শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

English

আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইরানি নারীদের সাফল্য

পোস্ট হয়েছে: মে ১৪, ২০১৮ 

সাইদুল ইসলাম: নারী সমাজ জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সমাজ ও সভ্যতার উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে নারীর ভূমিকা অগ্রগণ্য। পারিবারিক জীবনে, বিশেষ করে সন্তানের প্রতিপালন ও জীবন গঠনে নারীর প্রধান ভূমিকার বাইরেও জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর করণীয় অনেক কিছুই রয়েছে। অতীতের মতো নারী সমাজ আজ পিছিয়ে নেই। যুগের বিবর্তনে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রসারিত হয়েছে নারীর ভূমিকা। সেইসাথে প্রসারিত হয়েছে মানুষের জীবনের গতি, বেড়েছে কাজ আর পরিবর্তিত অবস্থার প্রেক্ষিতে নারীর দায়িত্বও বেড়েছে। তাই তো বিদ্রোহী কবি অকুণ্ঠ চিত্তে ঘোষণা করেছেন :
‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বারবারই দেখা গেছে, সেই সমাজ উন্নত হয়, যেখানে নারীরা এগিয়ে আসেন বিভিন্ন পেশায়, তৎপর হন সর্বক্ষেত্রে। নারীর উন্নয়নে বিশ্বের যে দেশগুলো এগিয়ে রয়েছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান তাদের অন্যতম। জ্ঞান-বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইরানের নারীদের সাফল্য চোখে পড়ার মতো।
জ্ঞান-বিজ্ঞান
ফারসি ১৩৯৫ সালের হিসাব অনুযায়ী ৮ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ইরানে সাক্ষরতার হার ৯৪.৭ শতাংশ। এর মধ্যে ৪৬ শতাংশ নারী। দেশটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী মানুষের সংখা ১১ মিলিয়ন। যার ৫০ শতাংশই নারী। এদিকে,
বিশ্বে সর্বোচ্চ সংখ্যক নারী বিজ্ঞানীর তালিকার শীর্ষে রয়েছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিপক্ষদের বহুদূর ছাড়িয়ে গেছেন দেশটির নারীরা। এক হিসাব মতে, বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন ইরানের অর্ধেকেরও বেশি নারী। ইরানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত (সংক্ষেপে এসটিইএম) বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই নারী। যা বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় শতাংশে অনেক বেশি। লেখিকা সাদিয়া জাহিদি তাঁর নতুন বই ‘ফিফটি মিলিয়ন রাইজিং’-এ এসব তথ্য তুলে ধরেন। বইটিতে মূলত মুসলিম দেশগুলোতে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অর্জন, অগ্রগতি ও কৃতিত্ব নিয়ে একটি বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন তিনি।
কর্মক্ষেত্র
এয়ারলাইনস : কর্মক্ষেত্রে ইরানি নারীদের সাফল্য চোখে পড়ার মতো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রশাসন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের কর্মক্ষেত্রে ইরানি নারীদের রয়েছে সরব উপস্থিতি। বর্তমানে ইরানের রাষ্ঠ্রীয় এয়ারলাইন্স ইরান এয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন একজন নারী। ফারজানেহ শারাফবাফি সর্বপ্রথম মহিলা যাঁকে গত বছর ইরান এয়ারের সিইও পদে নিয়োগ করা হয়। এমনকি তিনিই প্রথম মহিলা যিনি এরোস্পেসে পিএইচডি করেছেন।
এদিকে, প্রথমবারের মতো নারী পাইলট চেয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ইরানের এই বিমান সংস্থাটি।
ইরান এয়ার ‘হোমা’ নামেও পরিচিত। ফারজানেহ জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও শূন্য পদে নতুন পাইলট নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এবারের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মূল আকর্ষণ হচ্ছে নারী পাইলটরা আবেদন করতে পারবেন।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে ইরান এয়ারের পাঁচজন শীর্ষ ব্যবস্থাপক হলেন নারী। দাপ্তরিক তথ্য তুলে ধরে ফারজানেহ জানান, হোমাতে বর্তমানে ১ হাজার ৭৮০ জন নারী কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া আরও প্রায় ৪ হাজার নারী ইরান এয়ারের অধিভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানি এবং এয়ার ট্রাভেল এজেন্সিতে কর্মরত রয়েছেন।
ইরান এয়ারের সিইও বলেন, হোমাতে কর্মরত নারীদের ১৬ শতাংশ মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তা। ‘আমাদের কর্মকর্তাদের মধ্যে নারী পাইলট যুক্ত হওয়ার বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’, বলেন এই নারী কর্মকর্তা।
ফারজানেহ বলেন, ইরানে বিপুল সংখ্যক নারী পাইলট রয়েছেন। ইরান এয়ারের দক্ষতার ভিত্তিতে প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নতুন এসব পাইলটের নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে।
তিনি বলেন, নারীরা সামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায়বিচারের উপলব্ধি সৃষ্টিতে শীর্ষ ভূমিকা রাখতে পারে।
বছরের সেরা নাবিক ইরানের রাহেলে
জাহাজ চালানো একটি পেশীশক্তির ব্যবহার্য কাজ। অথচ এক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই ইরানের নারীরা। সম্প্রতি দেশটির হোরমোজগান প্রদেশের নারী রাহেলে থামাসেবি সারভেস্তানি বছরের সেরা নাবিক হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।
ফারসি বার্তা সংস্থা ইসনাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাহেলে বলেন, জাহাজ চালানোর প্রতি তাঁর ভালোবাসা দীর্ঘদিনের। ১৯৮৪ সালে জন্ম রাহেলের। ৫০০ থেকে ৩ হাজার টনের যুদ্ধ জাহাজ চালিয়ে বেশ পারদর্শিতা দেখিয়েছেন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট রাহেলে। প্রশিক্ষণের সময় ‘সাগর’ নামে একটি বাণিজ্যিক জাহাজ চালিয়েছেন তিনি। এরপর একের পর এক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়েছে তাঁকে সামরিক জাহাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে।
চাকরির বাজার
কর্মক্ষেত্রে নারীর এমন সফলতার কারণে চাকরির বাজারে দেশটির নারীদের চাহিদা বাড়ছে। ইরানের চাকরির বাজারে বিগত তিন বছরে নারীদের উপস্থিতির সংখ্যা বেড়েছে ৪০ ভাগ। ইরান ট্যালেন্ট ডটকমের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ফারসি বছরে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন শাখায় নারী কর্মচারীদের সংখ্যা বেড়েছে ২৯ ভাগ। অন্যদিকে, বেসরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোতে বেড়েছে ৩২ শতাংশ এবং রাষ্ট্রীয় পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীর সংখ্যা বেড়েছে ২০ শতাংশ। প্রতিবেদন মতে, ইরানে মধ্যম সারির ব্যবস্থাপক পর্যায়ে ২৫ শতাংশ নারী কর্মরত রয়েছেন এবং উচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা পদে রয়েছেন ১৯ শতাংশ নারী। এছাড়া দেশটিতে প্রায় ৬০ শতাংশ নারী কার্যনির্বাহী ও প্রশাসনিক কর্মী হিসেবে সক্রিয় রয়েছেন। বিদেশি ভাষা থেকে অনুবাদের কাজে কর্মরত রয়েছেন ৫০ শতাংশ নারী।
ইরান ট্যালেন্ট ডটকমের অপর আরেকটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রায় ৫০ শতাংশ ইরানি নারী শিল্প ক্ষেত্রে কাজ করছেন। দেশজুড়ে ২৮টি ভিন্ন ভিন্ন চাকরি ক্ষেত্রের ১ লাখ কর্মচারীর ওপর জরিপ পরিচালনা করে এই তথ্য দেয়া হয়।
গ্রামীণ অর্থনীতি
ইরানের নারী ও পরিবার বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেছেন, গ্রামীণ নারীরা আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন যদিও তা অনেকের অজানা। পরিবার ও সামাজিক দিক থেকে নারীর এ ভূমিকা অসামান্য। তবে নারীর এ ভূমিকা অজানা থাকায় তা অনেক সময় স্বীকৃত হয়ে ওঠে না। তিনি বলেন, ৩২ মিলিয়ন গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১২ মিলিয়ন হচ্ছে নারী। এসব নারী কৃষি ও কুটির শিল্পসহ অনেক ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছেন।
রাজনীতি
রাজনীতিতেও সক্রিয় উপস্থিতি রয়েছে ইরানের নারীদের। দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দুজন নারী। এদের একজনের নাম মাসুমেহ এবতেকার। ইরানের এই নারীর আরেক নাম নিলোওফার এবতেকার। তিনি প্রথমবারের মত ইরানে নারী ও পরিবার বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পান ৯ আগস্ট ২০১৭। তিনি একাধারে রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী ও সাংবাদিক। পরিবেশ ও সমাজসংস্কারক হিসেবেও তাঁকে চেনে বিশ্বের মানুষ। মাসুমেহ এবতেকার দেশটির পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে ১৯৯৭ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
ইরানের অপর নারী ভাইস প্রেসিডেন্টের নাম লয়া জনিদি। তিনি আইন বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্টের বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন একজন নারী। যাঁর নাম শাহীন দোখত মৌলাভারদি।
নারী মেয়র
ইরানি নারীদের ক্রমবর্ধমান সফলতার ক্ষেত্রে আরেকটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখালেন সামানেহ শাদ-দেল। সম্প্রতি দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জানযান পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন এই নারী। বিজয়ের পর জানযান শহরের জেলা দুই-এর মেয়র হিসেবে দায়িত্বও গ্রহণ করেছেন তিনি।
এর আগে সামানেহ জানযান পৌরসভার ট্রাফিক ও পরিবহন বিষয়ক পরিচালক হিসেবে চার বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি জানযানের সংস্কৃতি বিষয়ক ডেপুটি মেয়র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
মূলত ইরানি এই নারীর কর্মদক্ষতা ও অভিজ্ঞতা মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হতে সাহায্য করেছে। বিবাহিত নারী সামানেহ মাস্টার ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন।
ইরানে একজন নারী হিসেবে শীর্ষ কোনো পদে তিনিই প্রথম অধিষ্ঠিত হন নি। দেশটির যোগ্যতাসম্পন্ন নারীরা ইতোমধ্যে ডেপুটি প্রাদেশিক গভর্নর, গভর্নর ও মেয়র পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। আর ইরানের ব্যবস্থাপনা পদে নারীদের উপস্থিতি দিনদিনই বাড়ছে।
তেহরান সিটি কাউন্সিলে নারীদের রেকর্ড জয়
ইরানের রাজধানী তেহরানের সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক জয় পেয়েছেন নারী প্রার্থীরা। এবারের ৫ম সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে ছয় জনই নারী প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।
তেহরান টাইমসের খবরে বলা হয়, আগের বারের তুলনায় ৫ম সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে নারী কাউন্সিলরদের সংখ্যা দ্বিগুণ। নির্বাচিতারা হলেন শাহারবানু আমানি আঙ্গানেহ, বাহারেহ আরভিন, যাহরা সাদরাজম নুরি, নাহিদ খোদাকারামি, যাহরা নেজাদবাহরাম ও ইলহাম।
খেলাধুলা
ডার্ট যুব বিশ্বকাপে রানার্স-আপ ইরান
জাপানে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ডার্ট ফেডারেশন (ডব্লিউডিএফ) যুব বিশ্বকাপ ২০১৭-তে রানার্স-আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে ইরান। এবারের আসরে দু’টি সোনার ও একটি ব্রোঞ্জ মেডেল জয়লাভের মধ্য দিয়ে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে ইরানি ডার্ট স্কোয়াড। ৩ অক্টোবর জাপানি শহর কোবেতে ওয়ার্ল্ড ডার্ট ফেডারেশন (ডব্লিউডিএফ) যুব বিশ্বকাপ-২০১৭ শুরু হয়। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ইরানি নারীরা দারুণ পারফরমেন্স করেন, সংগ্রহ করেন দুটি স্বর্ণপদকসহ তিনটি মেডেল।
বিশ্ব শ্যুটিংয়ে ইরানি নারীর সোনা জয়
ওয়ার্ল্ড শ্যুটিং প্যারাস্পোর্ট ওয়ার্ল্ড কাপ ২০১৮০-তে দ্বিতীয় সোনার মেডেল জয় করেন ইরানের নারী প্যারালিম্পিক শ্যুটার সারেহ জাভানমারদি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে নারীদের পি-৪ ৫০-মিটার পিস্তল এসএইচ-১ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম স্থান দখল করেন ৩৩ বছর বয়সী এই প্যারালিম্পিক চ্যাম্পিয়ন।
ইরানের দুই নারীর কারাতে মেডেল জয়
স্পেনে ২০১৭ ওয়ার্ল্ড জুনিয়র, ক্যাডেট ও অনূর্ধ্ব ২১ চ্যাম্পিয়নশিপে একটি সোনার ও একটি রুপার মেডেল জয় করেছেন ইরানি দুই নারী কারাতে খেলোয়াড়।
কারাতে প্রতিযোগিতায় সোনাজয়ী ইরানি নারী হলেন অভিশান বাকেরি। রুপাজয়ী কারাতের নাম সারা বাহমানিয়ার। পদকজয়ী এই দুই নারী ইরানের গিলান থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনেন।
বিশ্ব যুব দাবা প্রতিযোগিতায় ইরানি কিশোরীর সাফল্য
রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব যুব দাবা প্রতিযোগিতায় ইরানি কিশোরী মোবিনা আলী নাসাব রৌপ্যপদক লাভ করেছেন। রাশিয়ার মধ্যাঞ্চলীয় খানতি-মানসিস্ক শহরে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতায় অনূর্ধ্ব ১৬ বছর বয়সীদের প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে এ পদক লাভ করেন তিনি। এ ছাড়া, ইরানের অপর প্রতিযোগী শাহিন লোরপারি জাঙ্গানে অনূর্ধ্ব ১৮ গ্রুপের প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করে ব্রোঞ্জপদক পেয়েছেন।
প্রতিযোগিতায় অনূর্ধ্ব ১৬ গ্রুপে সারা বিশ্ব থেকে ৫৮ জন এবং অনূর্ধ্ব ১৮ গ্রুপে ৬৫ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। এর আগে মঙ্গোলিয়ায় অনুষ্ঠিত এশীয় যুব দাবা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান লাভ করে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন মোবিনা আলী নাসাব।
রিও অলিম্পিকে ইতিহাস গড়লেন ইরানি তরুণী
রিও ডি জেনেইরো অলিম্পিকের ১৩তম দিনটি ইরানের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। কারণ, ওইদিন তায়কোয়ান্দো প্রতিযোগিতায় মেয়েদের ৫৭ কেজি ওজনশ্রেণিতে ব্রোঞ্জপদক জেতেন ইরানি তরুণী কিমিয়া আলীজাদেহ জিনোরিন। এর মাধ্যমে তিনি অলিম্পিকে প্রথম কোনো ইরানি নারী হিসেবে পদক জেতার গৌরব অর্জন করেন।
অলিম্পিকের ইতিহাসে প্রথম কোনো ইরানি একজন নারী ক্রীড়াবিদ হিসেবে পদক জয়ের পর অভিনন্দন জানান ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি।
এর আগে ২০১৪ সালে যুব অলিম্পিক দুটি পদক জিতেছিলেন আলীজাদেহ। গত বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝিতে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় রিও অলিম্পিকের এশীয় অঞ্চলের বাছাই পর্বে অসাধারণ পারফরমেন্স দেখিয়ে স্বর্ণপদক জেতেন কিমিয়া আলীজাদেহ।
এশিয়ান মহিলা ভলিবলে ৯ম ইরান
এশিয়ান সিনিয়র মহিলা ভলিবল চ্যাম্পিয়নশিপে অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করে ইরান। এ জয়ের মাধ্যমে টুর্নামেন্টের এবারের ১৯তম আসরে ৯ম স্থান অর্জন করে দেশটির মহিলা জাতীয় ভলিবল টিম।
ফিলিপাইনের মুন্তিনলুপা স্পোর্ট কমপ্লেক্সে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। ইরানি স্কোয়াড পাঁচ সেটের ম্যাচে ৩-২ সেটের ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় ঘরে তুলে নিজেদের ক্যাম্পেইন শেষ করে।
এশিয়ান নৌকাবাইচ চ্যাম্পিয়নশিপে ইরানের পাঁচ মেডেল
২০১৭ এশিয়ান নৌকাবাইচ চ্যাম্পিয়নশিপে প্রশংসনীয় দক্ষতা দেখিয়েছেন ইরানের পুরুষ ও নারী খেলোয়াড়রা। থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত মহাদেশীয় এই টুর্নামেন্টে তিনটি সোনার মেডেলসহ মোট পাঁচটি মেডেল জিতেছে দেশটি।
ইরানের নারী মাল্লা নাজানিন মোলায়ি মেয়েদের লাইটওয়েট বিভাগের প্রতিযোগিতার ফাইনালে অংশ নেন। ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে পাতায়ায়।
ইরানের প্রথম নারী ‘স্কাই ডাইভার’ ফাতেমা
২৪ বছরের ইরানি নারী ফাতেমা আকরামি প্রথম স্কাইডাইভার হিসেবে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। প্রফেশনাল স্কাই ডাইভার হিসেবেও তিনি প্রথম ইরানি নারী। আকরামি একজন চ্যাম্পিয়ন জিমন্যাস্ট। অন্যান্য খেলাধুলায় নিয়মিত অংশ নেন তিনি।
ফাতেমার এক বন্ধু তাঁকে স্কাই ডাইভার হওয়ার প্রেরণা যোগান। যুক্তরাষ্ট্রের প্যারাস্যুট অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে রীতিমত লাইসেন্স গ্রহণ করেছেন ফাতেমা। বিমান থেকে লাফিয়ে পড়ে নিরাপদে ভূমিতে অবতরণ করা চাট্টিখানি কথা নয়। কঠিন মনোবল ও সাহস প্রয়োজন পড়ে। ধৈর্যের সঙ্গে সঙ্গে গভীর মনোসংযোগের দরকার হয়। সামরিক প্রশিক্ষণের বাইরে একজন বেসামরিক নাগরিক হিসেবে এধরনের প্রশিক্ষণ খুবই কঠিন হয়ে থাকে। এসব বাধা ডিঙ্গিয়ে ফাতেমা তাঁর ইচ্ছা পূরণ করেছেন।
আকরামির ইন্সট্রাগ্রামে আকাশে তাঁর লাফিয়ে পড়ার ছবি রয়েছে। হাসিমুখে আকাশ থেকে নেমে আসছেন মাটিতে, পাখির মতো ডানা মেলে বাতাসে ভাসতে ভাসতে। এধরনের প্রশিক্ষণের বিভিন্ন ছবি তিনি শেয়ার করেছেন।
চলচ্চিত্র
আজীবন সম্মাননা পেলেন কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার বানি-এতেমাদ। ইরানের কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা রাখশান বানি-এতেমাদ চলচ্চিত্রে সুদীর্ঘ অবদান রাখার জন্য পাচ্ছেন আজীবন সম্মাননা। তুরস্কে অনুষ্ঠিত সপ্তম মালাতিয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব প্রখ্যাত এই নারী চলচ্চিত্রকারের কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ এ সম্মাননা দেয়।
আন্তর্জাতিক শাহর চলচ্চিত্র উৎসবে ইরানের ১৮০ নারী চলচ্চিত্রকার
আন্তর্জাতিক শাহর চলচ্চিত্র উৎসবের বিভিন্ন বিভাগে এবার অংশ নেবেন ইরানের রেকর্ড সংখ্যক নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা। আইএফপিনিউজ ডটকমের তথ্যমতে, চলচ্চিত্র উৎসবটিতে অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করেন ইরানের ১৮০ জনের অধিক নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা। তাঁরা এবারের আসরের ফিচার, পূর্ণদৈর্ঘ্য ফিচার, মাঝারি-দৈর্ঘ্য ফিচার, স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি, ডকুমেন্টারি, মাঝারি-দৈর্ঘ্য ডকুমেন্টারি, স্বল্পদৈর্ঘ্য ডকুমেন্টারি, অ্যানিমেশন ও নেইবারহুড বিভাগে অংশ নেবেন।
আন্তর্জাতিক কোনো চলচ্চিত্র উৎসবে এবারই রেকর্ড সংখ্যক ইরানি নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা অংশ নিচ্ছেন। বিশেষ করে চলচ্চিত্র উৎসবের মাঝারি-দৈর্ঘ্য ফিচার বিভাগে ইরানি নারী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অংশগ্রহণকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জানানো হয়, প্রায় ৫০ জন ইরানি নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা মাঝারি-দৈর্ঘ্য ফিচার ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। অন্যদিকে, অ্যানিমেশন ও নেইবারহুড বিভাগে অংশ নিতে ইতোমধ্যে ৩৯ জন করে আবেদন করেছেন। এছাড়া স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মাঝারি-দৈর্ঘ্য ডকুমেন্টারি বিভাগে ইরানের ৩৬ জন নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফিচার বিভাগে ১০ জন এবং পূর্ণদৈর্ঘ্য ফিচার ও ডকুমেন্টারি বিভাগে অংশ নেবেন ৭ জন।
ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক শাহর চলচ্চিত্র উৎসব ইরানের রাজধানী তেহরানে ৩১ জুলাই শুরু হয়ে চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত।
দশ বছরের ইরানি বালিকার কোরআনের সিডি
মাত্র দশ বছরের ইরানি বালিকা হান্নাহ খালাফি তার সুমধুর কণ্ঠে কোরাআন শরীফ অডিও রেকর্ডিং করেছে। তার অডিও সিডি তেহরানে অনুষ্ঠিত ২৪তম ইন্টারন্যাশনাল হলি কোরআন এক্সিবিশনে দর্শকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। ইরানের সংস্কৃতি ও ইসলামি গাইডেন্স মন্ত্রী আলী জান্নাতির উপস্থিতিতে একটি অনুষ্ঠানে হান্নাহ কোরআন তেলাওয়াত করেন।
এছাড়া আরও অনেক ক্ষেত্রেই ইরানের নারীরা সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন যা এই সীমিত পরিসরে তুলে ধরা প্রায় অসম্ভব। তবে একথা বলা যায়, ইরানের নারীদের সফলতার এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশটি একদিন উন্নয়নের রোলমডেল হবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

সূত্র: ইরান ডেইলি, মেহর নিউজ, প্রেসটিভি, তেহরান টাইমস, আইএফপি, ফিন্যান্সিয়াল ট্রিবিউন।