামের উসূলে ফিকাহ বিষয়ের ওপর প্রদত্ত বক্তৃতামালার সংকলিত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। এটি চার খণ্ডে বিভক্ত। ইমামের নিজের লেখা বিষয়াদিও এতে স্থান পেয়েছে। ১৩৭৩ হিজরিতে প্রথম খণ্ড, ১৩৭৫ হিজরিতে দ্বিতীয় খণ্ড রচিত হয়েছে। মূল গ্রন্থ তিন খণ্ডে বিভক্ত। প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড বহুবার প্রকাশিত হয়েছে।

৫৮. তাহজীবুল উসূল (আরবি)- (تهذیب الاصول) : এটি উক্ত গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ড। এখনও প্রকাশিত হয়নি। এ গ্রন্থে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইসলামী আইন প্রণয়নের রূপরেখা কি হবে তা বর্ণিত হয়েছে।

৫৯. রেসালাতু ফি কায়েদাতিন লা জারার ইয়া নাইলুল আওতার (رسالة فی قاعدة لا ضرر یا نیل الاوطار) : ইমামের উসূলে ফিকাহ সম্পর্কিত বক্তৃতামালা। আল্লামা জাফর সোবহানী কর্তৃক ১৩৭৫ হিজরিতে সংকলিত। তাহজীবুল উসূল গ্রন্থের উপসংহার হিসাবে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে।

৬০. রেসালাতুন ফিল ইজতিহাদ ওয়াত তাকলীদ (আরবি)- (رسالة فی الاجتهاد و التقلید)  : আরবি ভাষায় প্রদত্ত ইজতিহাদ ও তাকলীদ (আহকামের ক্ষেত্রে অন্যকে মানা) সম্পর্কিত ইমামের বক্তৃতামালা জনাব সোবহানী কর্তৃক সংকলিত। ১৩৭০ হিজরিতে প্রথম এ সংকলন প্রকাশ পায়। ১৩৭৭ হিজরিতে এ সম্পর্কিত ইমামের পরবর্তী ক্লাসসমূহের বক্তৃতাগুলো সংযোজিত হয়েছে। তাহজীবুল উসূলের সাথেই এটি ছাপানো হয়।

৬১. লুবুবুল আসর ইয়া রিসালাতু ফিত তালাবি ওয়াল এরাদাতি ওয়াল জাবরি ওয়াত তাফবীজ (আরবি) (لب الاثر یا رسالة فی الطلب و الارادة و الجبر و التفویض)  : এ গ্রন্থখানির ৫৭ পৃষ্ঠা পা-ুলিপি কোমের রাহে হক ফাউন্ডেশন লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে। আকায়েদ ও দর্শনশাস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি ইমামের বক্তৃতামালায় স্থান পেয়েছে। আল্লামা জাফর সোবহানী এগুলোর সংকলন করেন। ইমাম নিজেও এ গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি তৈরি করেন।

৬২. কিতাবুল বাই (আরবি)- (کتاب البیع)  : ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর বিক্রয় সংক্রান্ত আহকামের ওপর দেয়া বিভিন্ন বক্তব্যের ওপর সুযোগ্য ওস্তাদ জনাব কাদিরীর লেখা এ বইটি সম্প্রতি ইরানের সংস্কৃতি ও ইসলামী নির্দেশনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তবে এর মধ্যে ইমাম নিজেও কয়েকটি অধ্যায় লিখেছেন।

৬৩-৮২. সহীফায়ে নূর (ফারসি)- (صحیفه نور) : ১৯৬২ সাল থেকে ইমামের জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি যেসব আদেশ, উপদেশ, বক্তব্য ও সাক্ষাতকার দিয়েছেন তা সংরক্ষণ করে এ নামে প্রকাশ করা হয়েছে। এ গ্রন্থটি সম্ভবত ২০ খণ্ডে সমাপ্ত যার মধ্যে এ যাবত ১৯টি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে।

৮৩. অসিয়ত নামায়ে সিয়াসী ইলাহী (ফারসি)- (وصیت نامه سیاس الهی)  : ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর লেখা সর্বশেষ অবদান, যা তিনি তাঁর ইন্তেকালের পর সর্বসাধারণের জন্য শেষ নিদর্শন হিসাবে রেখে গেছেন। যার সম্বন্ধে মন্তব্য করতে গেলে বলতে হয়, ইরানী জাতির ইতিহাসে প্রকাশনা জগতে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রকাশনা বলে একে স্বীকার করতেই হবে। কেননা, ইমামের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আসার আগেই দশ লাখ কপি প্রকাশিত হয়েছিল।

৮৪. রাহে এশক (ره عشق) : হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর একটি আধ্যাত্মিক চিঠি যা তিনি ১৪০৪ হিজরিতে লেখেন। ইমাম খোমেইনীর অবদান, রচনাবলি ও সংকলন প্রকাশনা বিভাগ থেকে প্রকাশিত।

৮৫. বাদায়ে এশক (باده عشق) : আধ্যাত্মিকতার ওপর লেখা ইমামের আর একটি চিঠি। সুরুশ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত।

এ যাবত ইমামের রচনাবলির সংখ্যা ৮৫ পর্যন্ত এখানে তুলে ধরা সম্ভব হলো। এজন্য যাঁদের কাছ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা পেয়েছি তাঁদের সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। যাঁদের নাম স্মরণে আছে কৃতজ্ঞতার নিদর্শন হিসাবে তুলে ধরছি। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন :

১. আলহাজ শেখ আলী আকবর মাসুদী। এক খণ্ড তাহারাত (طهارت) তাঁর সহযোগিতায় ছাপানো হয়েছে।

২. আলহাজ সাইয়্যেদ হাশেম রাসূলী মাহাল্লাতী। তিনি কিতাবে তাহারাত (طهارت) গ্রন্থটির সম্পাদনা করেন।

৩. আলহাজ শেখ মুজতাবা তেহরানী আনসারী (মাকাসেবে মুহাররামাহ ও রেসায়েলের সম্পাদনা করেন)।

৪. আলহাজ শেখ গোলাম রেযা রেযওয়ানী খোমেইনী। কিতাবে বাই তাঁর তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হয়।

৫. আলহাজ সাইয়্যেদ আহমাদ ফেহরী জানজানী। ইমামের অনেক লেখা তাঁর মাধ্যমে অনূদিত ও প্রকাশিত হয়।

৬. আলহাজ শেখ জাফর সোবহানী তাবরিযী, যিনি ইমামের মোবাহেসে উসূল (مباحث اصول)-এর বক্তব্যগুলো লিপিবদ্ধ করেন।

৭. আলহাজ শেখ হাসান কাদিরী ইসফাহানী। ইমামের বাই সংক্রান্ত বক্তব্যের (تقدیرات بیع) লেখক।

৮. আলহাজ শেখ আহমাদ মোতাহারী ছাবেজী। যিনি তাহরীরের শারহ লেখেন (شرح تحریر) ।

৯. আলহাজ শেখ মুহাম্মাদ ফাযেল কাফকাজী (শারহে তাহরীরের লেখক)।

১০. আলহাজ শেখ হাসান রাস্তকাশানী এবং জনাব কাদেরী। ইমামের ইসতিফতাআত (استفتائات) এঁদের তত্ত্বাবধানে সম্পাদন হয়।

১১. আলহাজ সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ বাকের মুসাভী হামেদানী, যিনি তাহরীরুল ওয়াসিলা (تحریر الوسیلة)-এর অনুবাদ করেন।

১২. জনাব কাজী জাহেদ এবং জনাব ইসলামী। উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তাহরীরুল ওয়াসিলার পুনঃঅনুবাদ হয়।

 ১৩. আলহাজ শেখ মুহাম্মাদ মুমিন কুমী, যিনি অনেক অনুবাদের সম্পাদনা করেন।

১৪. আলহাজ শেখ হাসান তাহেরী খোররমাবাদী।

১৫. আলহাজ শেখ হাসান ছাকফী, তালিকে ফুসূলের (تعلیقه فصول) অনুবাদক।

১৬. জনাব শেখ মুহাম্মাদ হাসান আহমাদী ইয়াযদী, যিনি ইমামের তায়ীনে ফাজর (تعیین فجر) এবং কিতাবে আরবাঈন (کتاب اربعین) এর প্রকাশক।

সর্বশেষ ইমাম খোমেইনীর রুহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া করি এবং দোয়া কামনা করি।